দ্রুত দখল হচ্ছে নড়াইলের খালগুলো!

58
58

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধুমতি, চিত্রা, নবগঙ্গা, কাজলাসহ ১০টি নদী বেষ্টিত নড়াইল জেলা। জেলায় ছোট-বড় ৫৭টি বিল রয়েছে। এসব বিলের ফসল উৎপাদনে সেচ কার্যক্রম, মৎসসহ অন্যান্য কাজের জন্য প্রাকৃতিকভাবে এক সময় শতাধিক খালের অস্তিত্ব ছিল। আর এসব খালের সাথে জেলার নদীগুলোর সংযোগ ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী ৭৮টি খাল খাতা-কলমে থাকলেও দ্রুত এসব খাল দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালীরা হাসপাতাল, অফিস, বাড়ি নির্মাণের জন্য যাতায়াতের পথ তৈরি করতে গিয়ে খাল চিরতরে বন্ধ করে দিচ্ছে। অনেকে মাছের চাষ করছে। এদিকে জেলার বিভিন্ন সড়কের ওপর পুরোনো ব্রীজ ভেঙ্গে নতুন ব্রীজ করার সময় অস্থায়ীভাবে ডায়ভারশান সড়ক তৈরী হলেও ব্রীজ নির্মান শেষে সেই সড়কের মাটি ঠিকমতো অপসারণ করা হচ্ছে না। ফলে খাল-বিলের পানি সময়মতো প্রবাহিত হতে না পারায় বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি এবং ফসল চাষ ব্যাহত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়াইল-যশোর সড়কের পার্শ্বে তুলারামপুর খাল, পার্শ্ববর্তী মুলিয়া খাল, জিয়া খাল, শাহাবাদ-নয়নপুর খাল এবং বড়েন্দার খালের প্রায় দেড় শতাধিক জায়গায় হাসপাতাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি তৈরি করতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং অনেকে মৎস চাষ করছে। নড়াইলের কাজলা নদীর সাথে এসব খালের স্লুইচগেট দিয়ে সংযোগ রয়েছে। প্রয়োজনের সময় এ নদী থেকে বিলে পানি প্রবেশ এবং বের করে দেওয়া হয়। কলমিলতা পানি ব্যবস্থা দলের সভাপতি সায়েদ আলী শান্ত বলেন, প্রভাবশালীরা কয়েক বছর ধরে এসব খালে বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ করছে। এসব খাল ও উন্মুক্ত জলাশয়ে বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার মানুষ মাছ ধরে, শাপলা,কলমি শাক তুলে জীবিকা নির্বাহ করে এবং এসব জলাশয়ে পচানি দেওয়া পাটের আঁশ ছাড়িয়ে দরিদ্র নারী ও পুরুষ মৌসুমী বেকারত্ম দূর করে থাকে।

নড়াইল পৌরসভার ভাটিয়া, যুব উন্নয়ন,এলজিইডি অফিসের পশ্চিম পাশ দিয়ে বাহিরডাঙ্গা হয়ে শাহাবাদ পর্যন্ত ৭কিঃমিঃ একটি খালের অর্ধেক জায়গা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দখলে চলে গেছে।

চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের সীমানন্দপুর-গোয়ালবাথান এলাকায় নবগঙ্গা নদী থেকে সদরের হাওয়াইখালি ব্রীজ পর্যন্ত ৬ কিঃমিঃ একটি খাল থাকলেও উৎস মুখ প্রায় ২কিঃমিঃ খালের অস্তিত্ব মুছে গেছে। গোয়ালবাথান গ্রামে একটি পুল ভেঙ্গে রাস্তা করে খালের অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়া হয়েছে।

সদরের ভদ্রবিলা ইউনিয়নের ফুলসর ও আসগর-বাহার বিলের মধ্য দিয়ে একটি খাল ভবানিপুর- রামসিধি হয়ে বাগডাঙ্গা প্রায় ৬ কিঃমিঃ অতিক্রম করে চিত্রা নদীর সাথে মিশেছে। ভবানিপুর ও রামসিধি গ্রামের ভেতরে দখলদারদের কবলে পড়ে অনেক জায়গায় খাল তার অস্তিত্ব হারিয়েছে।

সদরের শহাবাদ ইউনিয়নের গারোচোরা গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন (৪৮) জানান, গারোচোরা গ্রামের পার্শ্বে চিত্রা নদী থেকে চানপুর পর্যন্ত ৩ কিঃমিঃ একটি খাল ছিল। অনেক জায়গায় খালের রেখা আছে। অধিকাংশ জায়গা এখন দখল হয়ে গেছে। শাহাবাদ পীর সাহেবের বাড়ীর পূর্ব পাশ দিয়ে চিত্রা নদী থেকে একটি খাল ধোন্দা-ময়েলখালি বিলে গিয়ে মিশলেও অনেক জায়গা ব্যক্তির দখলে চলে গেছে।

সদরের বাঁশগ্রাম থেকে বগুড়া দিঘেলা হয়ে বালিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিঃমিঃ কালি খালটির অধিকাংশ জায়গা বরাট হয়ে গেছে, কোথাও খালের ওপর দিয়ে রাস্তা করায় খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। আবার কোথাও বাঁধ দিয়ে মাচ চাষ করা হচ্ছে।

নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের পাশ দিয়ে সীমাখালী থেকে হাওয়াখালী পর্যন্ত জিয়া খালের অস্তিত্ব এখন আর নেই বললেই চলে। কোথাও কোথাও শুধু রেখা টুকু রয়েছে। লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের দীননাথ পাড়া থেকে নলদী ইউনিয়নের বালিদিয়া পর্যন্ত কয়েক কিঃমিঃ একটি পুরোনো খাল থাকলেও এখন অনেক জায়গায় খালের চিহৃ পর্যন্ত নেই।

এদিকে সদরের সীতারামপুর গ্রামের কৃষক শিশুপল বিশ্বাস জানান, ৪ বছর পূর্বে সীতারামপুর ব্রীজ নির্মানের সময় সীতারামপুর খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে ডায়ভারশান সড়ক তৈরী করা হয়। ব্রীজটি চালু হলেও ডায়ভারশান সড়ক ঠিকমতো অপসারন করা হয়নি। ফলে একদিকে পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ রয়েছে, অন্যদিকে নীচু জায়গায় জলাবন্ধতার সৃষ্টি হওয়য় এক’শ একর জমির রবি ও বোরা আবাদ ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, শুস্ক মৌসুমে কৃষিতে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা এবং কৃষিতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে সরকার সম্প্রতি দেশের ১৯ জেলার ১৬৯টি উপজেলার বিভিন্ন নদী ও খাল খনন করতে একনেকে একটি প্রকল্প পাশ করেছে। নড়াইলসহ খুলনা বিভাগের ৭টি জেলায় খাল খনন করা হবে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। নড়াইল বিএডিসি (সেচ) বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী রকিবুল হোসেন বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। এখনও তালিকা তৈরী হয়নি। আগামি বছর থেকে কাজ শুরু হবে।

জেলা প্রশাসক মোঃ এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে কিছু মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে লিখিত অভিযোগ দিলে ভালো হয়। তারপরও বিষয়টি আমরা দেখছি।