ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্বের এক প্রত্যক্ষ সাক্ষী ‘ওমর’

141
98

এমএসএ

নাজারেথকে বলা হয় ইসরাইলের “আরব রাজধানী”। ধারনা করা হয় এই অঞ্চলে জিশু খ্রিষ্ট্রের শৈশবের বাসস্থল ছিল। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল কর্তৃক শহরটি দখল হলেও নাজারেথ এখনো আদিবাসীদের আশ্রয়স্থল যাদের অধিকাংশই মুসলমান। এখানকার বসবাসরত মানুষদের অনেকেই এখনও নিজেদের প্যালেস্টিনিয়ান বলে দাবী করেন। ওয়েস্ট ব্যাংক, গাজা ভূখণ্ড ইসরাইল দখল করে নিলেও দখলকৃত মাতৃভূমির প্রতি সকল ফিলিস্তিনীদের একটি অধিকার যেন অনুধাবন করা যায়।

১৯৬১ সালে এক ফিলিস্তিনী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হানি আবু আসাদ। ইসরাইলের নাজারেথে জন্ম নিলেও তার প্যালেস্টিনিয়ান পরিচিতি ইসরাইলের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে।নাজারেথ থেকে নেদারল্যান্ডে দেশান্তরিত হয়ে আসেন আসাদ। সেখানে অ্যারোডায়নামিক্সের ওপর লেখাপড়া করেন। কিছুদিন অ্যারোস্পেস প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকার পর চলচ্চিত্র নির্মাণে মনোনিবেশ করেন। ১৯৯২ সালের ‘পেপার হাউজ’ ছিল তার সর্বপ্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ১৯৯৮ সালে নির্মিত হয় তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘দ্যা ফরটিন্থ চিক’। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রানা’জ ওয়েডিং’, ‘প্যারাডাইজ নাও’, ‘ডু নট ফরগেট মি ইস্তাম্বুল’, ‘ওমর’, ‘দ্যা আইডল’ ও ‘দ্যা মাউন্টেইন বিটউইন আস’। তার পরিচালিত ‘প্যারাডাইজ নাও’ ছবিটি ২০০৬ সালে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডে শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষা চলচ্চিত্র এবং ২০০৫ সালে গোল্ডেন কাফ অ্যাওয়ার্ডে শ্রেষ্ঠ ডাচ চলচ্চিত্রে পুরস্কার অর্জন করে। ২০১৩ সালে কান ফিল্ম ফেস্টিভেলে প্রদর্শিত হয় হাসানের আলোচিত ছবি ‘ওমর’। ছবিটি সেখানে জুরি পুরস্কার লাভ করে। এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসেও জিতে নেয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের খেতাব। ২০১৪ সালে ৮৬তম একাডেমী অ্যাওয়ার্ডে শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার ছবির জন্য ‘ওমর’ নমিনেটেড হয়।

সত্য কথাটি হল কোন ফিলিস্তিনী যে সিনেমা তৈরি করতে পারে তা গোচরে ছিল না। কারণ যার গ্রাম নাই তার আবার সীমানা। নিপীড়িত প্যালেস্টিনিয়ানদের মাঝে যে প্রতিভা লুকিয়ে আছে তা হয়তো বিশ্ববাসী ভুলে গিয়েছে। ইদ্রিস আলবা ও কেট উইন্সলেট অভিনীত ‘দ্যা মাউন্টেইন বিটউইন আস’ ছবিটিও যখন চোখের সামনে এসেছে তখনও জানা ছিল না যে ছবিটা আবু হাসান পরিচালনা করেছেন বা কি তার পরিচয়। সম্প্রতি ‘ওমর’ (২০১৩) দেখার পরই হাসানকে জানার অধীরতা শুরু হয়। নাজারেথে জন্ম নিয়েও নিজেকে ফিলিস্তিনীদের একজন মনে করার বিষয়টি যেন অন্যরকম অনুভূতির যোগান দেয়।

ফিলিস্তিনের এক রুটি ব্যবসায়ী ওমর। ওয়েস্ট ব্যাংকের ওপর ইসরাইলের তৈরি ২৫ ফিটের অবৈধ উঁচু দেয়াল (ওয়েস্ট ব্যাংক ব্যারিয়ার) টপকিয়ে প্রায়শই সে তার বাল্যবন্ধু তারেক ও তারেকের বোন নাদিয়ার সাথে দেখা করতে আসে। একদিন ইসরাইল সেনা কর্তৃক হয়রানির শিকার হয় ওমর। প্রতিশোধ নিতে বাল্যবন্ধু তারেক ও আমজাদকে সাথে নিয়ে ইসরাইল চেকপয়েন্ট হামলার পরিকল্পনা করে। আমজাদের গুলিতে এক ইসরাইলী সেনা নিহত হয়। কিছুদিনের মাথায় গ্রেফতার হয় ওমর। রিমাণ্ডে ওমরের ওপর চলতে থাকে পাশবিক অত্যাচার। শত আঘাতের পরেও মুখ খুলে না ওমর। হাজতে ইসরাইল এজেন্টের কপটতায় কিছুটা স্বীকারোক্তি বেরিয়ে আসে এই তরুণ ফিলিস্তিনী মুক্তিযোদ্ধার মুখ থেকে। ইসরাইল কর্তৃপক্ষের নিকট তারেককে হস্তান্তরের শর্তে জেল থেকে বের হয় ওমর। ড্রামা, রোমান্স, থ্রিলারে এগোতে থাকে ‘ওমর’ (২০১৩) ছবির বাস্তবিক প্লট। ছবির প্রধান ‘ওমর’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আদম বাকরি, তারেকের বোন নাদিয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন লীম লুবানী। এছাড়া ইয়াদ হউরানী, সামির বিশারাত, ওয়ালিদ জুয়াইতার অসাধারণ অভিনয়ে ছবিটি হয়ে ওঠে অত্যুজ্জ্বল। ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্বের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ‘ওমর’।