সেপ্টেম্বরে চালু হতে পারে কালনা সেতু

0
35
সেপ্টেম্বরে চালু হতে পারে কালনা সেতু
কালনা সেতু

জুলাই মাসে সড়ক প্রশস্থকরণ কাজ শুরু হবে

কালনাসেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত যানবাহনের চাপ সামলাতে বিকল্প ভাবনা দরকার, কালনাঘাটে মহাদুর্ভোগের আশঙ্কা

আবদুস ছালাম খান

আগামী ২৫ জুন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হবে। পদ্মাসেতু চালু হলে এর সাথে সংযুক্ত সব সড়ক-মহাসড়কেই বিভিন্ন যানবাহনের বাড়তি চাপ হবে। চার লেনের পদ্মা সেতু সহ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানের মহাসড়ক হলেও এর সাথে সংযুক্ত অধিকাংশ সড়কগুলি নামে মহাসড়ক হলেও সবগুলিই দুই লেনের মহাসড়ক। বিশেষ করে ঢাকা-মাওয়া-পদ্মাসেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক হলেও ভাঙ্গা মোড় থেকে ফরিদপুর , বরিশাল অথবা নড়াইল-যশোর সব দিকেই দুই লেনের অপ্রশস্ত মহাসড়ক। চার লেনের মহাসড়কে দ্রুতগামী যানবাহন গুলি ৮০ কিলোমিটার বা তারও বেশি গতিতে চলার পর হঠাৎ দুই লেনের মহাসড়কে গেলে সঙ্গত কারণেই গতির ভারসাম্যের হেরফের হবে। এতে করে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও অমুলক নয়। একই কারণে ভাটিয়াপাড়া থেকে কালনা ঘাট হয়ে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি এ ক্ষেত্রে আরো বেশি বিপজ্জনক। নামেমাত্র এই মহাসড়কেও তখন যানবাহনের বাড়তি চাপ হবে।

অপ্রশস্ত রাস্তা ছাড়াও মধুমতি নদীর কালনা ঘাটে ফেরি পারাপারের সমস্যা মহা দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। উল্লেখ্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নড়াইল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর জেলাবাসীর কালনা সেতু পার হয়ে পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে ঢাকা যাতায়াত সহজ ও সংক্ষিপ্ত পথ হবে। এছাড়া নদীবন্দর নোয়াপাড়া এবং স্থল বন্দর বেনাপোলের আমদানী-রফতানি পণ্যাদি পরিবহনেও এই সেতু ব্যবহার করা হবে। নড়াইল-ঢাকা ও লোহাগড়া-ঢাকা রুটের নিয়মিত পরিবহন গুলি ছাড়াও যশোর ও বেনাপোল রুটের পরিবহন গুলিও তখন ঢাকা যেতে এই সড়ক ও সেতু ব্যবহার করবে। অন্যান্য যাবাহনের পাশাপাশি এই রুটের নিয়মিত পরিবহন গুলি পার হতেই কালনা ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। তার উপর বাড়তি যানবাহনের চাপ হলে পরিস্থিতি কি হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। ফলে এই সড়কের নির্মাণাধীন কালনা সেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত বাড়তি যানবাহনের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে সড়ক সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সড়কের শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়তে পারে। বাড়তি যানবাহনের চাপে একদিকে যেমন যানবাহনের গতি কমে যাবে তেমনি অপ্রশস্ত মহাসড়কে দুর্ঘটনাও বেড়ে যেতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

কালনাসেতু চালু হতে এখনও অন্ততঃ চারমাস বাকী। এদিকে কালনা ঘাট থেকে নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিনস্থ ভাঙ্গুড়া পর্যন্ত মহাসড়কটি প্রশস্থকরণের সিদ্ধান্ত হলেও কাজটি এখনও শুরুই হয়নি। একারনে কালনা সেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন গুলিকে সম্ভাব্য বিকল্প পথ ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে যশোর ,নোয়াপাড়া ও বেনাপোলের মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ট্রাকগুলিকে কালনা ঘাট পরিহারের পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। অন্যথায় কালনাঘাটে ফেরি পারাপারে মহা দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
কালনা সেতুর পশ্চিম পারে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা এবং পূর্ব পারে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা। কালনা সেতু চালুর আগে নওয়াপাড়া, যশোর, বেনাপোল, খুলনা, সাতক্ষীরাগামী ট্রাক ও কাভার্ড ট্রাকগুলিকে ভাটিয়াপাড়া মোড় থেকে গোপালগঞ্জ-খুলনা হয়ে চলাচলের পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। অন্যথায় কালনাঘাটে যানজট সহ নানা ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।

সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, কালনা ঘাট থেকে ভাঙ্গুড়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কের উভয় পার্শ্বে ৩ ফুট করে প্রশস্থ করা হবে। নড়াইল থেকে মাওয়াঘাট পর্যন্ত খানজাহান আলী পরিবহন বাসের চালক টুটুল শেখ বলেন Ñঅপ্রশস্ত এ রাস্তায় যে পরিমান যানবাহন বেড়েছে তাতে এখনই বাস চালিয়ে সময়মত পৌছানো কঠিন হয়ে গেছে। পদ্মাসেতু চালু হলে কালনাঘাট পারাপারে চরম দুরাবস্থা হবে। এই পরিবহনের কালনাঘাটে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনকারী জিকাত সরদার বলেন, কালনা সেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত কিছু গাড়ী অন্য পথে ঘুরিয়ে দেয়া উচিৎ।এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার ওসি শেখ আবু হেনা মিলন বলেন-এটা হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ জানান, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে কালনা সেতুর কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। তবে শোকের মাস আগষ্টের পরিবর্তে সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হতে পারে।

তিনি আরো জানান-কালনা ঘাট থেকে ভাঙ্গুড়া পর্যন্ত (নড়াইল জেলার অংশ) বিদ্যমান ১৮ ফুট সড়ক ২৪ ফুটে উন্নীতকরণ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। কার্যাদেশের অনুমোদন ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী অর্থ বছরের শুরুতেই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু করা যাবে।