নড়াইলে ইউপি চেয়ারম্যানের নিজ পরিবারেই ১৫ জনের নামে ১০ টাকা চালের কার্ড!

10
990
নড়াইলে ১০ টাকার চালের উপকারভোগীদের তালিকা তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগ
চাউল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নড়াইলের চারিদিকে ঘটছে চাল চুরির ঘটনা। এতদিন এসব গোপন থাকলে ও করোনার কারণে ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে চালই প্রধান ইস্যু। তাই একের পর বেরিয়ে আসছে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর নানা অনিয়মের তথ্য। ভিজিএফ এর চালচুরির দায়ে পিরোলী ইউপি চেয়ারম্যানের নামে মামলা-বহিষ্কার-আটক, ত্রাণের চাল চুরির দায়ে জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যানের নামে একই ব্যবস্থার মাঝে ১০ টাকার চাল নিয়ে নাজেহাল প্রশাসন।

জেলার ৩৯ ইউনিয়নের মধ্যে অন্ততঃ ৩৫ ইউনিয়নে সরকারী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চালে অনিয়ম রয়েছে।সদরের হবখালি ইউনিয়নে এসব ছাপিয়ে অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান এর পরিবারের কমপক্ষে ১৫ জন সদস্যের নামে ১০ টাকা দামের চালের কার্ড থাকার খবর।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম চঞ্চল এর আপন ও সৎ মিলে ৩জন মা, আপন দুই ভাই, বোন ভগ্নিপতি, ভাইপো, চাচা, মামা, বেয়াই সহ ১৫ জনের নামে কার্ডের সন্ধান পাওয়া গেছে। ইউপি চেয়ারম্যানের মা রিজিয়া বেগম (ক্রমিক-৪১), নুরজাহান বেগম (ক্রমিক-৬২) ও রেকসোনা বেগমের (ক্রমিক-৮০) নামে ভান্ডারীপাড়ার ১০ টাকা দামের চালের কার্ড রয়েছে।

এছাড়া বোন আইরিন (ক্রমিক-১০২) ও ভগ্নিপতি রওশন শেখের (ক্রমিক-১০৩) নামে রয়েছে আরো দুটি কার্ড। আপন ভাই কামরুজ্জামান এর নাম ১১ ও ৬০ ক্রমিকে দুই জায়গায় রয়েছে। অপর ভাই ঝন্নুর নামে ৪১৪ ক্রমিকে কার্ড রয়েছে। এখানেই শেষ নয় চেয়ারম্যানের ভাইপো সৌরভ আর বৌমা সুমীর নামে দু’টি কার্ড করা হয়েছে।

ভান্ডারীপাড়ায় চেয়ারম্যানের মামা মো. রবিউল ইসলাম (ক্রমিক-৮৫) ও ১০ টাকার কার্ডধারী। হবখালী গ্রামে চেয়ারম্যানের বেয়াই আ. ওয়াদুদ মোল্যা (ক্রমিক-১৯৪) ও তার স্ত্রী তানজিরা (ক্রমিক-১০১) দুজনকেই দটো কার্ড করে দেয়া হয়েছে। মামাতো ভাই ইকবাল,জাহিদ ও আরেক ভাই নাইমের নামে রয়েেেছ ১০ টাকা দামের খাদ্যবান্ধব চালের কার্ড।

এছাড়া ভান্ডারীপাড়ার তামেশা বেগম, শিল্পী সহ পঞ্চাশোর্ধ লোকের নাম তালিকায় আছে যারা বহু আগেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। ভান্ডারীপাড়া কাজী তরিকুল যিনি প্রবাসে থাকেন, তার নামেও কার্ড রয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান চঞ্চল এর বাড়ি ইউনিয়নের ভান্ডরীপাড়া গ্রামে। তার আপন ভাইপো মোঃ লিংকন রহমান ১০ টাকা দামের চালের ডিলার হওয়ায় অজান্তেই এসব চাল বিতরণ হচ্ছে অথবা অন্যত্র পা*চার হয়ে যাচ্ছে।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, হবখালী ইউনিয়নে দু’টি ডিলারের মাধ্যমে ৬’শ ১৮টি কার্ডের মাধ্যমে হ*তদরিদ্রদের ১০ টাকা দামের চাল বিতরণ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৩০৯ টি কার্ডে চাল বিতরণ হয় চেয়ারম্যানের ভাইপো ডিলার মো. লিংকন রহমান এবং অপর ডিলার বাগডাঙ্গা বাজারে মো. জিন্নাহ মোল্যার এর মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত এসকল অনিয়ম হলেও তা দেখেন না তদারককারী কর্মকর্তা কিংবা খাদ্য বিভাগের কেউ।

ডিলার মোঃ লিংকন রহমান বলেন, আমি তো তালিকা করিনা, এটা চেয়ারম্যান মেম্বররা করেন। কেউ না আসলে তার পক্ষের কাউকে চাল দিয়ে দেয়া হয়। হবখালী ইউপি সচীব বিষ্ণুপদ সেন জানান, ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত সাপেক্ষে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ৯১টি কার্ড সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সেসব কার্ড সংশোধনের কাজ চলছে।

চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম চঞ্চলকে তার পরিবারের এতগুলো লোকের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্ড হবার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে কিছু ভুলত্রু*টি ছিলো তা সংশোধন করা হচ্ছে, তাছাড়া এরা সবাইতো গরীব।

কর্মসূচীর তদারককারী কর্মকর্তা (উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা) বি এম জাহিদ শাকিল বলেন, আমাকে একসাথে অনেকগুলো ফিল্ড দেখতে হয়, তাই সম্পূর্ন সময় থাকতে পারি না, আমি যতটুকু সময় থাকি সেখানে তো কোন অনিয়ম ধরা পড়ে না। তবে আগের ডিলারের বিরু*দ্ধে অফিসে অভিযোগ করেছি।

হবখালী ইউনিয়নের ১০ টাকা দামের চালে এতসব অনিয়মের ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, একজন ডিলার বাতিল এবং অন্যজনকে কারণ দর্শানো এবং চেয়ারম্যানকে ও কারণ দর্শানোর কথা বলেন। বাস্তবে দুই ডিলারের সাথে সরাসরি কথা বললে তারা শোকজ বা ডিলারশীপ বাতিলের কোন পত্র পাননি বলে জানান।

নড়াইলে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, মাঠ পর্যায়ের অনেক কার্ড এর ভুলত্রু*টি আমাদের নজরে এসেছে, মিডিয়া এক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সব কার্ডগুলো পুনরায় যাচাই এর জন্য। আশাকরি আগামীতে সমস্ত অনিয়ম সংশোধন হবে।