স্টাফ রিপোর্টার
১৯৭১ সালের ৬এপ্রিল। চারিদিকে যুদ্ধেও দামামা। ঘড়িতে সকাল ৮টা। পাকিস্তানি বাহিনীর দুটি জেট বিমান থেকে নড়াইল শহরের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। এ সময় আদালত চত্বর, ডাক বাংলো এবং এসডিও-এর বাসার ওপর প্রায় ১৫-২০টির মতো বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বোম্বিং-এর ঘটনায় সদ্য নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং নড়াইল মহকুমা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক আ্যাডভোকেট খন্দকার আব্দুল হাফিজুর রহমান দু’পা, পিঠ এবং মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। এসডিও-এর বাসার পাশেই ছিল তাঁর অফিস। ঘটনার সময় তিনি অফিস থেকে পায়ে হেটে পাশ^বর্তী চিত্রা নদীর ঘাটের দিকে আসছিলেন। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হন। বোম্বিং-এ আদালত চত্বরের বড়ো বটগাছ, কাঞ্চিরাম ও ট্যাংরা কুন্ডুর মিষ্টির দোকানসহ তিনটি দোকান আগুনে পুড়ে যায়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী লঞ্চ ঘাটে মুক্তিযুদ্ধের কাজে ব্যবহৃত একটি লঞ্চ,নড়াইল ফেরীঘাটের ফেরী ডুবে যায়।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বোম্বিং-এ পুড়ে যাওয়া সেই বটগাছের গোড়া পাকাকরণ, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন ও ঐতিহাসিক তথ্য কণিকা তৈরীর কাজের উদ্ধোধন হয়েছে। নড়াইল জেলা জজ আদালতের লাগোয়া পূর্ব পাশে মঙ্গলবার (২মে) বিকেলে এ কাজের উদ্ধোধন করেন নড়াইলের জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আলমাচ হোসেন মৃধা। এ সময় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক প্রনয় কুমার দাস, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কবির উদ্দিন প্রামানিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডঃ সুবাস চন্দ্র বোস, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডঃ এএফএম হেমায়েতুলালাহ হিরু, নড়াইল জজ কোর্টের এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ আলমগীর সিদ্দিকীসহ জেলা জজশীপের বিচারকবৃন্দ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আলমাচ হোসেন মৃধা বলেন, জেলা জজশীপের মধ্যে অবস্থিত এ বটগাছ স্বাধীনতার স্মৃতিবহন করছে। এই স্মৃতিকে রক্ষা করতে গাছের গোড়া পাকাকরণ, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন ও ঐতিহাসিক তথ্য কণিকা তৈরীর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা পরিষদের অর্থায়নে এবং জেলা জজশীপের ব্যবস্থাপনায় পাকাকরণ ও স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির কাজ করা হচ্ছে। বোম্বিং-এর আঘাতে বটগাছটি প্রায় সম্পূর্ণ পুড়ে গেলেও পরবর্তীতে এ গাছের শাখা-প্রশাখা থেকে ঢালপালা গজিয়ে এখন মহিরুহে রূপ নিয়েছে।
