জারি সম্রাট মোসলেম উদ্দিনের ১১৮তম জন্মবার্ষির্কী উপলক্ষে ৩ দিনব্যাপি মেলার উদ্বোধন

1187
33
জারি সম্রাট মোসলেম উদ্দিনের ১১৮তম জন্মবার্ষির্কী উপলক্ষে ৩ দিনব্যাপি মেলার উদ্বোধন
জারি সম্রাট মোসলেম উদ্দিন

স্টাফ রিপোর্টার

লোক সংগীতের অন্যতম ধারা জারি ও মরমী গানের প্রবাদ পুরুষ জারিসম্রাট মোসলেম উদ্দীনের ১১৮তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কবির জন্মভূমি সদর উপজেলার তারাপুর গ্রামে মোসলেম মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও মোসলেম স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে রোববার (১৭অক্টোবর) বিকেলে তিন’দিনব্যাপি এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে কবির জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, লে.কর্ণেল (অব.) সৈয়দ হাসান ইকবাল, মোসলেম স্মৃতি পরিষদের আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের সভাপতি মলয় কুমার কুন্ডু, জারিসম্রাট মোসলেম উদ্দীনের পুত্র জারিশিল্পী অধ্যক্ষ রওশন আলী প্রমুখ।

এর আগে মন্ত্রী সার্কিট হাউসে নড়াইলের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদেও সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। সেখানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবির টুকু, প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও মূর্ছনা সংগীত নিকেতনের সভাপতি শামীমূল ইসলাম টুলু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের সাধারন সম্পাদক শরফুল আলম লিটু, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান লুলু প্রমুখ মতবিনিময়ে অংশগ্রহন করেন।

প্রধান অতিথি বলেন, জারি সম্রাট মোসলেম উদ্দিন ছিলেন লোক সঙ্গীতের অন্যতম পথিকৃত। গ্রাম-বাংলার চির ঐতিহ্য জারিগান পরিবেশনের মাধ্যমে তিনি সাধারন মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। রচনা করেছেন বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক পালাগান। তিনি স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে বরেণ্য এই লোক কবিকে শিল্পকলায় অবদানের জন্য ‘একুশে পদক’ প্রদানের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গের কাছে তুলে ধরবেন বলে জানান।

তিন’দিনব্যাপী মেলায় বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে রয়েছে হা-ডু-ডু খেলা ও দাড়িয়াবান্দা খেলা প্রতিযোগিতা, মধু পূর্ণিমা উদ্বোধন, তবারক ও সিরনি বিতরণ, দোয়া অনুষ্ঠান, ভক্তিমূলক মোসলেম সঙ্গীত প্রতিযোগিতা ও জারিগানের আসর। এদিকে মোসলেম মেলাকে ঘিরে কবির বাড়ির আশপাশে শতাধিক দোকান বসেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মোসলেম ভক্তদের যেন এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশের আধুনিক জারীগানের জনক মোসলেম উদ্দিন ১৭টি জারী গানের পালা কাহিনী ও ৫টি যাত্রাপালা রচনা করেন এবং ‘ঝুমুর যাত্রাদল’ গঠন করেন। এসব যাত্রাপালায় তিনি অভিনয় এবং পরিচালনা করতেন। তিনি ভাটিয়ালী, মুর্শিদী, দেহতত্ব, ভজন, বিচ্ছেদ, ব্যঙ্গগীতি, উপদেশমূলক, ধুয়া গান, ভজন, বিচ্ছেদ, অষ্টক, কীর্ত্তন, হালুই, সারী, হামদ, নাত-এ-রাসুল, খাঁজার গান, মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশাত্ববোধক, শিশু সঙ্গীত, কৃষির গানসহ ১ হাজারের বেশী সঙ্গীত রচনা করেছেন। এছাড়া তিনি কবিগানও করতেন।

১৯৬৯ সালে পাকিস্তান বিরোধী গণআন্দোলনের সময় উন্মুক্ত মঞ্চে জারীগানের মাধ্যমে এ দেশের অধিকার বঞ্চিত মানুষকে অধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির স্বীকৃতি স্বরূপ স্থানীয় জনসাধারন তাকে ‘জারীস¤্রাট চারণ কবি’ উপাধি দেয়। তিনি গীত কবিতায় অবদানের জন্য যশোরের মাইকেল সঙ্গীত একাডেমী ১৯৭৬ সালে তাঁকে ‘ফররুখ আহমেদ সাহিত্য স্বর্ণ পদক’প্রদানসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

মরমী এই কবি মোসলেম উদ্দিন ১৯০৪ সালের ২৪ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার তারাপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন এবং ১৯৯০ সালের ১৯ আগষ্ট ইহলোক ত্যাগ করেন। চারণ কবি মোসলেমের জীবদ্দশায় ১৯২৯ সাল থেকে প্রতি বছর কার্তিকের মধু পূর্ণিমা তিথিতে এ জন্ম উৎসবের আয়োজন করা হয়।