ইতি, রাষ্ট্র আমাকে ভদ্র করে গড়ে তুলবে কী?

6
6
ইতি, রাষ্ট্র আমাকে ভদ্র করে গড়ে তুলবে কী?
গঠনমূলক আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা

মীর আব্দুল গণি, জার্মানি প্রবাসী

বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন পরিস্থিতি

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে হলে বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষাঙ্গন নিয়েও আলোচনা একান্ত জরুরি। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহই সমাজ-রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে নাগরিক সমাজের মানসপটে অভিন্ন জাতীয়তাবোধের উন্মেষ সাধনের গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকে। এবং জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিক শিক্ষার্থীদের মানসপটে সুনাগরিক আচরণের গুণাবলিসমূহের উন্মেষ ঘটায়।

দুঃখজনক হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি সত্য, শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের আচরণ গঠনের কোনো প্রক্রিয়াই গৃহীত হয় না। উপরন্তু জাতির বিবেক
শিক্ষক সমাজ পেশাগত জীবনে প্রকাশ্য রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে তারা সামগ্রিকতার বাইরে ক্ষুদ্র দলীয় বিবেকে পরিণত হন। ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মানসপটে সামগ্রিক জাতীয়তাবোধ ও সুনাগরিকের গুণাবলিসম্পন্ন আচরণের উন্মেষ ঘটাতে ব্যর্থ হন।

বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে বর্তমানে যা প্রকটভাবে বিদ্যমান, এতে সমাজ-রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে এবং নষ্ট হচ্ছে প্রজন্ম ও তার ভবিষ্যৎ।
জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলসমূহের উচিত জাতিকে বিভক্তিকরণ থেকে মুক্ত রাখার জন্য ছাত্র ও শিক্ষক সমাজকে প্রকাশ্য দলীয় রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ ও প্রলুব্ধ না করা। আমাদের বুঝতে হবে কিছু লোকের সমবেত অবিবেচ্য সিদ্ধান্ত জাতীয় সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে কোনো উন্নত দেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ প্রকাশ্যে কোনো দলীয় রাজনীতি করেন না। সে কারণে তাদের দেশ পরিচালনায় সুনেতৃত্বের কোনোই অভাব দেখা দেয় না। তাদের না হলে বাংলাদেশের কেন অভাব হবে?

যুগোপযোগী ও সুপরিকল্পিত ‘শিক্ষাদান-ব্যবস্থা’ গ্রহণে করণীয়

পরিকল্পনা হলো কিছু লোকের সমবেত বিজ্ঞতা।
বাংলাদেশের জন্য ঠিক হবে বিশিষ্ট কয়েকজন শিক্ষাবিদকে জার্মানি বা কোনো উন্নত দেশের শিক্ষাদান ব্যবস্থার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দিয়ে তাঁদের দ্বারা একটি উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার হুবহু অনুকরণে- কিন্ডারগার্টেন হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদান ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। যার কোনো বিকল্প নেই। (বিশেষ জ্ঞাতির জন্য উল্লেখ করতে হয় অনেকেই উন্নত দেশে আসেন উচ্চতর ডিগ্রি বা কোনো বিষয়ভিত্তিক বিশেষ জ্ঞানার্জনের জন্য। উন্নত দেশে শিক্ষার উক্ত পর্যায়ে পৌঁছার বহু পূর্বেই ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষাসমূহ সম্পন্ন হয়ে থাকে। যে কারণে তাদের পক্ষে শিক্ষা শুরুর প্রক্রিয়া এবং মৌলিক শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও কৌশল জানা সম্ভব হয় না। উক্ত কারণেই শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের উল্লেখ করা হয়েছে।)

বর্তমানে করণীয়

বাংলাদেশের বর্তমান অবকাঠামোগত প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়েই প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদান ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। বাংলাদেশের গ্রাম ভিত্তিক অবকাঠামো প্রতিকূল এমন মনে করে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই। এলাকাভিত্তিক এলাকার লোকদের দ্বারা উন্নত বিশ্বের কিন্ডারগার্টেনের ন্যায় শিশুদের যত্ন ও লালন-পালনের এবং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন এবং সম্ভবও। (বাংলাদেশের বর্তমান কিন্ডারগার্টেনের আদলে অবশ্যই নয়।)

সবাই জানি, গ্রামের মানুষ এখন বেশ সচেতন। ভালোকে গ্রহণে তারা বেশ আগ্রহী। প্রয়োজন শুধু ঠিকভাবে তাদের কাছে উপস্থাপন করা এবং ঠিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত করা।

উক্ত ক্ষেত্রে গ্রামে অবস্থানরত লেখাপড়া জানা ছেলে-মেয়েদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দায়িত্ব দিলে সুফল পাওয়া অবশ্যই সম্ভব। যদি কিন্ডারগার্টেন হতে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুপরিকল্পিতভাবে প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদান ব্যবস্থার আওতাধীন পরিচালিত করা হয় তবে একপুরুষ কাল সময়েই আমাদের কাঙ্খিত সমাজ-রাষ্ট্র গড়ে তুলা সম্ভব।

আর্থিক সংস্থান

সবাই অবগত আছেন যে, কিন্ডারগার্টেনে বা স্কুলে ছেলে-মেয়ে পড়াতে বাবা-মা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকেন। সামর্থ্যবান বাবা-মা গ্রামেও আছেন। তাঁদেরকে জাতীয় স্বার্থে সম্পৃক্ত করলে আর্থিক সমস্যার সমাধান সহজ হবে। অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীর জন্য সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে।

আলোচনার এ পর্যায়ে প্রক্রিয়াজাত ও প্রক্রিয়াহীন শিক্ষাব্যবস্থায় বেড়ে ওঠা দুটি ধারার নাগরিক আচরণ কত ভিন্নতর হতে পারে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সেই চিত্র সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করব। যেমন- (১) প্রক্রিয়াজাত শিক্ষা ব্যাবস্থায় বেড়ে ওঠা নাগরিক আচরণ। (২) প্রক্রিয়াহীন শিক্ষাপ্রাপ্ত (লেখাপড়া শেখা) নাগরিক আচরণ।

উল্লিখিত প্রেক্ষাপট দুটি বুঝতে হলে প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে- কাঙ্খিত নাগরিক আচরণের বৈশিষ্ট্য কী?
মনে করি কাঙ্খিত নাগরিক আচরণের বৈশিষ্ট্য হলো-
(ক) কর্তব্যবোধ,
(খ) অধিকারবোধ
(গ) শৃঙ্খলাবোধ।

প্রেক্ষাপট- (১) প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাপ্রাপ্ত নাগরিক সমাজঃ প্রক্রিয়াজাত শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তির কর্তব্য বোধের উদাহরণ বহু দেওয়া যায়, লেখার কলেবর ছোট রাখার অভিপ্রায়ে এক-দুটি বিষয় সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

জার্মানিতে এসে জানতে পারলাম কর্মী কাজ হারালে পূর্ব কাজের বেতনের একটা অংশ ভাতা হিসাবে পেয়ে থাকেন। জিজ্ঞাসা করে জানলাম আমিও পেতে পারি। স্বদেশী না বিদেশি, জার্মানিতে না বিদেশে কাজ করেছে বিবেচ্য নয়। বাংলাদেশ থেকে কাগজ নিয়ে এসে জমা দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে মাসিক ভাতার মঞ্জুরি পত্র পেলাম।

দপ্তর থেকে বলা হয় সাধারণত দুই থেকে আট সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হতে পারে। কাজ না পাওয়া পর্যন্ত আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ এসে জমা হতো। (লেখাটি সংক্ষিপ্ত রাখার জন্য উক্ত ঘটনায় মানুষের প্রতি মানুষের সম্মান প্রদর্শনের অপূর্ব বর্ণনা তুলে ধরা হতে বিরত থাকলাম।) উক্ত ক্ষেত্রে প্রদান ও প্রাপ্তি হলো ক ও খ। (কাঙ্খিত নাগরিক আচরণ)

সংক্ষেপে অপর একটি বাস্তব ঘটনা- নির্দিষ্ট দিন সময়ে আমাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেট অফিসে গিয়ে ভিসা নিতে হতো। তেমনি একদিন লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, সম্মুখে একজন জার্মান, সূত্র উল্লেখ করে তার কাগজ চাইলেন। ম্যাজিস্ট্রেট বললেন তার কাজ সম্পন্ন হয় নি। ভদ্রলোক জানতে চাইলেন কেন হয় নি? ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, কয়েক দিন বহু কাজ করতে হয়েছে সেজন্য হয় নি। জার্মানরা সাধারণত রেগে এবং উচ্চস্বরে কথা বলেন না। কিন্তু ভদ্রলোক রেগে এবং উচ্চ কণ্ঠে বললেন, আমার কাজই করেন নি, তা হলে আপনি কী অনেক কাজ করেছেন? ম্যাজিস্ট্রেট কোনো কথা না বলে ভিতরে গেলেন, কিছুসময় পর এসে তার
কাজগগুলো বুঝিয়ে দিলেন।

উক্ত ক্ষেত্রে প্রশ্নটি হলো- (খ) অধিকার; কাজটি সম্পন্ন করে দেওয়া হলো- (ক) কর্তব্যবোধ ও (গ) শৃঙ্খলাবোধ

দীর্ঘ ২০ বছর প্রতিদিন যে রাস্তা দিয়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করতাম সে রাস্তায় অসংখ্য গাড়ি চলাচল করে এবং গতিবেগ ঘণ্টায় ৭০/১০০ কি.মি.। বিশেষত্ব হলো রাস্তার এক পাশে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের বিরাট স্কুল ও কর্মস্থল। দুই পাশেই বাস স্টপেজ যেটা তারা ব্যবহার করে। কিন্তু কাউকে একদিনও ট্রাফিক সিগনাল ভঙ্গ করে রাস্তা পার হতে দেখিনি। প্রতিটি লোকালয়ের আশেপাশে বিরাট পার্কের মতো সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে যেখানে হাঁটা, দৌড়ানো ও বসা যায় এবং শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে, চারপাশ দিয়েই গাড়ি চলাচলের রাস্তা। কিন্তু কোনোদিনই দেখলাম না শিশুরা দৌড়িয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। এমনকি এ দেশীয়দের প্রিয় প্রাণী কুকুর পার্কের ভিতর ছুটাছুটি করলেও রাস্তায় নেমে এসে কখনো দুর্ঘটনার কারণ হতে দেখা যায়নি। সেজন্য অবশ্য মালিক ধৈর্যসহ ঐ প্রাণীটিকে রাস্তা পারাপারের ব্যাপারে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। (নাগরিকের উক্ত রূপ আচরণমূলত শিক্ষার গুণগত মানসম্পন্ন আচরণ। প্রক্রিয়াজাত শিক্ষা উক্ত রূপ আচরণে সক্ষম করে তোলে।)

প্রেক্ষাপটঃ (২) প্রক্রিয়াহীন শিক্ষাব্যবস্থায় বেড়ে ওঠা (লেখাপড়া শেখা) নাগরিক আচরণ

প্রক্রিয়াহীন শিক্ষাব্যবস্থায় বেড়ে উঠা (শুধু লেখাপড়া শেখা) নাগরিক আচরণের বৈশিষ্ট্য হলো মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধহীন আচরণ। সমাজ-রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে তাদের সে আচরণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি ঘটনা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরব- স্বামীর পেনশনের টাকা পাওয়ার অপেক্ষায় ৩৯ বছর ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বৃদ্ধ নেকজান বেওয়া। (এমনতর মানবতাবোধ অরণ্যেও দুষ্প্রাপ্য-জনকণ্ঠ, ৫ জুন, ২০১২।) কর্তব্যবোধ আছে কি?

সর্বস্তরে দুর্নীতি। আগে ছিল পুকুর চুরি, এখন বিল ও হৃদ চুরি, নদী চুরি ও সমুদ্র চুরি চলছে। দুর্নীতি রাষ্ট্রীয় কেনাকাটায়, পুলিশ যদি ধরে তাহলে টাকা, যদি ছাড়ে তাহলেও টাকা। নিয়োগের জন্য টাকা, বদলির জন্য টাকা। আর আছে জবরদখল। সরকারি জমি তো দখল হবেই, যেকোনো মানুষের জমি দখল করেও টাকা নেওয়া যেতে পারে। প্রথম আলো, ৫ জুন ২০১২, জনাব আনিসুল হক সাহিত্যিক, সাংবাদিক কর্তৃক ‘অরণ্যে রোদন পুকুর চুরি, বিল চুরি, নদী চুরি লেখাটি হতে অতি ক্ষুদ্রাংশ এখানে তুলে ধরলাম।

দুটি দৈনিকে উল্লিখিত নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধহীন নিদারুণ আচরণ যাদের, তাদের লেখা পড়া বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা যত উচ্চই হোক, প্রক্রিয়াহীন শিক্ষাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের ব্যক্তি সত্তায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হতে পারেনি। যে কারণে তাদের আচরণে ক, খ ও গ সব কয়টি বৈশিষ্ট্যই অনুপস্থিত।

শাসন-পালন ব্যবস্থা

শাসন-পালন ব্যবস্থা হলো মূলত সমাজ-রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থা। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে মানুষ মূলত স্বেচ্ছাচারী প্রাণী। স্বেচ্ছাচারী প্রাণীকে প্রথমে ঠিকভাবে শিক্ষা দিতে হয় এবং তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় রাখতে হয় নতুবা সে তার স্বেচ্ছাচারী মানসিকতায় বশীভূত হয়ে শিক্ষার্জিত আচরণ ভুলে যায় বা পরিহার করে।

ফলে শিক্ষাদানের পরও তাকে বাধ্য বা অনুগত রাখার ব্যবস্থা রাখতে হয়। প্রাণী সত্তা বা ব্যক্তিকে দুই প্রকারে অনুগত রাখা যায়- ১। পুরস্কার দ্বারা ও ২। তিরস্কার দ্বারা। অর্থাৎ প্রলোভন ও প্রহারে।

উপমা- যাঁরা সার্কাসে ঘোড়ার ক্রীড়া প্রদর্শন দেখেছেন তাঁরা নিশ্চয় লক্ষ করেছেন ক্রিড়া প্রদর্শনরত ঘোড়াটির নিয়ন্ত্রণকারীর এক হাতে রয়েছে একটি চাবুক অন্য হাতে বা পকেটে রেখেছেন ঘোড়াটির জন্য কিছু সুস্বাদু খাবার। খাবার প্রদান হলো তাকে প্রলুব্ধ করা, চাবুকের ঈশারা হলো ভয় দেখানো ও প্রয়োজনে প্রহার করা। ঘোড়াটিকে যতই শিক্ষা দেওয়া হোক না কেন, খাবার প্রলোভন ও চাবুক ছাড়া ক্রীড়া প্রদর্শন সম্ভব হবে কি? হবে না।

অপরদিকে শিক্ষা না দিয়ে প্রলোভন বা প্রহার করেও কোনো কাঙ্খিত ফল প্রাপ্তি সম্ভব নয়। প্রথমে শিক্ষা অত:পর উক্ত উভয়বিধ প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছাচারীকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ধাবিত করার অর্থই হলো কাঙ্খিত আচরণে অনুগত রাখা। রাষ্ট্রে ব্যক্তি সমষ্টিকে শিক্ষা দিয়ে শুধু আচরণে সক্ষম করে তুললেই হবে না, অনুগত ও বাধ্য রাখার জন্য পুরস্কার ও তিরস্কারের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতেই হবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যবস্থা হতে হবে যথাযথ ন্যায়ভিত্তিক ও প্রয়োগমুখী।

উপসংহারঃ শিক্ষার উদ্দেশ্য, প্রয়োজন, শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া ও উপাদানসমূহ প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত ও বিশ্লেষণমূলক আমরা যে আলোচনা করেছি তা থেকে কিছু সিদ্ধান্ত শিক্ষাব্যবস্থায় গ্রহণ অনিবার্য। যেমন-
১। বেশকিছু বিষয় আছে যা সবাইকে শিখতে হয় এবং শিক্ষা দিতে হয়।
সে বিষয়সমূহের শিক্ষাকে বলা হয় সার্বজনীন বা ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষা।
২। ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষার সম্ভাব্য বিষয়সমূহ নির্ধারণ করে শিক্ষাদান
প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে অতি যতেœর সাথে শিক্ষাদান নিশ্চিত করতে হয়।
৩। শিক্ষাদান ব্যবস্থায় শিক্ষার উপাদানসমূহের যথাযথ সমন্বয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
৪। শিক্ষা শুধু সাক্ষরতা অর্জন করা বা দান করা বুঝায় না।
৫। শিক্ষার শেষ না থাকলেও সকল বিষয়ের শিক্ষা সবার জন্য প্রয়োজন নেই।

আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে উন্নত জাতির প্রয়াস ও কৌশল উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা যদি ধারণা করি উন্নত জাতির সামর্থ্য বা সক্ষমতা আছে। ফলে তাদের পক্ষে যেটা সম্ভব সবার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়- উক্তরূপ ধারণা ঠিক নয়।

বর্তমান উন্নত জাতির অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট দেখা যায়- ব্যক্তি মানুষকে সুশিক্ষায় তথা মানুষের মানবিক ও নীতিনৈতিকতায় সমৃদ্ধ
করে তোলার নির্ভুল শিক্ষাদানের ফলেই তারা বর্তমান উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

জাতিগতভাবে উন্নত হতে চাইলে যার কোনোই বিকল্প নেই। কারণ জাতির সর্বক্ষেত্রে উন্নতির সাধক বা রক্ষক হলেন ব্যক্তি মানুষ। এবং ব্যক্তি মানুষকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলেই জাতি উন্নত হয়।

এ পর্যায়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রচার বাণী উল্লেখ করব- আসুন, “আমরা তাদের তৈরি করে দেই, তাদের ভবিষ্যৎ তারাই তৈরি করে নেবে।” (“We will make them and they will make their future.”) (দুঃখিত জানি না উক্ত বাণীটি কার।) শেষ করছি চীনের প্রখ্যাত দার্শনিক কনফুসিয়াসের বিখ্যাত উক্তিটি দিয়ে- “মানুষ ভদ্র হয়ে জন্মায় না, ভদ্র হতে হয়।” আমি শুধু সাক্ষরতা বা লেখাপড়াই শিখতে চাই না, ভদ্রও হতে চাই। কীভাবে ভদ্র হতে হয় তা আমার পরিবার ও আমি জানি না। রাষ্ট্র আমাকে ভদ্র করে গড়ে তুলবে কী? পূর্বলেখা-

প্রসঙ্গ বই পড়া