প্রথমে তারা পদতলের জমিটুকু নিয়েছে; এরপর নিয়েছে পা দু’টি, সবশেষে জীবন

25
87

এমএসএ

১৪ মে জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পূর্বে ফিলিস্তিনী বিক্ষোভকারীরা গাজা সীমান্তের কাছে নিজস্ব ভূখণ্ড ফিরে পাওয়ার জন্য প্রতিবাদ শুরু করলে ইসরাইলী সৈন্যরা তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি করতে শুরু করে। এঘটনায় ৮ শিশু সহ ৫৮জন ফিলিস্তিনী নিহত ও ২৭০০জন আহত হয়েছে। গত ৩০ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলের গুলিতে নিহত হয়েছে ১০৯ জন ফিলিস্তিনী। ১৯ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা যায়, এপ্রিল মাসের তিন সপ্তাহে ৫০০’র বেশি আহত ফিলিস্তিনীকে চিকিৎসা প্রদান করেছে গাজা এলাকায় অবস্থানকারী মেডেসিনস সান্স ফরেনটিয়ারার্সের মেডিকেল দলগুলো। *এমএসএফ প্রকাশ করে, এপ্রিলের তিন সপ্তাহে যতজন ফিলিস্তিনীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে তা ২০১৪ সালের সারা বছরের রোগীদের সংখ্যা থেকে বেশি। আর গত ১৪ মে যেন পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙে দিল।

নিরস্ত্র ফিলিস্তিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়ে হয় তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে না হয় তাদের চিরতরে পঙ্গু করে দিচ্ছে ইসরাইলী সেনারা। স্থানচ্যুত ফিলিস্তিনীদের একটাই দাবী নিজের আবাসস্থলে ফিরে গিয়ে শান্তি কায়েম করা। স্বাধীনতার জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেও থেমে নেই ফিলিস্তিনীবাসী। ফিলিস্তিনের এমনই এক যোদ্ধা ও সক্রিয়তাবাদী যোদ্ধা ফাদি আবু সালাহ। গত ১৪ মে ৫৮জন নিহতের মধ্যে তিনিও একজন স্বাধীনতাকামী সাহসী যোদ্ধা। ২০০৮ সালে গাজায় ইসরাইলী সেনাদের হামলায় দু’টি পা হারান সালাহ। কিন্তু এরপরও থেমে থাকেননি ফাদি। ইসরাইলের দখল থেকে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড ফিরিয়ে আনতে আমৃত্যু লড়াই করে গিয়েছেন তিনি। ফিলিস্তিনের করিম টুইটারে লিখেন, ‘প্রথমে তারা ফাদির ভূমি নিয়েছে। এরপর তার পা নিয়েছে। সবশেষে তার জীবন।’ ফাদি আবু সালাহর মৃত্যুতে যেন শোকের মাতম চলছে ফিলিস্তিনে।

মার্চ ৩০ থেকে মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ইসরাইল সেনাদের হামলায় এক হাজার শিশুর বেশি আহত হয়েছে। ১৬ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনী কিশোরের স্বপ্ন ছিল অলিম্পিকে অংশগ্রহণের। গাজায় প্রতিবাদের প্রথম দিনে সে গুলিবিদ্ধ হয়। দু’ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে সে দেখতে পায় তার শরীর থেকে একটি পায়ের অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে। গত ১৪ মে ৮ মাস বয়সী শিশুসহ মোট ৮ শিশু ইসরাইল সেনাদের হামলায় নিহত হয়। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ৭৫০০০০ ফিলিস্তিনীকে নিজ ভূখণ্ড থেকে অপসারিত করে ইসরাইল। ন্যায্য অধিকারের লড়াইএ ফিলিস্তিনের আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে জানা নেই। আর কত সালাহের প্রাণের বিনিময়ে মিলবে স্বাধীনতা?

*মেডেসিনস সান্স ফরেনটিয়ারার্স একটি আন্তর্জাতিক, স্বাধীন, মানবিক চিকিৎসা সংস্থা যাহা সশস্ত্র সংঘাত, মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আঘাতপ্রাপ্ত এবং স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত মানুষদের জরুরি সহায়তা প্রদান করে।