নড়াইলে সেতু নির্মাণ পরিকল্পনায় ত্রুটি, নতুন করে বাড়তি ব্যয় ৬১ কোটি টাকা

0
23
নড়াইলে সেতু নির্মাণ পরিকল্পনায় ত্রুটি, নতুন করে বাড়তি ব্যয় ৬১ কোটি টাকা
নড়াইলে সেতু নির্মাণ পরিকল্পনায় ত্রুটি, নতুন করে বাড়তি ব্যয় ৬১ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের কালিয়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ পরিকল্পনায় ত্রুটির কারণে ৬৫ কোটি টাকার কাজ এখন নকশা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এখন ব্যয় দাড়াবে ১৩৬ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে টেন্ডার হওয়া কাজ ২০১৯ সালের জুনে শেষ হবার কথা থাকলেও ৬ষ্ঠ মেয়াদে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে । এদিকে ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালিয়ার সেতু প্রকল্পের নকশা প্রনয়নে দুর্বলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নকশার দুর্বলতার কারণে সেতুর নীচ দিয়ে নৌকা চলাচল বিঘ্নিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ৫ সেপ্টেম্বরের এ বৈঠকে ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া সেতুটির জন্য নতুন করে আরও ৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করেছে একনেক। প্রসঙ্গত, প্রথমাবস্থায় প্রকল্পের ব্যয় ৬৫ কোটি টাকা ছিল। পরে ১০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ৬১ কোটি টাকা বাড়ানো হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৫সেপ্টেম্বর নড়াইল সদরের সাথে কালিয়া, নড়াগাতি ও লোহাগড়া থানার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কালিয়ার বারইপাড়া ও পাঁচ কাউনিয়া অংশে অংশে নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের টেন্ডার হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারী মেসার্স এমডি জামিল ইকবাল এন্ড মোঃ মইনুদ্দীন বাশি জেভি ফার্ম এ সেতুর কার্যাদেশ পায়। ২০১৯ সালের জুনে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ৬৫১.৮৩ মিটার লম্বা এবং ১০.২৫ মিটার প্রস্থ সেতুর নির্মান ব্যয় ধরা হয় ৬৫ কোটি ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১৮ সালের জুনে নকশায় জটিলতা ধরা পড়ায় কাজ কয়েক মাস বন্ধ থাকে। ওই সালের (২০১৮) নভেম্বর মাসের প্রথমে তৎকালীন নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দীন এবং সেতু নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মইনুদ্দীন বাঁশি এ প্রিতিনিধিকে জানিয়েছিলেন, সেতুর পাইল ক্যাপ পানির ওপরে থাকবে, না পানির নীচে থাকবে সেটা নকশায় ধরা ছিল না। এছাড়া নকশা অনুযায়ী সেতু নির্মিত হলে বর্ষাকালে যদি নদীতে পানির উচ্চতা অতিমাত্রায় বাড়ে তাহলে সেতুর দুই পার্শ্বের পিলার প্লাবিত হতে পারে। সে কারণে সেতুর শুরু ও শেষের অংশে অর্থাৎ দুই প্রান্তে ৩ মিটার করে উঁচু করা প্রয়োজন। তবে সেতুর মাঝখানের উচ্চতা পূর্বের নকশা অনুযায়ীই হবে। এর জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব কারেকশনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয় এবং প্রায় ৬ মাস পর অনুমোদন হয়।

এদিকে ২০২০ সালের ২০জুন বালু বোঝাই একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় মাঝ নদীতে অবস্থিত নির্মাণাধীন ৯ নম্বর পিলারটি এবং পরবর্তী বছর ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একই পিলার আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হেলে গিয়ে তা পানির নীচে তলিয়ে যায়। দুর্ঘটনার পৌনে ৩মাস পর ২৬ নভেম্বর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সবুর একটি টেকনিকাল টিম নিয়ে হেলে যাওয়া পিলার সরেজিমনে দেখতে কালিয়ার নির্মাণাধীন সেতু স্থানে আসেন। ২০২২ সালের মে মাসে নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আশরাফুজ্জামান জানিয়েছিলেন, পিলারগুলো যাতে বারবার আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সে জন্য পিলারগুলোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি, সেতুর নীচ দিয়ে বড়ো নৌযান চলাচল যাতে বিঘিœত না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখে এবং তলিয়ে যাওয়া ৯ নম্বর পিলারটির স্থানে ষ্টিলের স্প্যান স্থাপনের জন্য নকশা পরিবর্তনের প্রয়োজন। ৩ মাসের মধ্যে নকশা পরিবর্তনসহ আনুসঙ্গিক কাজ শেষ করে বাকি কাজের জন্য নতুন টেন্ডার দেয়া হবে। কিন্তু ৩ মাসের জায়গায় এক বছরের বেশী সময় পরে এসে সেই নকশা একনেকে পাশ হলো। এভাবে কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকা, শুরু থেকেই অল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে প্রকল্প এলাকায় কাজ করানো, সেতু নির্মাণে ধীরগতি ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং দু’বার নকশা পরিবর্তনে দ্বিগুন ব্যয় বেড়ে গেছে।

উন্নয়নকর্মী নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম অনিক বলেন, জেলা শহর থেকে কালিয়া শহরের দূরত্ব ২৫ কিঃমিঃ হলেও নদীর কারণে যেতে সময় লাগে দু’ঘন্টা। ফলে কয়েক লাখ মানুষের অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, কৃষি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে যাতায়াতে বেগ পেতে হয়। সেতটিু চালু হলে নড়াইল সাথে গোপালগঞ্জ, বরিশাল এবং বাগেরহাট জেলার যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য জেলাও এর সুবিধা পাবে।

নড়াইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আশরাফুজ্জামান বলেন, ৯ নম্বর পিলারটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় এটি না রেখে ৮ ও ১০ নম্বর পিলারের ওপর কংক্রিটের ঢালাই না দিয়ে নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে ৮৬ মিটার লম্বা স্টিলের একটি স্প্যান বিদেশ থেকে এনে বসাতে হবে। ষ্টিলের স্প্যান দেওয়ার কারণে ৮ নম্বর ও ১০ নম্বর পিলার নীচ দিয়ে বড়ো নৌযান চলাচল করতে পারবে। বর্ষাকালে এই অংশে পানি থেকে সেতুর উচ্চতা থাকবে ২৭ ফুট। এছাড়া ব্রীজের অন্যান্য অংশ দিয়ে ছোট নৌযান চলাচল করবে। সেটা সাইনবোর্ডে লিখে দেওয়া থাকবে। সেতুর পিলারগুলো যাতে নৌযান দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেজন্য প্রতিটা পিলারের চারিদিকে ষ্টিলের বেষ্টনি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। এজন্য স্প্যানের পেছনে ৪০ কোটি টাকা এবং পিলারের নিরাপত্তার জন্য বাকি অর্থ ব্যয় হবে। তিনি বলেন, বাড়তি ৬১ কোটি টাকার বরাদ্দ হলেও নতুন করে টেন্ডার, ওয়ার্কঅর্ডারসহ আনুসঙ্গিক কাজ করতে ৩-৪ মাস সময় লাগবে। এ কাজ ২০২৫ সালের জুনে শেষ হবে। প্রথম ঠিকাদারের দু’প্রান্তের সংযোগ সড়কসহ ব্রীজের বাকি কাজ এ বছরের জুনে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান।

নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি বলেন, আমলাদের অদক্ষতা ও দায়িত্বের প্রতি অসচেতেনতার কারণে নকশায় ত্রুটি হয়েছে। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হলো। তবে আশার কথা হলো জটিলতা কেটে গেছে। এখন আর সমস্যা হবে না। দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করলে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান নকশায় বড়ো নৌযান চলতে পারবে। ছবি সংযুক্ত।