মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম থাকলেও এখনো স্বীকৃতি পায়নি শিক্ষিকা নড়াইলের দিপালী সিকদার

1
94

এসএস

চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ জীবন থেকে বেড়িয়ে এসে বাংলায় প্রথম নারীদের জন্য শিক্ষার আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। তাঁর অবদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তিনি নারীদের কাছে অনেক বড় একটি অনুপ্রেরণা। তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গুণীজন আজীবন কাজ করে গেছেন নারীশিক্ষার প্রসারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা রয়ে গেছেন‌ লোকচক্ষুর অন্তরালে।

এমনি একজন মানুষের জীবন, শিক্ষা সম্প্রসারে তাঁর অবদান, এমনকি মুক্তিযু*দ্ধের সময়ে তাঁর মহানুভবতা ও শিক্ষা সম্প্রসারের কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে এবার দিনের আলোয় একটি প্রতিবেদনে উন্মোচন করলো গণমাধ্যম। তিনি হলেন নড়াইলের দিপালী রানী সিকদার।

১৯৭০ সালে জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে মাগুরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে যোগ দেন দিপালী রানী সিকদার। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় লু*টপাট ও অন্যান্য অরা*জকতার কারনে তাঁর বাবা তিন মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেন ভারতের দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। এরপর তিনি দেখা করেন কোলকাতার নেতাজী ভবনের মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সাথে। তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কি করতে চান। তাঁর প্রথম আবেদনই ছিল যে তিনি দেশের জন্য কাজ করতে চান। তারপর তিনি বারাসাতের একটি ক্যাম্পের শিশুদের শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু শুধু শিক্ষা দান করেই নিজের দায়িত্ব পালন করেননি তিনি বরং ঐ শরণার্থী শিশুদের নিজের অর্থ দিয়ে খাবার ও পোশাকের ও ব্যবস্থা করতেন তিনি। তিনি জানান কখোনো মুড়ি কখনো চিড়া আবার কখোনো পুরানো জামাকাপড় কিনে নিয়ে যেতেন তিনি। যেটুকু সামর্থ্য ছিলো তা দিয়েই তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেছেন তিনি।

মুক্তিযু*দ্ধের পর দিপালী সিকদার আবারো যোগদান করেন মাগুরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করে চলে আসেন নড়াইলে। বিয়ে করে সংসার জীবনের পালা শুরু করলেও থেমে থাকেননি তিনি। যোগদান করেন নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। একদিকে সংসার অন্যদিকে শিক্ষাদান। সমান ভাবেই সফল হন তিনি।

১৯৮৬ সালে মুক্তিযু*দ্ধে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযো*দ্ধা তালিকায় তাঁর নাম নথিভুক্ত করা হয়। এই প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ সম্পন্ন করার জন্য তাঁর কাছে দাবি করা হয় মোটা অংকের টাকা। কিন্তু মুক্তিযো*দ্ধা তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য ঘুস দেওয়ায় মতো কাজ তাঁর জন্য ছিল ঘৃ*ণ্য। স্বামী সমরেশ চন্দ্র দাসও তাঁকে নিরুৎসাহিত করেন। ফলে তখন তিনি মুক্তিযো*দ্ধার স্বীকৃতি পাননি।

কিন্তু এবার মুক্তিযো*দ্ধা সনদ পেতে দিপালী রানী সিকদারকে সব ধরনের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা। তিনি বলেন, “আমরা চাই তিনি একজন মুক্তিযো*দ্ধা বা মুক্তিযু*দ্ধে অবদানকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাক। এই স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আবেদন করলে আমরা প্রশাসনের তরফ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।” কিন্তু যুদ্ধের আজ প্রায় ৪৮ বছর পর মুক্তিযো*দ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি নয় বরং মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাওয়ার প্রত্যাশা করেন দিপালী রানী সিকদার।