নড়াইলে কথা ও গানে কালজয়ী শিল্পী ও সুরকার কমল দাস গুপ্তের জন্মদিন পালন

1
4
নড়াইলে কথা ও গানে কালজয়ী শিল্পী ও সুরকার কমল দাস গুপ্তের জন্মদিন পালন
নড়াইলে কথা ও গানে কালজয়ী শিল্পী ও সুরকার কমল দাস গুপ্ত

শামীমূল ইসলাম

মেনেছি গো হার মেনেছি…, এমনি বরষা ছিল সেদিন…এই কি গো শেষ দান…, ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে…., তুমি কি এখন দেখিছ স্বপন….,কতদিন দেখিনি তোমায়….,পৃথিবী আমারে চায়…, বুধবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় এসব জনপ্রিয় গানের সুরের আবেশে মোহিত হয়েছিল শ্রোতাগণ। উপমহাদেশে সংগীত ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র কমল দাশ গুপ্তের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইলে এক ভার্চুয়াল আলোচনা এবং সংগীত সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।

গণশিল্পী সংস্থা নড়াইল শাখার সভাপতি মলয় কান্তি নন্দীর সভাপতিত্বে আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী বশিরুল হক। অন্যান্যোর মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি খুলনার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ্যাডভোকেট মিনা মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক ও নজরুল গবেষক ফেরদৌস খান, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ড: তপন সরকার, দৈনিক নড়াইল কণ্ঠ সম্পাদক কাজী হাফিজ, লোহাগড়া গণনাট্য সংঘের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বর্তমান প্রজন্ম জানেই না, কমল দাস গুপ্ত কে ছিলেন? প্রজন্মকে এই গুনী শিল্পী ও সুরকার সম্পর্কে অবহিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। তাঁকে স্মরণ করা হলে দেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধি হবে’।

বরেণ্য শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক কমল দাশ গুপ্ত ১৯১২ সালে ২৮ জুলাই তৎকালীন নড়াইল মহকুমার কালিয়ার পৌর এলাকার বেন্দা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম তারা প্রসন্ন দাশ গুপ্ত। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ক্যালকাটা একাডেমী থেকে মেট্রিক পাশ করেন। বাবার ব্যবসা উপলক্ষে বেশ কয়েক বছর কুমিল্লায় অবস্থান করেন এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বি.কম (স্নাতক) পাশ করেন। নবগঙ্গা নদীর ভাঙ্গনে বহু বছর আগেই কমল দাশ গুপ্তের পৈত্রিক বাড়িটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রচার বিমুখ এই শিল্পী ও সুরকার কমল দাশ গুপ্ত ১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

জানা যায়, কমল দাশ গুপ্ত শৈশবকালে তাঁর বড় ভাই অধ্যাপক বিমল দাশ গুপ্তের কাছে ‘খেয়াল’ গান দিয়ে সংগীত জীবনের সূচনা করেন। এরপর তিনি প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ডি এল রায়ের ছেলে দিলীপ রায়, কৃষ্ণচন্দ্র দে এবং ওস্তাদ জমির উদ্দিন খাঁর নিকট ‘রাগ-রাগিনী’ বিষয়ক গান বাজনার তালিম নেন। এ সময় তিনি খেয়াল, ঠুমরী, দাদরা ও গজল গান রপ্ত করেন।
কমল দাস গুপ্ত মাত্র ২৩ বছর বয়সে ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ নামক গ্রামোফোন কোম্পানীর সংগীত পরিচালক ও সুরকার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। যদিও গ্রামোফোন কোম্পানিতে ঢুকেছিলেন একজন তবলাবাদক হিসেবে। তিনি নিয়মিত ম্যান্ডোলিন ও জাইলোফোন বাজাতেন। প্রায় ৮০টি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি প্রায় ১০ হাজার গানের সুর দিয়েছেন। বাংলা গান ছাড়াও হিন্দি ও উর্দু গজল, ভজন, উচ্চাঙ্গ সংগীত, হামদ ও নাথ পরিবেশন করে দর্শক শ্রোতার মন জয় করেন।

বরেণ্য এই শিল্পী ১৯৩৪ সাল থেকে শুরু করে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত তিনি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে সুর ও সংগীতের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি একজন পেশাদার নজরুল সংগীত শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নজরুল সংগীত অঙ্গনে তিনি ‘মাস্টার কমল’ নামে পরিচিত ছিলেন। দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রায় ৩শত নজরুল গীতির সুর দিয়েছেন কমল দাশ গুপ্ত। ১৯৫৫ সালে উপমহাদেশের নজরুল সংগীতের প্রবাদ প্রতিম শিল্পী ফিরোজা বেগমের সাথে কমল দাশ গুপ্তের বিবাহ হয়। তাহসিন, হামিন ও শাফিন আহম্মেদ নামে তাঁর তিন পুত্র সন্তান রয়েছে। হামিন ও শাফিন বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘মাইলস’র কর্ণধার।