মহানবী (সাঃ) কে কটুক্তির সমর্থনঃ নড়াইলে ছাত্রের ফেসবুকে পোস্ট দেয়া সেই ছাত্রের রিমান্ড না মঞ্জুর

0
23
মহানবী (সাঃ) কে কটুক্তির সমর্থনঃ নড়াইলে ছাত্রের ফেসবুকে পোস্ট দেয়া সেই ছাত্রের রিমান্ড না মঞ্জুর

তদন্ত কমিটি গঠন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিখোঁজ

স্টাফ রিপোর্টার

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারী ভারতের রাজনীতিবিদ নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে কলেজছাত্রের পোস্ট দেয়ার ঘটনায় নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার দিন ১৮ জুন বিকেলে কলেজ চত্বর থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। রোববার (২৬ জুন) নড়াইল সদর আমলী আদালতে তার বিরুদ্ধে পুলিশ পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করলেও মঞ্জুর করেননি আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ওসি শওকত কবির।

নড়াইলে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে কঁটুক্তিকারী নূপুরের পক্ষে পোস্ট দেওয়ায় ছাত্র-জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ
নড়াইলে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে কঁটুক্তিকারী নূপুরের পক্ষে পোস্ট দেওয়ায় ছাত্র-জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ

এদিকে, অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনার দিন (১৮ জুন) বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতারমালা পরিয়ে প্রতিবাদ জানান। এরপর থেকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও তাঁর পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন-প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও সে পোস্ট মুছেনি রাহুল। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত (পূর্বের) অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় ২ পুলিশ সদস্য সহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এসময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সামনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে কলেজ চত্বরে ঘোরানো হয়।

ঘটনার পরদিন ১৯ জুন দুপুরে মির্জাপুর কলেজের হলরুমে নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি বিক্ষুদ্ধ জনতার সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। এছাড়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অব্যাহতি দিয়ে ওই কলেজের শিক্ষক আকতার হোসেন টিংকুকে নতুন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তী, সদর থানার ওসি শওকত কবির, স্থানীয় বিছালী ইউপি চেয়ারম্যান হেমায়েত হোসেন ফারুকসহ অনেকে। এ ঘটনার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ও তাঁর পরিবারের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়ের নিকট এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অধ্যক্ষের গলায় কেউ জুতার মালা পরিয়ে ছিল কি না, তা আমি দেখিনি। কলেজের বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, কলেজ ভবন থেকে বের করে আনার সময় উত্তেজিত জনতার হাত থেকে অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ হয়তো জুতার মালা পরানোর বিষয়টি লক্ষ করেনি। জুতার মালা পরানো দু’একটি ছবি দেখেছি। এসব ঘঁনা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জুবায়ের চৌধুরীকে আহবায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ছায়েদুর রহমান ও সদর থার ওসি মোঃ শওকত কবীর। পুলিশের পক্ষ থেকেয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।