গৃহস্থের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হলো শিশু রোখসানা

1
27

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের ১০ বছরের এক শিশুকে ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে অসুস্থ্য ওই শিশুটি বর্তমানে নড়াইল সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। হতদরিদ্র মা তার সন্তানের সুচিকিৎসা ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এ দিকে এ ঘটনায় লোহাগড়া থানায় একটি মামলা হয়েছে।

জানাগেছে, নির্যাতিত শিশু রোখসানা জেলার লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বাহিরপাড়া গ্রামের রাসেল শেখের মেয়ে। রাসেল হতদরিদ্র এক দীন মজুর। নিজের কোন জায়গা জমি না থাকায় অন্যের জমির ওপর ঘর বেঁধে পাঁচ সদস্য নিয়ে বসবাস করেন। অন্যের জমি বরগা করে এবং শ্রম বিক্রি করে দুবেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে কোন রকম বেঁচে আছেন।

নির্যাতিত শিশুটির মা রত্মা বেগম জানান, জানুয়ারী মাসের তাদের প্রতিবেশি সালেহা বেগমের প্রস্তাবে তিনি তার বড় মেয়ে রোখসানাকে ঢাকার ওয়ারীতে ব্যবসায়ী আছাদুল্লাহর বাসায় একটি শিশুকে দেখাশোনার জন্য পাঠাতে রাজি হন। কথা ছিল ওই বাড়িতে অন্য কোন কাজ করা লাগবে না।
রত্মা ও তার স্বামী রাসেল শেখ সংসারের অভাব অনটনের কথা চিন্তা করে মেয়েটিকে ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক জানুয়ারী মাসে রোখসানাকে ঢাকায় নিয়ে যায় প্রতিবেশি সালেহা।

রত্মা বেগম জানান, মাঝে মধ্যে মোবাইলে তার মেয়ের সাথে কথা বলতো। তবে কথাবার্তায় কখনো ভাল মনে হয়নি। গত ১৭ আগষ্ট আছাদুল্লাহর ভাই জানান যে, রোখসানা অসুস্থ্য এবং ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। খবর পেয়ে তারা ঢাকায় গিয়ে অঞ্জান অবস্থায় মেয়েকে হাসপাতালে দেখতে পান। সেখান থেকে নিয়ে এসে ১৮ আগষ্ট নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান নির্যাতিত রোখসানার পুরো শরীর জুড়ে শুধু আঘাতের চিহ্ন। হাসপাতালে কঙ্কালের মতো শুয়ে আছে। বাড়ির মালিক আছাদুল্লাহ ও তার স্ত্রী সোনিয়া বেগমসহ পরিবারের সদস্য নির্মমভাবে তার মেয়ের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেছেন।

নড়াইল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মশিউর রহমান বাবু জানান, শিশুটিকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করা হয়েছে এবং শরীর জুড়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। পোড়ানোর চিহ্ন রয়েছে। হাড় ভাঙ্গা রয়েছে। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। যৌন নির্যাতন হয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। তবে শিশুটি মোটেও আশংকামুক্ত নয়।

এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, শিশু রোকসানাকে নির্যাতনের ঘটনায় তার পিতা রাসেল শেখ বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে থানায় মামলা করেছে। আসামীদেরকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে।