আইনী নজরদারিতে ‘ঢেলে দেই’ খ্যাত তাহেরী

3
40

নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই মুহূর্তে অন্যতম আলোচিত ও সমালোচিত দুটি শব্দ হলো ‘ঢেলে দেই’। ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ বাংলাদেশে চলমান প্রায় সকল যোগাযোগমাধ্যমে সামাজিক ভাইরাল এ শব্দ দুটির বক্তা মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী। বাংলাদেশের সার্চ ট্রেন্ড বলছে, চলতি মাসের (আগস্ট) ১৮ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত গুগলে ‘ঢেলে দেই’ শব্দ দুটি সার্চ করেছেন প্রায় শতভাগ বাংলাদেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।

তাহেরীর ওয়াজের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হাতে একটি চায়ের কাপ নিয়ে তাতে চুমুক দেন। এরপর বলেন, ‘কেউ কথা কইয়েন না, একটু চা খাব? খাই একটু? আপনারা খাবেন? ঢেলে দেই? (মুচকি হেসে আবারও) ঢেলে দেই? … ‘ভাই পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হইচই আছে? আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি? কারোর বিরুদ্ধে বলতেছি? এরপরও সকালে একদল লোক বলবে, তাহেরী বালা (ভালো) না।’ তার এই বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার মূল কারন হলো তার অশ্লীল অঙ্গিভঙ্গি। পাশাপাশি নাচ-গানসহ আরও বিনোদনমূলক কথাবার্তা ও তাকে ঘিরে বিভিন্ন ভাবে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সাধারণ জনগণের পর এবার ওয়াজের সময় এভাবে বিনোদন ও তামাশা করার বিষয়টি নজরে এসেছে বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা বলেন, “কেউ যদি ওয়াজের নামে ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ায় এবং অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ অশালীন ভাষা ব্যবহার করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ-সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা এ ধরনের অপরাধ করছেন তাদের অবিলম্বে এসব অশ্লীল কথা বলা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

এছাড়াও মন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিটি ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের জন্য স্ব স্ব জেলার ডিসি কার্যালয়ের অনুমতিপত্র, থানা পুলিশসহ কয়েকটি দফতরে অবগত করতে হয়। তাহেরীর বিষয়ে ওয়াজ মাহফিলে অশ্লীল কথা ও অশ্লীল ভঙ্গি করার বিষয়টি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে এসেছে। এরপর থেকে দেশের কয়েকটি জেলায় তার ওয়াজ মনিটরিং করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেধে দেয়া কিছু নিয়ম মেনে ওয়াজের বক্তারা কথা বলছেন কি-না, সেটিও নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ওয়াজ মাহফিল করে তাহেরী প্রথম বারের মতো সমালোচনার মুখে পরে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। সেখানে তিনি জিকিরের সময় নেচে-গেয়ে সুরের তালে ‘বসেন বসেন, বইসা যান’ বলার জন্য সমালোচিত হন। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে ট্রল করায় কিছুদিন ওয়াজ বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। এর আগে ২০১৩ সালে নরসিংদীতে তাহেরী ওয়াজে তাবলীগের লোকদের কাফের বলে গালাগাল আলেম-ওলামা সম্পর্কে এবং শরীয়তের পীর-মাশায়েকদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য করেন। এই ঘটনায় এলাকাবাসী রায়পুরার অলিপুরা শাহেরচর ও বড়চর গ্রামে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশত শটগানের ফাঁকা গুলি ও ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় নরসিংদীর মাওলানা নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে রায়পুরার অলিপুরায় গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর আগমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রায়পুরার সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানি মামলাও করেন।

এছাড়াও সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের একটি জেলায় এক ওয়াজ মাহফিলে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের ‘পোলা তো নয় সে যে আগুনের গোলা রে’ গানটি নেচে-গেয়ে উপস্থাপন করায় আবারও ইসলামী আলোচকদের সমালোচনার মুখে পড়েন তাহেরী। তবে ওয়াজে নাচ ও গানের বিষয়ে সম্প্রতি এক ওয়াজে তিনি বলেন, “এটা গান না। এগুলো করে আমি পোলাপাইনদের কৌশলে লাইনে আনি।”

ওয়াজ মাহফিলে অশ্লীলতা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, “যেকোনো ওয়াজ ও ওয়াজের বক্তাকে আমরা নিয়মিত ফলোআপ করি। আমাদের সাইবার সেল এ নিয়ে কাজ করছে। তারা রিপোর্ট করলে তার (তাহেরী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”