নড়াইল উন্নয়নে মাশরাফীর ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে

103
38

লেঃ কর্ণেল সৈয়দ হাসান ইকবাল (অব.)

নড়াইল-২ আসনে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য নড়াইল বাসীর পক্ষ হতে মাশরাফীকে অগ্রীম শুভেচ্ছা।

১। নড়াইল জেলার শত বছরের ইতিহাসে রাজনীতির নক্ষত্র মুন্সী ওয়ালীউর রহমান ও সৈয়দ নওশের আলী, বিশ্ব বরেন্য চিত্র শিল্পী এস এম সুলতান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স কর্পোরাল নূর মোহাম্মদ শেখ এবং ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় ক্রিকেট তারকা মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ওরফে কৌশিককে নিয়ে নড়াইলবাসী গর্ববোধ করে থাকে। ব্রিটিশ ভারতে নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের উল্লেখিত দু-জন রাজনীতিবিদই আমাদের অহংকার। তাঁদের জন্ম যথাক্রমে ১৮৯১ ও ১৮৯২ সালে হয়েছিল। মুন্সী ওয়ালীউর রহমান অবিভক্ত বাংলায় এম এল এ এবং সৈয়দ রওশন আলী অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৭ সালের পরে অদ্যবধি কোন মন্ত্রীত্ব নড়াইল জেলার ভাগ্যে জোটেনী।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে মরহুম খন্দকার আবদুল হাফিজ (নড়াইল সদর), মরহুম লেঃ মতিউর রহমান (লোহাগাড়া) এবং মরহুম এখলাস উদ্দিনকে (কালিয়া) তাদের অবদানের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে নড়াইলবাসী স্মরণ করে থাকে।

২। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিগত ৪৭ বছরে নড়াইল জেলার রাজনীতির গুনগত/টেকসই উন্নয়ন হয়নি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে থাকেন সেই ধারাবাহিকতায় আজ নড়াইল এর রাজনীতি প্রশ্নবৃদ্ধ ও সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে বলেও ধারনা করা যায়। রাজনৈতিক বিশ্বাস, নীতিনৈতিকতা, আদর্শ ও দেশ প্রেম অনেকাংশে অনুপস্থিত বলে প্রতীয়মান। বিভিন্ন ধারা উপধারায় বিভক্ত হয়ে এবং ব্যক্তিস্বার্থের রাজনৈতিক আদর্শের সমন্বয়ে হাবু ডুবু খেয়ে চলেছেন বলে অনেকে মনে করেন। প্রকৃতপক্ষে নড়াইল জেলার সামগ্রীক উন্নয়ন তথা অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা ইত্যাদিতে অন্যান্য যে কোন ছোট জেলার উন্নয়নের তুলনায় বেশ পিঁছে পড়ে আছে। অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক বেকারত্বের অভিশাপে অনেকাংশেই জর্জরিত। আর্থিক অভাব অনাটনের কারণে অনেক মেধাবী কিন্তু অস্বচ্ছল ছাত্র-ছাত্রী অকালে ঝরে পড়ছে।

৩। রাজনীতির মুখ্য উদ্দেশ্যই হলো মানুষের সেবা প্রদান করা অর্থাৎ নড়াইলবাসীর গণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সততা, নিষ্ঠা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে নিজেকে মনোনিবেশ করা। সেটা কি যারা রাজনীতি সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সেটা কি করতে সামর্থ হয়েছেন? যদি ব্যর্থ হয়ে থাকেন তবে ঐ ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব সন্মানিত রাজনীতিবিদগণদের। পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, উন্নতমানের সড়ক ব্যবস্থা দেখে আমাদের কি কখনো খারাপ লাগে না? তাহলে এই রাজনীতি আমাদের এলাকার হতদরিদ্র মানুষগুলোর জীবনজীবিকার মান উন্নয়নে কোন কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে? এটা নড়াইলবাসীর জন্য এক বিরাট হতাশা ও দুর্ভাগ্যের বিষয় নয় কি?

৪। নড়াইল একটা ছোট জেলা মাত্র ২টি সংসদীয় এলাকা যথাক্রমে নড়াইল-১ ও ২ নিয়ে সংগঠিত। ৩৯টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভা মিলে মোট ভোটার সংখ্যা ৫,৫৫,৫৬২ জন। তন্মধ্যে নড়াইল-০১ আসনে ভোটার সংখ্যা ২,৩৮,০৫১ এবং নড়াইল-০২ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩,১৭,৫৬২ জন। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে নড়াইলের ২টি আসনে ৩৯ (২২+১৭) জন প্রার্থী শুধুমাত্র সরকারী দল হতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে দলীয় মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। আরো বেশ কয়েকজন ফর্ম কিনে জমা দেননি বলে জানা যায়। এটা কি সুষ্ঠ রাজনীতির আলামত? এটা সম্ভাবত গুনগত ও বলিষ্ঠ রাজনৈতিক নৈতৃত্বের অভাব বলে প্রতীয়মান। এটা একটা রাজনৈতিক নেতৃত্বের এবং সাংগঠনিক তৎপরতার দুর্বলতা বলে তৃণমূল পর্যায় নেতাকর্মীদের ধারনা ও বিশ্বাস।

৫। আমাদের সকলের প্রিয় কৌশিক অর্থাৎ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নড়াইল তথা সমগ্র জাতীর গৌরব। বাংলাদেশ হয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব করে থাকেন। দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে ভালবাসে এবং পছন্দ করেন। তবে এক আশ্চর্য বিষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, যখনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নড়াইল এর গর্ব কৌশিককে নড়াইল-২ আসনের নৌকার হাল ধরতে বলেছেন তখনই অনেক শুভাকাংখীগনই তাঁকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। এটা মোটেও কাম্য নহে। তার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা উচিৎ। তবে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে বলে অনেকেই মত প্রকাশ করে থাকে। সে ক্ষেত্রে উক্ত ফাউন্ডেশন-এর শীর্ষ কর্মকর্তা ব্যক্তিদের আরো বেশি সতর্কতা সাথে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা উচিত বলে অনেক মাশরাফী ভক্তগণ ধারণা পোষণ করেন।

৬। আমাদের রাজনীতিবিদগণ নড়াইলের কাংখিত উন্নয়নে যে ব্যর্থতা দেখিয়েছেন আমি নিশ্চিত সেক্ষেত্রে আমাদের কৌশিক নড়াইলের জন্য সফলতা বয়ে আনতে সক্ষম হবে এবং নড়াইল হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি রোল মডেল। আমাদের সকলের উচিৎ হবে কৌশিককে সমর্থন ও সহযোগিতা করা। বিগত ৪৭ বছরে নড়াইল জেলা উন্নয়নের ছোঁয়া হতে অনেকাংশেই পিছনে পড়ে আছে। আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে, কৌশিক এর হাত ধরে নড়াইলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সংগঠিত ও প্রসারিত হবে। আমরা নড়াইল-০২ আসনে অনেকেই এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। তবে জাতিরজনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে নড়াইল-০২ আসনে মনোনয়ন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ প্রদান করছি। এখন নড়াইলের জনগনের উচিৎ হবে মাশরাফীকে সহযোগিতা করা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নড়াইলের প্রত্যাশীত উন্নয়নে সকলের এগিয়ে আসা। কৌশিক শুধু নড়াইলের গর্ব নয় তিনি জাতীরও অহংকার।

সবশেষে বলতে চাই কৌশিককে তার যোগ্যতা দিয়ে প্রমান করতে হবে যে সে একজন সফল রাজনীতিবিদ। একমাত্র রাজনীতিবিদগণই পারেন দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সাধন করতে। আমরা তাঁকে ক্রিকেটার কপিলদেব অথবা টেন্ডুলকার হিসাবে দেখতে চাইনা। তাদের মধ্যে কেহই কিন্তz রাজনীতিবিদ হিসাবে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। সকলের আকাংখা আমাদের কৌশিক যেন একজন সফল রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে সেজন্য তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সাথে মাশরাফীকে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। কৌশিক এর জন্য আমার আশীর্বাদ ও দোয়া রইল। কৌশিক এর পরিবার ও তাঁর পিতা স্বপন ভাইয়ের প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।

লেঃ কর্ণেল সৈয়দ হাসান ইকবাল (অব.)
সচেতন নাগরিক ও সমাজসেবক