নড়াইলে অপরিকল্পিত মাছের ঘের, এলাকায় উত্তেজনা

7
8
নড়াইলে অপরিকল্পিত মাছের ঘের, এলাকায় উত্তেজনা
নড়াইলে অপরিকল্পিত মাছের ঘের, এলাকায় উত্তেজনা

শামীমূল ইসলাম

নড়াইলের আন্দারকোটা বিলে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের কাটায় প্রায় ১ হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গোটা বিলে এখন পানি আর পানি। দেখে মনে হচ্ছে এ যেন সাগর। এ পানি বের হতে না পারায় ফসল বিনষ্টের আশংকা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বুধবার (২৩ জুন) বিভিন্ন স্থানে ঘেরের ৪টি মুখ কেটে দিলেও প্রভাবশালী ঘের মালিক মিন্টু মিয়া বৃহস্পতিবার জোরপূর্বক ২টি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, নড়াইল সদর, লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা ও কাশিপুর ইউনিয়ন, সদরের বাঁশগ্রাম এবং ও কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়নের মাঝখানে মাছের অভয়াশ্রম বলে খ্যাত আন্ধারকোটা বিল। গত ১ বছর পূর্বে সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কামাল প্রতাপ গ্রামের এনায়েত কাজী ১৫ একর, পার্শ্ববর্তী লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামের কামরুল খান ৪০ একর এবং কামঠানা গ্রামের মিন্টু মিয়া ৭৫ একর জমিতে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের কাটে। সে সময় স্থানীয় অনেক জমির মালিক ও কৃষকরা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানান, তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে, জমির টাকা না দিয়ে এবং অপরিকল্পিতভাবে এসব ঘের কাটা হয়েছে। তখন প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত করে অভিযুক্ত তিন ঘের মালিককে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তারা আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার ঘেরের কাজ শুরু করে।

জানা যায়, বর্ষকালে বৃষ্টি হলে এসব বিলের পানি স্থানীয় হাজরাখালী বিল দিয়ে বের হয়ে লাইনের খাল হয়ে নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বিলের পানি সরতে না পারায় সমগ্র বিলে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর থেকে মুক্তি পেতে ভূক্তভোগিরা ১শ৩০ একর বিশাল ঘেরের বিভিন্ন স্থানের ৪টি মুখ কেটে দেয়। এ সময় আমাদা গ্রামে ঘেরের মালিক বাঁধা দিতে আসলে তাদের সাথে ভূক্তভোগি জমির মালিকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
ভূক্তভোগি জমির মালিক সদরের কামাল প্রতাপ গ্রামের সাবেক মেম্বর ইমরুল শেখ, ইনজাহের কাজী, লোহাগড়ার অমাদা গ্রামের মুকুল শেখ, জামাল শেখ, হামারোল গ্রামের হান্নান শেখ জানান, ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের কারো ফসল নষ্ট করে, কাওকে না জানিয়ে কারও জমিতে জোরপূর্বক ঘের কাটা হয়েছে। আবার এমনভাবে ঘের কাটা হয়েছে তাতে জমিতে যাওয়ারও কোনো পথ নেই। অপরিকল্পিতভাবে মোছের ঘের কাটায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বিস্তির্ণ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তাদের আউস, আমন এবং পাট পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া শীতকালেও জমিতে পানি জমে থাকায় এবার ঠিকমতো বোরা আবাদও করতে পারেননি। তারা জানান, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় সংঘর্ষ বাঁধতে পারে। বুধবার পুলিশ আসলেও বর্তমানে কোনো পুলিশ এলাকায় নেই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ঘের মালিক মিন্টু মিয়া জানান, গ্রামের কয়েকজন ঘেরের মুখ কেটে দিয়ে তার অনেক টাকার মাছ বেসে গেছে। আন্দারকোটা বিলের জলাবদ্ধতার জন্য আরও অনেক প্রভাবশালীর ঘের রয়েছে তারাই বেশী দায়ী।

নড়াইল পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় জানান, বিষয়টি জানার পর পুলিশ সেখানে গিয়েছে এবং খোঁজ-খবর রাখছে। যাতে কোনো গোলমাল না হয় সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত বলে দাবি করেন।