নিজ গৃহপরিচারিকার বাড়িতে দাওয়াত খেলেন মাশরাফী, সমাজ কি শিখলো?

0
43

এসএস/এমএস

বাংলাদেশের জাতীয় ওয়ান ডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। একইসাথে নড়াইল ২ আসনের সংসদ সদস্য তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে তাঁর যে শ্রেষ্ঠত্ব বা ভূমিকা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খেলা, রাজনীতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি এক সেরা অলরাউন্ডার। সবখানেই তাঁর মহানুভবতার দৃষ্টান্তের দেখা মেলে। এই গুণের জন্যই তিনি অনেক মানুষের মনে এক বিশেষ জায়গায় তৈরি করে নিয়েছেন। সম্প্রতি একটি ঘটনার মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন এই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, যদিও বিষয়টি তার কাছে খুব স্বাভাবিক। গত শুক্রবার স্বপরিবারে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে তাঁর গৃহপরিচারিকার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন মাশরাফী। সেখানে গৃহপরিচারিকার বাসায় রান্না ভাত, মাছ, মাংস খেয়ে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন তিনি।

জানা গিয়েছে যে নালিতাবাড়ী উপজেলার পূর্ব যোগানিয়া গ্রামের বাসিন্দা আক্কাছ আলী। তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি একসময় রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকায় বসবাস করতেন যেখানে একটি হাউজিং অ্যাপার্টমেন্টে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। একই অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন মাশরাফী। পূর্বে আক্কাছ আলীর বড় ও মেজ মেয়ে মাশরাফীর বাসায় গৃহপরিচারিকা ছিলেন। তাদের দুজনের বিয়ের পরে আক্কাছ মিয়ার ছোট মেয়ে টুনি গত তিন বছর ধরে মাশরাফীর বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করে আসছে। আক্কাছ আলীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাশরাফীর সঙ্গে এই পরিবারের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। এমনকি আক্কাছের দুই মেয়ের বিয়ের খরচ দিয়েছেন মাশরাফী। সেখানে টুনি তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য মাশরাফী পরিবারের কাছে আবদার করত প্রায়ই। সেই আবদার রক্ষা করার স্বার্থে সপরিবারে আক্কাছ মিয়ার বাড়িতে বেড়াতে আসেন মাশরাফী। তাদের বাড়িতে ভাত, পটল ভাজা, মাছ, মুরগির মাংস ও গরুর মাংস খাওয়ানো হয়। সাথে ছিল দই ও মিষ্টি। দুই ঘণ্টা অবস্থান করে ফিরে যান তাঁরা। তাছাড়া মাশরাফী আক্কাছ মিয়াকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গেছেন বলে জানা যায়।

মাশরাফী ফিরে যাওয়ার পর আক্কাছ আলী বলেন, ‘মাশরাফি আমার বাড়িতে, ভাবতামও পাইতাছি না।’ এছাড়া আক্কাছ মিয়ার বাড়িতে মাশরাফী আসার খবর পেয়ে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসতে থাকেন আক্কাছ আলীর ঘরে। কেউ কেউ আবার তোলার সেলফি তোলার চেষ্টা করেন, কেউ কেউ অটোগ্রাফ নিতে ব্যস্ত হয়ে যান। প্রচণ্ড ভিড় জমে আক্কাছ আলীর বাড়ির চারপাশে।

টুনির বাড়িতে যাওয়া ছিল মাশরাফী ও তাঁর পরিবারের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত। তবে গৃহপরিচারিকার আবাসস্থলে তাঁর যে পরিভ্রমণ এটা সত্যই বর্তমান সমাজের জন্য উদাহরণ। এর কারণ স্বরূপ বলতে হয়, যেভাবে পরিবারগুলোতে গৃহপরিচারিকার সাথে আচার ব্যবহারের কথা খবরের পাতায় উঠে আসে তা সত্যই হতাশাজনক। যে মানুষগুলো অন্যের সুখের জন্য নিজেদের অধিকারটুকু বিকিয়ে দেয় সে মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো কোন উপকার বা দয়া দেখানো না। বরং তাদের অধিকার সংরক্ষণ যা সকলের দ্বায়িত্ব। মাশরাফী কোন ঢাকঢোল পেটান্নি। তিনি গিয়েছিলেন, তাঁর দ্বায়িত্ব তাঁকে হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সেদিন টুনির পরিবার ও মাশরাফীর মনে যে আনন্দ বয়ে গিয়েছিল সে মুহূর্ত ব্যক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।