সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ যখন নিকৃষ্টতর প্রাণী

152
117

ডেস্ক/এসএস

ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে প্রতিবেশীর মাত্র সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করেছে নরপিশাচ হারুন অর রশীদ। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের বেশ ধরা এই নিকৃষ্ট প্রানী তাই আজ প্রশ্নবিদ্ধ করল মানুষের মানবিকতা আর বিবেক বোধকে।

রবিবার কুমিল্লার তিতাসের ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে সকাল সাড়ে এগারোটায় গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ অভিযানে শিশু সামিয়া আফরিন সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মূল আসিম মো. হারুন অর রশীদকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটক হওয়ার পর নিজের নরকীয় কান্ডের লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি দেয় এই নিকৃষ্ট ধর্ষক।

রবিবার দুপুর দুইটায় মিন্টো রোডের মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষক হারুন অর রশিদের স্বীকারোক্তির বর্ণনা দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন। এসময় তিনি বলেন, সায়মাকে ছাদ ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে আট তলার লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায় হারুন অর রশিদ। সেখানে নবনির্মিত নবম তলার ফ্ল্যাটে সায়মাকে ধর্ষণ করে সে। এরপর নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকে সায়মা। মৃত ভেবে সায়মার গলায় রশি দিয়ে টেনে রান্নাঘরের সিঙ্কের নিচে রেখে পালিয়ে যায় হারুন। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত কুরুচির পরিচায়ক; মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ ধরনের অপরাধীরা সাধারণত ধর্ষণের পর যখন ভাবে এ অপকর্মের কারণে সে বাঁচতে পারবে না তখনই হত্যার মতো ঘটনা ঘটায়। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটিয়েছে ঘাতক হারুন।’

এই ঘটনার পূর্ব বিবরণ দিতে গিয়ে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন মাকে বলে শিশু সায়মা আট তলায় যায়। সেখানে ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের একটি বাচ্চা আছে তার সঙ্গে খেলা করতে। সেখানে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানায় তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। সেখান থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে লিফটে ওঠে সায়মা। লিফটেই সায়মার সঙ্গে দেখা হয় পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের। হারুন সায়মাকে লিফট থেকে ছাদ দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে অত্যন্ত পাশবিকভাবে সায়মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সায়মা চিৎকার করলে মুখ চেপে ধর্ষণ করে। সায়মাকে নিস্তেজ দেখে গলায় রশি লাগিয়ে টেনে নিয়ে যায় রান্নাঘরে। সেখানে সিঙ্কের নিচে রাখে। এরপর পারভেজের বাসায় না ফিরে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকায় পালিয়ে যায় হারুন।’ আটক ধর্ষক সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসামি হারুন পারভেজের খালাতো ভাই। তিনি পারভেজের রঙের দোকানে কাজ করে আসছিলেন। সেই সুবাদে ওই বাসাতেই থাকতেন হারুন।’ তার ভাষ্যমতে, গ্রেপ্তার আসামি হারুন ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন৷ আমরা আজই তাকে আদলতে পাঠাবো এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করার মতো চার্জশিট দাখিল করব।

সামিয়া অথবা তার পরিবারের সঙ্গে ধর্ষক হারুন অর রশিদের কোন পূর্ব শত্রুতা ছিল কিনা এব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুল বাতেন বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কোন শত্রুতা ছিল না। শুধুমাত্র বিকৃত মস্তিষ্কের চিন্তা থেকেই এ ঘটনাটি হারুন ঘটিয়েছে।

এদিকে ঐ একই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সায়মার বাবা আ. সালাম। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্তানহারা বাবা।আব্দুস সালাম এসময় বলেন, ‘আমার পরীর মতো মেয়েকে যে কষ্ট দিয়ে মেরেছে তারও সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তার ফাঁসি চাই।’

সামিয়ার বাবা আরও বলেন, ‘আমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। মেয়েটা মাকে বলেছে, মা মাত্র ১০ মিনিটের জন্য ওই বাসায় যাব, একটু খেলে চলে আসব। এসে তোমার পড়াগুলো দিয়ে দেব। এরমধ্যেই তাকে আর পাওয়া গেল না।’ তিনি আরও জানান, সামিয়ার মৃত্যুতে গত তিনদিন ধরে পরিবারের কেউ মুখে পানিও দেয়নি। সবাই সামিয়ার কাপড়-চোপড় নিয়ে কান্নাকাটি করছে।’ পরিশেষে দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে সন্তানহারা পিতা বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে একটি কথা বলতে চাই, যাদের মেয়ে বাচ্চা আছে, তারা আগলে রাখবেন। এক মুহূর্তের জন্য আড়াল হতে দেবেন না। এইসব নরপিশাচদের হাত থেকে খেয়াল রাখবেন।’

উল্লেখ্য যে, গত শুক্রবার, ৫ জুলাই সন্ধ্যায় মাকে ১০ মিনিটের জন্য প্রতিবেশীর বাড়িতে খেলতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয় শিশু সায়মা। এই যাওয়াই ছিল তার শেষ যাওয়া। সুযোগ বুঝে প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে আসা খালাতো ভাই, হারুন অর রশিদ শিশু সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে পালিয়ে যায়।