নড়াইল পৌরসভায় টিসিবির ৫৫৬৭ তালিকাভূক্তের দেড় হাজারের বেশী টিসিবি পণ্য পাচ্ছেন না!

0
3
নড়াইল পৌরসভায় টিসিবির ৫৫৬৭ তালিকাভূক্তের দেড় হাজারের বেশী টিসিবি পণ্য পাচ্ছেন না!
নড়াইল পৌরসভায় টিসিবির ৫৫৬৭ তালিকাভূক্তের দেড় হাজারের বেশী টিসিবি পণ্য পাচ্ছেন না!

নড়াইল পৌরসভায় টিসিবির ৫৫৬৭ তালিকাভূক্তের দেড় হাজারের বেশী টিসিবি পণ্য পাচ্ছেন না!

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইল পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে টিসিবির ৫ হাজার ৫৬৭ তালিকাভূক্তের দেড় হাজারের বেশী টিসিবি পণ্য ঠিকমতো পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন কাউন্সিলরদের পছন্দের এবং ধনী ব্যক্তিরা। নিন্ম আয়োর তালিকাভূক্ত কার্ডধারীরা জানিয়েছেন, প্রথমবার টিসিবি পণ্য নেবার পর তাদের কার্ড আর ফেরত দেওয়া হয়নি। এখন কাউন্সিলররা তাৎক্ষনিক যাদের স্লিপ বিতরণ করছেন তারাই পণ্য পাচ্ছে। এদিকে টিসিবি পণ্য বিক্রির সময় কয়েক বিক্রয় কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু ভোজ্য পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে এবং সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে গত বছরের মার্চ মাস থেকে নিয়োমিভাবে পণ্য দেওয়া চালু রেখেছে। ৫১জন ভ্রাম্যমান ডিলারের মাধ্যমে জেলায় স্বল্প আয়ের মোট ৪৫ হাজার ৫শত ৯১জন তালিকাভূক্ত ভোক্তা এসব পণ্য পাচ্ছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৮০, লোহাগড়া উপজেলায় ১০ হাজার ১০১, কালিয়া উপজেলায় ১১ হাজার ৭৮, নড়াইল পৌরসভায় ৫ হাজার ৫৬৭, কালিয়া পৌরসভায় ৩ হাজার ৮৫ এবং লোহাগড়া পৌরসভায় ২ হাজার ৬৮০জন তালিকাভূক্ত কার্ডধারী রয়েছেন। এসব ভোক্তা পবিত্র রমজান মাসে ২লিটার তেল, ২কেজি চিনি, ২কেজি মুশুরের ডাউল এবং ১ কেজি ছোলা পাচ্ছেন; যার মূল্য প্রতি লিটার তেল ১১০টাকা, ১কেজি ডাল ৬৫টাকা, চিনি ৫৫টাকা এবং ছোলা ৪৫টাকা।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর দেড় টার দিকে নড়াইল পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের দূর্গাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রখর রোদের মধ্যে প্রায় ৪০-৫০ জন লাইনে দাড়িয়ে রয়েছেন টিসিবির পণ্য নেবার জন্য। ট্রাকের পাশে বসে থাকা টিসিবির তালিকাভূক্ত গৃহিনী নিপা বেগমকে টিসিবি পণ্য পেয়েছেন কিনা এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে প্রথমবার টিসিবি পণ্য তোলার সময় ডিলার কার্ড নিয়ে যায়। তারপর আর মাল পাইনি, এবার ভোট চাইতে আসুক ভোট দিবানি’। তিনি আরও বলেন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ইপি রাণী বিশ্বাসের একটি স্লিপ দেবার কথা রয়েছে বলে বসে রয়েছি। এ সময় একই সমস্যায় পড়া হাফিজুর রহমান (৬০), জামান শেখ (৫০), মিজানুর রহমান (৫০), ফিরোজা বেগম,মরিয়ম বেগমসহ অনেক মানুষ জানান, কার্ডের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর আনিসের কাছে গেলে তিনি কোনো সদুত্তর দেয়না। বরং তিনি এখন তার পছন্দের ব্যক্তিদের স্লিপ দেয়।

এ বিষেয়ে ৪ নস্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ আনিচুর রহমান বলেন, আমার ওয়ার্ডের ১৫৭টি কার্ড ডিসি অফিস থেকে হারিয়ে যাওয়ার কারণে এখন স্লিপের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য দেওয়া হচ্ছে। তবে অধিকাংশ মানুষই পণ্য পাচ্ছে। কিছু সমস্যা হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া কার্ডগুলোর নামের তালিকা পৌরসভায় রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, খুঁজলে হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু সময়ের অভাবে হয়ে উঠছে না। অপর এক প্রশ্নে বলেন, এখন গরীব থেকে বড়ো লোকরাই বেশী টিসিবি পণ্য নেচ্ছে। যার দোতলা পাকা বাড়ি রয়েছে তারাও মাল নিচ্ছে। তবে তিনি বলেন, বর্তমানে আমি স্লিপ দিচ্ছিনা, এখন স্লিপ দিচ্ছেন ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর ইপি রাণী বিশ^াস। তবে ইপি রাণী এ প্রতিনিধিকে বলেছেন, কাউন্সিলর আনিচ কাকে কিভাবে কার্ড দিয়েছে তা জানিনা। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। আমি কাওকে কোনো কার্ড দেইনি।

পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিষখোলা এলাকার বাসিন্দা গৃহকর্মী তহুরন বেগম এবং পুরোনো বাজার এলাকার মাসুম বিল্লাহ জানান, তারা প্রথমবার টিসিবি পণ্য নেওয়ার সময় ডিলার কার্ড জমা নিলেও পরে আর ফেরত পাইনি। পরে স্থানীয় কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করলেও কার্ড এবং পণ্যও পাইনি।
রঘুনাথপুর-ডুমুরতলা ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, বর্তমান জেলা মৎসজীবী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, তার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর টিসিবি পণ্য নিজের বাড়ীর আঙ্গিনায় দিচ্ছে, যাতে পন্য সরাতে সুবিধা হয়। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সুযোগ পাওয়া তালিকাভূক্ত ভোক্তাদের কার্ড অধিকাংশ কাউন্সিলর নিজেদের কাছে জমা রেখে এখন পছন্দের ব্যক্তিদের স্লিপের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য দিচ্ছে। এটা এখন সবাই জানে। তবে এ বিষয়ে ১ নম্বও ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর এ.জেড.ইকবাল আলমকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিসিবির এক ডিলার বলেন, আমরা পণ্য দেবার পর স্থানীয় কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন মেম্বরকে কার্ড ও স্লিপ দিয়ে দেই। যদি কখনও কাউন্সিলর বা মেম্বররা কার্ড বুঝে না নেয় তাহলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে কার্ড ফেরত দেই। মূলত মেম্বর-কাউন্সিলররাই তাদের অপছন্দের ব্যক্তিদের কার্ড আউট করে দিয়ে পছন্দের লোকদের স্লিপ দিয়ে থাকেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। কখনও কখনও এক একজন ব্যক্তি ১০-১৫টি স্লিপ নিয়ে এসে পণ্য নিতে আসে। এসব স্লিপধারীদের অনেকেই সচ্ছল পরিবারের। কোনো গ্রাহক একটি বা দুটির বেশী কার্ড/স্লিপ আনতে পারবে না, এ ধরণের নিয়ম থাকলে অনিয়ম কম হতো।

আশিক এন্টারপ্রাইজের মালিক ময়েদ উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিষখোলা ডায়াবেটিক সেন্টারের সামনে টিসিবি পণ্য বিক্রির সময় তার ৭জন বিক্রয় কর্মীকে স্থানীয় কয়েক যুবক কোনো কারণ ছাড়াই মারধর করে।

নড়াইল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মলয় কুন্ডু বলেন, আমার কাছে টিসিবির নিন্ম আয়ের কার্ডধারী অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন তারা টিসিবি পণ্য পাচ্ছেনা। তাদের কার্ড এখন গায়েব হয়ে গেছে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রকৃত কার্ডধারীদের টিসিবি পণ্য দেওয়ার দাবি জানান।

এ বিষয়ে নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা বলেন, টিসিবির তালিকাভূক্ত কিছু ভোক্তার কার্ড হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনেছি। এ বিষয়ে কাউন্সিলররা আমাকে (মেয়রকে) জানিয়েছেন, যাদের মূলকার্ড পাওয়া যাচ্ছেনা তাদের সবাইকে চিহিৃত করতে না পারলেও পালাক্রমে ওই ওয়ার্ডের নিন্ম আয়ের সবাইকে স্লিপের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য দেওয়া হচ্ছে। তারপরও হারিয়ে যাওয়া তালিকা খুঁজে বের করে সুন্দরভাবে যাতে বিতরণ করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ফকরুল ইসলাম বলেছেন, জেলায় নিন্ম আয়ের তালিকাভূক্ত ৪৫ হাজার ৫৯১টি কার্ডের সবারই টিসিবি পণ্য পাবেন। কোনো ইউনিয়ন বা লোহাগড়া ও কালিয়া পৌরসভায় কোনো অনিয়মের কথা শোনা না গেলেও নড়াইল পৌরসভায় কোনো কোনো ওয়ার্ডে মৌখিকভাবে কিছু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের কিছু কার্ড হারিয়ে যাবার কথা আমরা শুনেছি। ডিসি অফিসে অনেক ভোক্তা ঠিকমতো জমা দেয়নি। তবে এর সংখ্যা কতো তা জানিনা। এ তালিকাতো পৌরসভায় রয়েছে। কাউন্সিলররা তালিকা বের করেতো পণ্য দিতে পিারে। বিতরণ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।