লোহাগড়ায় মহাসড়কের উপর হাট-বাজার ও ইজিবাইক-টেম্পু স্ট্যান্ড

0
17
লোহাগড়ায় মহাসড়কের উপর হাট-বাজার ও ইজিবাইক-টেম্পু স্ট্যান্ড
লোহাগড়ায় মহাসড়কের উপর হাট-বাজার ও ইজিবাইক-টেম্পু স্ট্যান্ড

পদ্মাসেতু-কালনাসেতু চালুর আগেই অপসারণ করা দরকার

আবদুস ছালাম খান

পদ্মাসেতু-কালনাসেতু হয়ে আসা কালনাঘাট-যশোর ভায়া লোহাগড়া নড়াইল মহাসড়কের লক্ষিপাশা নামক স্থানে মহাসড়কের উপর জমজমাট হাটবাজার ও ইজিবাইক-টেম্পু স্ট্যান্ড চললেও আপসারণের কোন উদ্যোগ নেই। পদ্মাসেতু-কালনাসেতু চালুর আগেই অপসারণ করা দরকার। অন্যথায় দ্রুতগামী ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

লোহাগড়া উপজেলা সদরের লক্ষিপাশা নামক এই স্থানটি চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সংযোগস্থল। গুরুত্বপূর্ণ এই চৌরাস্তার উত্তরদিকে লোহাগড়া বাজার সড়ক, দক্ষিণ দিকে নদীবন্দর বড়দিয়া-মহাজন সড়ক,পশ্চিম দিকে নড়াইল-যশোর মহাসড়ক এবং পূর্বদিকে কালনা সেতু হয়ে ঢাকা গামী মহাসড়ক। চারটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংযোগস্থল এই চৌরাস্তার উপর প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিয়মিত বাজার বসে।

মহাসড়কের পাকা অংশের অনতিদুরে স্থায়ী দোকান ও মাছ বাজার বসানো হয়েছে। বাজারের সময় স্থায়ী দোকানের সামনে দিয়ে একেবারে রাস্তা সংলগ্ন হয়ে অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন তরিতরকারির দোকান বসে যায়। কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা এমনকি তার নিজের নিরাপত্তার দিকেও খেয়াল রাখেন না। বেখেয়ালী জনতাকে বাঁচাতে দ্রুতগামী যানবাহন গুলিকে বাধ্য হয়ে রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে যেতে হয়। তাছাড়া বাজারে আসা ভ্যান বা ইজিবাইকগুলি যাত্রী ওঠানো বা নামানোর জন্য সড়কের উপর দাঁড়িয়ে যায়। বাজারের দুইপার্শ্বে মহাসড়কের উপর বাসস্ট্যান্ড। বাজারের একপাশে ঢাকাগামী বাস স্ট্যান্ড এবং অপর পাশে নড়াইল-যশোর ও খুলনাগামী বাসস্ট্যান্ড।

এরই পার্শ্বে রাস্তাজুড়ে ভ্যান-রিকশা ও ইজিবাইক-টেম্পুস্ট্যান্ড। দিনরাত বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রী চলাচলের জন্য চৌরাস্তাটি সবসময় জমজমাট থাকে। অথচ ব্যস্ততম এই মহাসড়কের পাশের পুরো ফুটপাত (কাঁচা অংশ) জুড়ে ভ্যান-রিকশা ও ইজিবাইক টেম্পুগুলি দাঁড়িয়ে থাকায় অপর যে কোন যানবাহন থামতে হলে রাস্তার উপরই থামতে বাধ্য হয়। দীর্ঘদিন থেকে লক্ষিপাশা চৌরাস্তার সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানপাঠ উচ্ছেদের জন্য বারবার উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন হয়না। বরং কিছুদিন পূর্বে (মুকুল কুমার মৈত্র ইউএনও থাকা কালে) ইজিবাইক-টেম্পুস্ট্যান্ড হিসাবে ব্যবহৃত সড়কের জায়গায় কয়েকটি ফলের দোকান বসানো হয়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দোকানদাররা জ্বালানী কাঠসহ বিভিন্ন নির্মান সামগ্রী রেখে সড়কের পাশের জায়গা দখল করে রাখে।

পাকারাস্তার পার্শ্বে ভ্যান-রিকশা ও ইজিবাইক-টেম্পুগুলি দাঁড়ানোর কোন ফাঁকা জায়গা নাই। ফলে বাধ্য হয়ে সড়কের সাথে মিশে স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছে। বাজারের অনতি দুরে উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশের কার্যালয়। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই চৌরাস্তায় নিয়মিত কোন ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়না। এমনকি মহাসড়কের উপরস্থ এই হাটবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য থানা-পুলিশ বা উপজেলা প্রশাসনেরও কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয় না। ফলে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে প্রায়ই যানজট দেখা যায়। পদ্মাসেতু ও কালনা সেতু চালু হলে এই চৌরাস্তার অবস্থা কী হবে তা এখনই অনুমান করা যায়। ফলে অবিলম্বে মহাসড়কের জায়গার এই হাটবাজার-টেম্পু স্ট্যান্ড অপসারণ করা দরকার।
লক্ষিপাশা বাজারের পাশে বসবাসকারী নড়াইলের বিশিষ্ট আইনজীবী শরীফ মাহাবুবুল করিম বলেন, লক্ষিপাশা চৌরাস্তার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী সরকারি জায়গায় থাকা সব দোকান ও ইজিবাইক-টেম্পু স্ট্যান্ড সরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় পদ্মাসেতু ও কালনাসেতু চালু হলে দ্রুতগামী যানবাহনের চাপে এখানে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এব্যাপারে লোহাগড়া থানার ওসি শেখ আবু হেনা মিলন বলেন- আমি থানায় যোগদানের পর দুইবার মেয়র মহোদয়কে নিয়ে মহাসড়কের জায়গা ছেড়ে বাজার ও স্ট্যান্ড করার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু ওরা কথা শোনেনা। টেম্পু চালক আকরাম শেখ জানান- ‘আমরা সড়কের কাছাকাছি টেম্পু রাখতে চাই না কিন্তু সড়কের জায়গাজুড়ে দোকান বসানোতে টেম্পু রাখার কোন জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে সড়কের কাছাকাছি রাখি’।

সংশ্লিষ্ট এলাকার পৌর কাউন্সিলর গিয়াস ভুইয়া বলেন-মহাসড়কের কাজ শুরু হলে তখন সব দোকান উচ্ছেদ হয়ে যাবে। টেম্পু-ইজিবাইকও তখন আর সড়কের কাছে আসতে পারবে না। তবে গাড়ী রাখার জায়গা করে দিলে ওরা এখনই সরে যেতে রাজী। লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আজগর আলী জানান- পদ্মাসেতু চালুর আগেই মহাসড়কের কাছাকাছি থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলি অপসারণ করে যান চলাচল নির্বিঘ্নকরতে কাজ শুরু করা হবে।