চলে গেলেন বইওয়ালা দাদুভাই পলান সরকার, প্রধানমন্ত্রীর শোক

5
15

নিউজ ডেস্ক

চলে গেলেন বইওয়ালা দাদুভাই পলান সরকার (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আর কেউ গ্রামের পর গ্রাম গিয়ে বই বিলাবে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেউ আর বই পৌছে দিবে না। আজ শুক্রবার (১মার্চ) বেলা ১২টার ২০ মিনিটে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা বাউশার নিজ বাড়িতে পলান সরকার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এসময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। এছাড়া মৃত্যুকালে তিনি ছয় ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন।

১৯৬৫ সালে বাউসা হারুন অর রসিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ৫২ শতাংশ জমি দান করেছিলেন পলান সরকার। এরপর স্থানীয়দের অনুরোধেই তিনি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৯০ সালে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের জন্য তাদের বই উপহার দিতেন। ১৯৯২ সালে ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের সুস্থতার জন্য পায়ে হেটে এলাকার মানুষদের বিনা পয়সায় বই পৌছে দিতেন। তবে পড়া শেষে বই ফেরত নিয়ে নিতেন। ৩০ বছর ধরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২০ গ্রামে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিলেন এই মানুষটি। ২০০৬ সালের বিটিভিতে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির কল্যাণে পলান সরকারের এই সামাজিক আন্দোলন সবার চোখে আসে। ২০০৯ সালে তাঁর বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে রাজশাহী জেলা পরিষদ। ২০১১ সালে তাকে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। বিনামূল্যে বই বিতরণ করে সকলের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য তিনি অর্জন করেন ‘সাদা মনের মানুষ’ উপাধি।

পলান সরকারের মূল নাম ছিল হারেজ উদ্দিন সরকার। তবে তাঁর মা তাকে ‘পলান’ নামে ডাকতেন। সেখান থেকে তিনি এ নামেই বেশি পরিচিত। ১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পলান সরকার। মাত্র পাঁচ মাস বয়সে তিনি তাঁর পিতাকে হারান। আর্থিক অভাবে মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে যান। এত কম লেখাপড়া করেও তিনি তাঁর মহৎ কাজ দিয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা সকলের পশ্চাদ্ধাবন করতে হবে। পলান সরকারের মৃত্যুতে এলাকাসহ সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত পলান সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী দেশে বই পড়ার আন্দোলন গড়ে তুলতে পলান সরকারের অবদানের কথা স্মরণ করেন। মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।