শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের ধারণা; অক্ষরের গুরুত্ব ও ভূমিকা

833
11
শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের ধারণা; অক্ষরের গুরুত্ব ও ভূমিকা
শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের ধারণা; অক্ষরের গুরুত্ব ও ভূমিকা

মীর আব্দুল গণি, জার্মানি প্রবাসী

দু:খের সহিত উল্লেখ করতে হয় বহু পূর্ব হতেই শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের মঝে একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ভ্রান্ত ধারণাটি হলো- আমাদের প্রচলিত লেখাপড়া শিক্ষা বা স্বাক্ষরতা অর্জনকে আমরা বলি শিক্ষা। এবং যিনি অর্জন করেন তাঁকে বলি শিক্ষিত।

কারণ আমরা মনে করি বা ধারণা পোষণ করি-
লেখাপড়া শিক্ষা (স্বাক্ষরতা বা অক্ষরজ্ঞানার্জন বা পাঠদানমূলক শিক্ষা) শিক্ষার পরিপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যায়- আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত ব্যক্তি রাষ্ট্র-সমাজের কাঙ্খিত বা প্রত্যাশিত আচরণে নিজেকে বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হন না। এবং তাঁদের আচরণের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে আমাদের পোষণকৃত ধারণা সঠিক নয়।

এ বিষয়ে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক- স্বাক্ষরতা বা লিখতে ও পড়তে শেখা শিক্ষাদান ব্যবস্থায় শিক্ষার লক্ষ্যার্জন (জাতির মেরুদণ্ড গঠন) সম্ভব কি? উক্ত প্রশ্নটির সঠিক উত্তর আমরা পেতে পারি যদি- অক্ষর মূলত কী এবং অক্ষরের গুরুত্ব কী জানার চেষ্টা করি। অক্ষর মূলত কী ও তার গুরুত্ব উভয়ই বুঝতে সহজ হবে যদি আমরা অক্ষর ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার গুরুত্ব ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করি।

অক্ষরের গুরুত্ব ও ভূমিকাঃ অক্ষর-জ্ঞান অর্জন করলে আমরা লিপিবদ্ধ বিষয়ের পাঠোদ্ধার করতে পারি এবং ইচ্ছা করলে কোনো বিষয় লিপিবদ্ধ করতে পারি। অর্থাৎ অক্ষরের গুরুত্ব আহরণে ও সংরক্ষণে। সংক্ষেপে বলা যায়- অক্ষর মূলত সংরক্ষণের ভান্ডার বা সংরক্ষণশালা ও একই সঙ্গে উক্ত ভান্ডারের চাবি। যাঁর অক্ষর জ্ঞান আছে অর্থাৎ যিনি সাক্ষর সে ইচ্ছা করলে ভান্ডার খুলে আহরণ করতে পারেন। অক্ষর ‘শিক্ষার একটি বিশেষ বিষয়’ (শিক্ষার সীমাহীন বিষয় সমুদ্রে একটি বিষয় মাত্র) যার গুরুত্ব ‘সংরক্ষণে ও আহরণে।’ অক্ষর জ্ঞানর্জণ করলে বা লেখাপড়া শিখলেই ব্যক্তি সমাজ-রাষ্ট্রের কাঙ্খিত নাগরিক আচরণের অধিকারী বা বিচরণ ক্ষেত্রে আচরণ সক্ষম হতে পারেন কি?

উপরিউক্ত প্রশ্নটির উত্তর পূর্বোল্লিখিত উপমা বিশেষ পরিবেশ বেষ্টিত বাড়িটির বসতিদের মাঝে আমরা অন্বেষণ করতে পারি- মনে করি রহিম লেখাপড়া জানা ও অনেক জ্ঞানী কিন্তু সাঁতার জানে না। নদী পার হতে নৌকা বা জাহাজ ডুবলে অক্ষর জ্ঞান শিক্ষা তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে কি? পারবে না।

মনে করি, করিম লেখাপড়া জানে না কিন্তু উক্ত রূপ বিচরণ ক্ষেত্রে সে সর্ব বিষয়ে আচরণ সক্ষম। ফলে তার জীবন নিরাপদ। উপরিউক্ত উপমা ও আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, শুধু লেখাপড়া শিক্ষা বা অক্ষর জ্ঞান ব্যক্তির অস্তিত্বের যেমন নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে না তেমনি বিচরণ ক্ষেত্রে তথা নাগরিক আচরণে আচরণশীল করে তুলতে পারে না। অতএব শুধু লেখাপড়া শিক্ষা বা সাক্ষরতা অর্জন শিক্ষিত হবার বৈশিষ্ট্য দান করে না। চলবে…পূর্ব লেখাঃ

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে হলে করণীয়