নড়াইলে ১৫কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর নববর্ষ বরণ

0
6
নড়াইলে ১৫কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর নববর্ষ বরণ
নড়াইলে ১৫কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর নববর্ষ বরণ

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের প্রত্যন্ত অঞ্চল সদর উপজেলার শেখহাটি গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ১৫ কিলোমিটার পথ বাইসাইকেল চালিয়ে এগারোখানের ১১টি গ্রাম প্রদক্ষিণ করে বাংলা নববর্ষকে বরণ করেছে। ব্যতিক্রমধর্মী এই সাইকেল শোভাযাত্রাটি এলাকার মানুষের মাঝে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। করোনার কারনে দুই বছর পর এমন উদ্যোগে খুশি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।

১লা বৈশাখ-১৪২৯ (বৃহস্পতিবার) ভোর সকালে বৈশাখী সাজে ও স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয় চত্বরে জড়ো হন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সেজেছিলেন কৃষক, শ্রমিক, বাউল সহ নানা সাজে। বিদ্যালয় চত্বরে উপস্থিত হওয়ার পর শুরু হয় মুখে আল্পনা আঁকা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের মুখেও আঁকা নববর্ষের আল্পনা।

সকাল ৮টায় প্লাকাড ও ফেষ্টুন হাতে নিয়ে সাইকেল র‌্যালি বের হয়। সাড়ে তিন শতাধিক সাইকেলের বহরের প্রথমেই ছিলো শাড়ী পরিহিত ছাত্রীরা। এরপর স্কুল ড্রেস পরিহিত ছাত্রী ও ছাত্রদের বহর। র‌্যালিটি গুয়াখোলা, হাতিয়াড়া, বাকলি, মালিয়াট, কমলাপুর, রঘুরামপুর, দোগাছি, ঘোড়ানাছ, বেনাহাটী, বাকড়ী সহ পাশ^বর্তী ১১টি গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। এসময় রাস্তার দু’পাশে দাড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের হাত নেড়ে সাইকেল র‌্যালিকে উৎসাহ যোগায়।

বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী অঙ্কিতা ভৌমিক বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালী জীবনে খুবই একটা আনন্দের দিন। কারন এই অনুষ্ঠানে কোন জাতি ধর্ম ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই মিলে একসাথে দিনটা পালন করি। এই পহেলা বৈশাখ পালনের জন্য আমরা সাতদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা সবার মুখে শুভ নববর্ষ লিখেছি। মাথায় ক্যাপ পরেছি। বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড, ফেষ্টুন বানিয়েছি। পাখি, মাছ, নৌকাসহ বিভিন্ন ধরনের বর্ষবরণ উপকরণ তৈরি করেছি। গত দুই বছর করোনার কারনে স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা এক জায়গায় হতে পারিনি। কিন্তু আজ আমরা সবাই একজায় হয়ে বর্ষবরণ উদযাপন করতে পেরে খুবই আনন্দিত।’

দশম শ্রেণীর ছাত্রী হ্যাপী পাঠক, চৈতী গোস্বামী, ৮ম শ্রেণীর অনন্যা সিংহ সহ একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলা নববর্ষ উৎসব একটি সার্বজনীন উৎসব। গত ২ বছর করোনার কারনে উৎসবটি পালন করা সম্ভব হয়নি। তাই এ বছর উৎসবটি প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। খুব আনন্দের ছোয়া লেগেছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, আমরা সাড়ে ৩শ ছেলে মেয়ে নিয়ে এখারো খানের প্রত্যেকটি গ্রামে গিয়েছি এবং বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তা পৌছে দিয়েছি। যদি আমরা হেটে যেতাম তাহলে ১১টি গ্রাম প্রদক্ষিণ বা নববর্ষের শুভেচ্ছা পৌছে দেয়া সম্ভব হতো না। এই প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে ৬/৭ কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে এসে পড়াশোনা করে। সুতরাং সাইকেল নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে কারও বেগ পেতে হয়নি। নতুন বছরের করোনাসহ অন্যান্য রোগ-বালাই দূরে যাক, জরাজীর্ণ ঝরে যাক, নতুনভাবে সজ্জ্বিত হোক এ ধরা।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের নেতৃত্বে ও সহকারী শিক্ষক তাপস পাঠকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক শিখা রানী মল্লিক, কৃষ্ণ গোপাল রায়, সুকান্ত গোস্বামী, শিবানী রানী দাসসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।