এসডিজি অর্জনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইবেন শেখ হাসিনা

0
11
সে যে ধর্মেরই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া হবেঃ প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মাহমুদুল হাসান

জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনের মূল পর্ব শুরু হয়েছে। টানা পনেরো বারের মতো এই সম্মেলনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত আগেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস পুনর্গঠন এবং বিশ্বব্যাপী সংহতি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে এবারের অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। বৈশ্বিক শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন সংক্রান্ত আলোচনা এবারের অধিবেশনে বিশেষ প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, আগের যেকোনো বারের সফরের চেয়ে এ সফর অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ।

মুহিত আরও বলেন, বৈশ্বিক শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন সংক্রান্ত আলোচনা এবারের অধিবেশনে বিশেষ প্রাধান্য পাবে। এছাড়া বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক সংকট, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়গুলোও উঠে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনের বিষয়টি জানাবেন বিশেষভাবে। পাশাপাশি এসব অর্জনের ধারবাহিকতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কামনা করবেন। সারা বিশ্বের টেকসই উন্নয়নের জন্যে জাতিসংঘের উদ্যোগ ‘এসডিএসএন’ বাংলাদেশ অংশের গবেষণা অুনযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিলোপ, ক্ষুধা মুক্তি, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ, গুণগত শিক্ষাসহ ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা চলছে। এবার এ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে: ‘আস্থা পুনর্গঠন ও বিশ্ব সংহতির পুনরুদ্ধার : সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্ব ত্বরান্বিত করায় ২০৩০ এজেন্ডা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ’।

এসডিএসএন’ এর গবেষণা বলছে, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভালো করেছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে ১৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০১তম। যেটি গতবছর ১৬৩টি দেশের মধ্যে ছিল ১০৪তম অবস্থানে। ২০১৭ সালে ১৫৭টি দেশের মধ্যে অবস্থান ছিল ১২০তম। ২০২০ সালে বৈশ্বিক র‌্যাংকিং ছিল ১৬৬টি দেশের মধ্যে ১০৯তম। এসডিজিতে বাংলাদেশের কান্ট্রি স্কোর ৬৫.৯।

‘এসডিএসএন’- এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুণগত শিক্ষা এবং পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথে আছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিলোপের ক্ষেত্রে পরিমিত রূপে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। ক্ষুধা মুক্তির ক্ষেত্রে অপুষ্টি হ্রাসে ২০২০ সাল পর্যন্ত অগ্রগতির হার ১১.৪, যা এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের পথেই রয়েছে। প্রতি হেক্টরে খাদ্যশস্য উৎপাদনে ২০২১ সাল পর্যন্ত অগ্রগতির হার ৫.০, এটিও এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে।

সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ শিরোনামে লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে মায়ের মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ খুবই ভালো করেছে। নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস এবং ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার হ্রাসের ক্ষেত্রেও ২০২১ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জন বেশ সন্তোষজনক। এইডস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেও বাংলাদেশ সফল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশে টিকাপ্রাপ্ত শিশুদের সুস্থ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সাফল্যের হার ৯৭, যা এসডিআর রিপোর্ট অনুযায়ী সন্তোষজনক। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সংক্রান্ত লক্ষ্যে সুপেয় পানি পান ও ব্যবহার নিশ্চিতে ২০২০ সালের তথ্যমতে বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং এই সাফল্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে।

সপ্তম টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন অর্থাৎ সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানিতে ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের বড় সাফল্য জনগণের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানো। জ্বালানি থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণেও ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জন সন্তোষজনক ।

শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামোর লক্ষ্য অর্জনে সামগ্রিকভাবে পরিমিত রূপে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারে ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী এসডিজি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বাণিজ্যিক এবং যোগাযোগব্যবস্থা সম্পর্কিত অবকাঠামো নির্মাণেও ২০১৮ সালের তথ্যমতে বাংলাদেশ একইরকম সাফল্য দেখাতে পেরেছে।

মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন এক নম্বর প্রায়োরিটি ইস্যু। এই বক্তব্য আবারও বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে একটি সাইড ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১১টি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থার প্রধানরা দ্বিপাক্ষিক সভা করবেন। সবখানেই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যে সবার সহায়তা চাইবেন।

এবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৫০ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে মূল বিতর্ক পর্ব শুরু হয়েছে । অধিবেশন চলবে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিবছরের মতো এবারও মূল অধিবেশনে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনা বাংলায় ভাষণ দেবেন।