বাঘারপাড়ায় শিক্ষার নামে সরকারি অর্থ লোপাটের চেষ্টায় মত্ত!

0
10
বাঘারপাড়ায় শিক্ষার নামে সরকারি অর্থ লোপাটের চেষ্টায় মত্ত!
বাঘারপাড়ায় শিক্ষার নামে সরকারি অর্থ লোপাটের চেষ্টায় মত্ত!

বাঘারপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি

বাঘারপাড়ায় অনিয়ম-দুর্নীতি-জালিয়াতির মাধ্যমে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার নামে সরকারি অর্থ লোপাটের চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বাঘারপাড়া উপজেলায় ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক পর্যায় প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত হয় যশোরের দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা।

অনিয়ম-দুর্নীতি-জালিয়াতির মাধ্যমে ঝরে পড়া নয়- এমন শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৭০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্রে কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি স্কুলে ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী থাকবে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী এখানে ভর্তি করা যাবে না। ছাত্রছাত্রীর বয়স হবে ৮ থেকে ১৪ বছর। নানা সুযোগ-সুবিধার মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষন কেন্দ্রে ফ্যান কেনার জন্য টাকা বরাদ্দ আছে।

সরেজমিনে দেখা যায় একেবারেই উল্টোচিত্র। ফ্যান থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের কিছুই দেওয়া হয়নি। অধিকাংশ স্কুল করা হয়েছে বিভিন্নজনের বারান্দায়, গোয়ালঘরের পার্শে, রান্নাঘর বা দোকানঘরে। এমনকি জাতীয় পতাকা ঘরের আড়ায় ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে। এসব জায়গায় সাইনবোর্ড থাকলেও ক্লাস হয় না। কোনো স্কুলেই ৩০ জন শিক্ষার্থী নেই। কয়েকটি স্কুল চললেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭-৮ জন। তারাও অন্য প্রতিষ্ঠানের।

ধলগ্রাম ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র বল্লামুখ শিক্ষা কেন্দ্র ক্লাস করছে সাত শিশু। প্রত্যেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্বপ্না রানী কুন্ডু নামে এক মহিলাকে। শিক্ষার্থীরা জানালেন কোন দিনই তিনি (স্বপ্না রানী কুন্ডু) কেন্দ্রে আসিনি। তার স্বামী কৃষ্ণ হরি কুন্ডু ক্লাস নেন।

দোহাকুলা ইউনিয়নের বহরমপুর কেন্দ্রে দেখা গেছে ৭জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থী মাছুম বিল্লাহ জানাল সে বহরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। তারা অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হলেও লোভ দেখিয়ে এসব স্কুলে ভর্তি করা হয়।

জহুরপুর ,বন্দবিলা, রায়পুর ও বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি কেন্দ্রসহ অধিকাংশ ইউনিয়নের শিক্ষাকেন্দ্রের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সাইনবোর্ড সর্বস্ব দু-একটি শিক্ষা কেন্দ্রে ৮ বছরের কম বয়সী শিশু ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী নিয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম সচল দেখানো হচ্ছে। এমন চিত্র সারা উপজেলায়।
বিল সাদীপুর কেন্দ্রের শিক্ষার্থী মেঘনা সুলতানা মীমের পিতা রাজু মোল্লা জানান , আমার মেয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষন কেন্দ্রে পড়েনা । সে মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে পড়ে।

নিয়োগপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন শিক্ষিকা জানান, খাতা-কলমে ২৮- ৩০ জন থাকলেও শিক্ষাকেন্দ্রে আসে সাত-আটজন। তাদের মধ্যে দু-একজন ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। এলাকা ঘুরে শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা এ পর্যন্ত কোন বেতন ভাতা পাননি ফলে ক্লাস চলে দায় সারা ভাবে। তবে এনজিও দিশা সংস্থা বই, বোর্ড , খাতা , চক, কাটার , পেসন্সিল ও পাটি দিয়েছে।

এনজিও দিশা সমাজ কল্যান সংস্থার উপজেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবিএম কামরুজ্জামান এর কাছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানতে চাইলে , তিনি বলেন একচোয়ালি সঠিক তথ্য আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন এখনও টাকা পাননি, তাই স্কুলের ফ্যান দেওয়া হয়নি। দুই একটি কেন্দ্রে বেড়া নেই । এছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী আমাদের কেন্দ্রে পড়ে কি না আমার জানা নেই।

জেলা ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ২০ টি কেন্দ্রের কার্যক্রম চলছে। ৫০টি কেন্দ্রে অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। শিক্ষন কেন্দ্রের সার্বিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, এবিষয় আমার কোন বক্তব্য নেই। আপনি যা লিখতে চান লেখেন।

এনজিও দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাহিমা সুলতানা জানান, আমাদের বাঘারপাড়ায় ৭০ টি কেন্দ্র চলছে। আমাদের ফান্ড আসানি এখনও তাই কিছু সমস্যা হয়েছে। ফান্ড আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের সাথে যোগাযোগ রাইখেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জরিপ অনুযায়ী ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৪ জন, কিন্তু ৭০ কেন্দ্রে ২ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী কোথা থেকে এসেছে । এই কর্মকর্তা আরো বলেন প্রথম পর্যায়ে ২০টি কেন্দ্রের অনুমোদনের সময় আমাদের সাথে যোগাযোগ ছিল । অবশিষ্ট ৫০ টি কেন্দ্রের বিষয় আমার জানা নেই।

উপজেলা নিবার্হী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান জানান, ‘দেখে শুনেই এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।’

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক মুহম্মদ বজলুর রশিদ বলেন, বাস্তবায়ন সংস্থা কোনো অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ডিসি স্যার সার্বিক বিষয়ে মূল্যায়ন করবেন।