শাহজাদপুরে দুই ডজন সেতুর সংযোগ সড়ক নেই!

1
5

রাজিব আহমেদ

সংযোগ সড়কের অভাবে শাহজাদপুরে প্রায় দুই ডজন ছোট-বড় সেতু ও কালভার্ট বছরের পর বছর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব সেতু নির্মাণে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ব্যয় হওয়া কোটি কোটি টাকা এখন অপচয়ের খাতায়। এ ছাড়া অনেক সেতু, কালভার্ট একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগের অধীনে নির্মিত হওয়া এসব সেতু নির্মানে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে সচেতন মহল থেকে। এমনও সেতু রয়েছে যার দু’দিকে কোনো রাস্তা নেই। আবার এমন সেতু আছে যার মাত্র দশ গজ রাস্তা, এরপর শুধু ফসলি জমি। এ ছাড়া এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে চারটি সেতু। অব্যবহৃত ও অপরিকল্পিত সেতুর ছড়াছড়ি থাকলেও অনেক এলাকায় বাঁশের সাঁকোই ভরসা।

শাহজাদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ডায়া ঘোনাপাড়া গ্রামে একটি ও এই সেতু থেকে মাত্র দুইশ গজ দূরে ডায়া মোহন মাস্টারের বাড়ির পাশে খালের উপর নির্মিত কংক্রিট সেতুর দু‘পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় গত ৩ বছর ধরে সেতুটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এটি এখন এলাকাবাসির কোন কাজেই আসছেনা। ডায়া ঘোনাপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেক, ফখরুল ইসলাম, মনজেল হোসেন, সুজন মিয়া, রজিনা খাতুন, খাদিজা খাতুন, শাহনাজ বেগম বলেন, গত ২০১৬-১৭ ইং অর্থ বছরে ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহজাদপুর উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এ সেতুটি নির্মাণ করেন।

সেই থেকে গত ৩ বছরেও এ পরিত্যাক্ত সেতুটির দু‘পাশে কোন সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। সংযোগ সড়কের অভাবে সেতুটিতে উঠতে মই ব্যবহার করতে হয়। মই ছাড়া সেতুটিতে ওঠা যায় না। ফলে পরিত্যাক্ত সেতুটি এলাকাবাসি এখন গোবরের ঘোষি, ভেজা কাপড়, লেপ, তোষক, কাঁথা-বালিশ, চট, ছালা, পলিথিন কাগজ ও শিশুদের মূত্রের কাপড় শুকানোর কাজে ব্যবহার করছেন। এ জন্য তারা সেতুটির উত্তর পাশে একটি কাঠের মই স্থাপন করে নিয়েছেন। এ মই দিয়ে উঠেই এলাকাবাসি তাদের এ প্রয়োজনীয় কাজ গুলি প্রতিদিন সারছেন।

এছাড়া উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের কাদাই হাটখোলার দক্ষিণ পাশে ১টি ও কাদাই পূর্ব পাড়া রয়েছে দুইটি সেতু যার কোন সংযোগ সড়ক নেই। বেলতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে দুইটি, সড়াতুল একটি,চক হরিপুর একটি,চর বাতিয়া একটি,শান্তিপুর একটি, মাদলা কোল্ড স্টোর সংলগ্ন একটি, লোচনাপাড়া একটি,বাচরা একটি,হাট বায়রা একটি ও কাকিলামারি একটি সেতু রয়েছে যার সংযোগ সড়ক নেই। অন্যদিকে জালালপুর ইউনিয়নের সড়াতুল গ্রামে একটি বিশ্বনাথপুর, উল্টাডাব ও গুধিবাড়ি গ্রামে একটি করে শাহজাদপুরে প্রায় দুই ডজন সেতু সংযোগ সড়ক ছাড়া পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সংযোগ সড়ক না থাকায় জনগণের কোন কাজেই আসছে না এসব সেতু। বর্ষায় নৌকায় ও শুষ্কমৌসুমে সেতুর নিচ দিয়ে পথচারিদের চলাচল করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আহম্মেদ রফিক বলেন, এলজিইডির অধীনে কোনো অপরিকল্পিত সেতু নেই। জালালপুর ইউনিয়নে কেবল একটি মাত্র ব্রিজ আছে যার সংযোগ সড়ক এখনো নির্মাণ হয়নি। এদিকে শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমান বলেন, আমি মনে করি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দ্বায়িত্বহীনতার কারণেই এ সকল সেতুগুলোর সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিন্দার আলীকে জিজ্ঞাসা কথা হলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন না উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগের অধীনে যে দুটি সেতুর সংযোগ সড়ক ছিলনা তা ঠিক করা হয়েছে। অন্য সকল সংযোগ বিহীন ব্রিজগুলো কোন কোন অধিদপ্তরের অধীনে তা আমার জানা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসেইন খান বলেন, যেসব সেতুর সংযোগ সড়ক নেই ও ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোর সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।