বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী ৫ সেপ্টেম্বর

2
3

নিজস্ব প্রতিবেদক

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে শাহাদাতবরণ করেন তিনি। এদিন পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীকে প্রতিরোধ এবং দলীয় সঙ্গীদের জীবন ও অস্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুরে তাকে সমাহিত করা হয়। তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নূর মোহাম্মদ। ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে ‘নূর মোহাম্মদ নগর’ করা হয়। সেই থেকে উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে ‘নূর মোহাম্মদ নগর’। এই বীরশ্রেষ্ঠের স্মরণে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে-‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’, ‘স্মৃতিস্তম্ভ’, ‘স্টেডিয়াম’, ‘স্কুল, কলেজ’ এবং সন্তানদের জন্য বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল (অব:) আবু ওসমান চৌধুরী ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন। সেই থেকে শুরু হয়েছে নূর মোহাম্মদ নগরের কার্যক্রম। এতে খুশি এলাকাবাসী।

এদিকে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো বিস্তারে ভূমিকা রাখছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের নামে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজটি। ২০১০ সালে স্কুলটি নি¤œ-মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভূক্ত হলেও কলেজটি এখনো এমপিওভূক্ত হয়নি। তবে স্কুল ও কলেজে নতুন ভবন নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ চলছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর দাবি, কলেজটি দ্রুত এমপিওভূক্ত করা হোক।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে নূর মোহাম্মদ ট্রাস্ট ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নূর মোহাম্মদ নগরে আজ সকালে কোরআনখানি, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, পুলিশ কর্তৃক সশস্ত্র সালাম এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্মৃতি সংরক্ষণসহ কলেজটি এমপিওভূক্তকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের জীবনীঃ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা, মতান্তরে জেন্নাতা খানম। বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারান তিনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তার দুই স্ত্রীর কেউই বেঁচে নেই। বর্তমানে এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

নূর মোহাম্মদ শেখের জীবনী থেকে জানা যায়, ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন। বর্তমানে ‘বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ’ (বিজিবি)। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করার পরে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন তিনি। ল্যান্স নায়েকে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব:) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এস এ মঞ্জুর। নূর মোহাম্মদ যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নের্তৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ শত্রুমুক্ত করেন।

১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এদিন পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও হাতে এলএমজি এবং আহত নান্নুকে কাঁধে নিয়ে শত্রু পক্ষের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকেন নূর মোহাম্মদ। হঠাৎ পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে তার হাঁটু ভেঙ্গে যায়। তবুও গুলি চালাতে থাকেন তিনি। এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নূর মোহাম্মদ শেখ। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত হন তিনি।

এদিকে, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের দ্বিতীয় স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। এর অনেক আগেই মারা গেছেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের প্রথম স্ত্রী।