উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেন থেমে না থাকেঃ প্রধানমন্ত্রী

6
10

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, ‘আমরা চাই, যে অগ্রযাত্রা শুরু করেছি, বাংলাদেশকে আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি, সেটা যেন থেমে না থাকে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং খাদ্যের জন্য যেন আর কোনদিন বাংলাদেশকে কারো কাছে হাত পাততে না হয়, সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর যেন বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে ভিক্ষার হাত বাড়াতে না হয় সেদিকে বিশেষভাবে কৃষিবিদরা লক্ষ্য রাখবেন, আমরা সেটাই চাই। এইটুকুই আপনাদের কাছে অনুরোধ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী আজ (শনিবার) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউশন মিলনালয়তনে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (কেআইবি)-র ৬ষ্ঠ জাতীয় কনভেনশন এবং এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে আমাদের নির্বাচন আমরা একটানা দুইমেয়াদে থাকলাম (রাষ্ট্র ক্ষমতায়) তৃতীয় মেয়াদে জনগণ ভোট দিলে আসবো, না দিলে নয়। কিন্তু আমরা চাই, যে অগ্রযাত্রটা শুরু করেছি, বাংলাদেশ আজকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি, সেটা যেন থেমে না থাকে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগের নীতি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবো, কারো কাছে হাত পাতবো না। আর বিএনপি’র নীতি খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়া যাবে না, বিদেশ থেকে ভিক্ষা আনতে হবে।’ তিনি এ সময় কৃষিক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিজ্ঞানী, কৃষিবিদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং কেআইবি সভাপতি এএমএম সালেহ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আইএফডিসি’র প্রেসিডেন্ট এবং সিইও স্কট জে অ্যাঞ্জেল এবং কেআইবি মহাসচিব মো. খায়রুল আলম প্রিন্সও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। কৃষিবিদ ড. মীর্জা আব্দুল জলিল, ড. আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মান্নান এবং কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ কিন্তু আমাদের এখন এসব পণ্যে ভ্যালু অ্যাড করতে হবে, প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে হবে। কারণ, আমাদের দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে, বিদেশে বাজার ও তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই এগুলো আমরা দেশে যেমন বিক্রী করতে পারবো তেমনি বিদেশেও রপ্তানী করতে পারবো। তাই কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। সেজন্য আমরা উৎসাহিত করছি আমাদের বিনিয়োগটা যেন এদিকে হয়। আমরা তাহলে অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী হতে পারবো,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে দেশকে আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে। কারণ, খাদ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণ হলে বিদেশ থেকে নাকি খাদ্য সাহায্য আসবে না। লুটপাটও বন্ধ হয়ে যাবে।

কৃষি গবেষণা, উপকরণ সরবরাহ ও সম্প্রসারণ সেবাখাতের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আজকের এ উন্নতি অর্জন সম্ভব হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়নের জন্য গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ইতোমধ্যে খরা, লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু বেশ কিছু ফসল, ফলদবৃক্ষ ও অন্যান্য গাছের উচ্চফলনশীল জাত আপনারা উদ্ভাবন করেছেন। এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

তাঁর সরকার কৃষি শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টাডিজ ইন এগ্রিকালচারকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, পটুয়াখালী কৃষি কলেজ ও দিনাজপুরের হাজী দানেশ কৃষি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এছাড়া দেশের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও কৃষি সংশ্লিষ্ট শাখা খোলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কেমন হবে সেই পরিকল্পনা করে আমরা ‘ডেল্টা প্ল্যান’ করেছি। সেখানে কৃষি ও পানিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ব্লু-ইকোনমি শক্তিশালী করার জন্য সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্রও করা হয়েছে।

কৃষিক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত তাঁর সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশজুড়ে আমরা ভাসমান কৃষিক্ষেত করতে পারি। ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জের কিছু জায়গায় শুরু হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আপদকালের জন্য খাদ্য মজুদ রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কখন বিপদ-আপদ আসে, বলা যায় না। একটা ফসলের ওপর নির্ভর করলে হবে না। বহুমুখী ফসল চাষাবাদের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিপদের সময় যাতে খাদ্য সরবরাহ করতে পারি, যেজন্য সাইলো নির্মাণ করে আমরা খাদ্য মজুদ রাখার প্রস্তুতি নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে মূলমঞ্চে যাওয়ার আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের পতাকা উত্তোলন করেন কৃষিবিদ এ এম এম সালেহ। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কনভেনশনের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মঞ্চে বসা সকলকে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে দেশের কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী দু’দিনব্যাপী এ কনভেনশন উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণীকার মোড়কও উম্মোচন করেন। কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অনুষ্ঠানে কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন নাছিমকে কেআইবি’র পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা পদকে ভূষিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর হাতে এই পদক তুলে দেন।