নড়াইলের পিরোলী ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ

0
44
নড়াইলের পিরোলী ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ
নড়াইলের পিরোলী ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার

যে যায় লঙ্কায় সে সাজে রাবণ। এমন প্রবাদের ঘটনা ঘটে চলেছে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী ইউনিয়নে। চরম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের কতিপয় জনপ্রতিনিধি। ইতোমধ্যেই দুইজনকে বহিস্কার, একজন স্বইচ্ছায় পদত্যাগ এবং একজনের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির তদন্ত চলছে। চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ। সব একই সালের ঘটনা। উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ভিজিডির চাল চুরির অপরাধে ২০২০ সালের ২৩ এপ্রিল ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. জারজিস মোল্লা এবং করোনার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একই সালের ১৬ জুলাই দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো.শাহাজান মোল্লাকে বহিস্কার করা হয়। শাহাজান মোল্লা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন।

এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহেদা খাতুন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবার কয়েক দিন পর তাঁর বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগ ওঠে। নিজের সম্মান রক্ষার্থে তিনি একই সালের ৮ সেপ্টেম্বর স্বইচ্ছায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ইউপি সদস্য মো.ফোরকান মোল্লা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেলে তাঁর বিরুদ্ধে একই সালের ৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দূর্ণীতির অভিযোগ দায়ের করা হয়। যা বর্তমানে তদন্ত চলছে। ইউনিয়নের কয়েকজন বয়স্কলোকের অভিমত আমাদের ইউনিয়নের যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে “যে যায় লঙ্কায়,সে সাজে রাবণ”।

সরেজমিন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এক ধরণের ঘৃণা ও ক্ষোভ জন্মেছে। কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বলেন,ধুৎ সব চোর। ইউপি সচিব আফজাল শেখ বলেন,আগেরগুলো যে পথে হেটেছে পরেরগুলোও সেই পথে। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো.ফোরকান মোল্লা তাঁর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ। ইতোমধ্যে এলাকার মানুষ জেলা প্রশাসক এবং কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। যা বর্তমানে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন,ভিজিডির চাউল পরিষদে না রেখে নিজের বাড়ির সামনের দোকানে রাখেন। পরিষদ ভবনে কেন রাখেন না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন তা বলতে পারবো না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন,জন্মনিবন্ধন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যানকে নিয়ম বর্হিভূতভাবে টাকা দিতে হবে। এখানকার মানুষ দাঙ্গাবাজ প্রকৃতির। তাঁদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে কোপ খেতে পারবো না। খড়ড়িয়া গ্রামের তুহিন মোল্লার স্ত্রী রীনা খাতুন বলেন,আমার কার্ড নম্বর ৬৩। ১০ মাস চাল পাই না। তিনি বলেন,আমার নামে কার্ড হয়েছে ঘটনার তিন মাস পরে জানতে পারি। একই গ্রামের শরীফ বিশ্বাসের স্ত্রী মনিরা খাতুন বলেন,১৪ মাস আগে আমার নামে কার্ড হয়েছে। কিন্তু আমি আজও চাল পাইনি। কার্ডও হাতে পাইনি। মুকুল বিশ্বাসের স্ত্রী ঝুমুর বিশ্বাস বলেন,আমার নামে কার্ড হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু চাল পাই না। কার্ড নম্বর ৭০। গত মাসে হাতে কার্ড পেয়েছি। কার্ডে দেখা যায় টিপসই দিয়ে কে বা কারা আমার কার্ডের সব চাল তুলে নিয়েছে। এমনকি ১৫ হাজার টাকাও তুলে নিয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নে ২৩০ জনের নামে কার্ড রয়েছে। বেশিরভাগ কার্ডধারী মানুষ চাল পান না। তবে কে বা কারা এ চাউল তুলে নিয়েছেন। মুল তালিকায় যাদের নাম রয়েছে অথচ মাষ্টাররোলে বেশিরভাগ অন্য ব্যক্তির নাম। ভূঁয়া মাষ্টার রোল জমা দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো.ফোরকান মোল্লা নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন এসব-আমি পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবার আগের ঘটনা। যা এখন আমার ওপর চাপানো হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের অভিযোগের কথা তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন,আমি ফকিরের ছেলে নই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,ইউপি সদস্যদের বলেছি যার যার কার্ডের চাল আপনারা নিয়ে যান। তারা কেউ নিতে চায়নি। পরিষদ ভবনে রাখবো চুরি হবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে। যে কারণে নিজের বাড়ির সামনের দোকানে রেখে এখান থেকেই বিতরণ করছি।

কালিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আরিফুল ইসলাম বলেন, পিরোলী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ফোরকান মোল্লার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিষদের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। তদন্তের বিষয়ে কোন কিছু বলতে চাননি। তবে ৮০ ভাগ তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।