জাতির জনকের নড়াইলে আগমন ও কিছু স্মৃতিকথা

3
61

মোঃ আলমগীর সিদ্দিকী (আইনজীবী)

সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে তিনি সারাজীবন আপোষহীন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। ১৯৪০ সালের পূর্ব হতে বিরামহীন সংগ্রাম শুরু করে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর নির্বাচন, ৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন অবশেষে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র জাতিকে নিয়ে তিনি বাঙ্গালী জাতিকে একটি মানচিত্র এনে দিয়েছেন। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু অনেকবার নড়াইলে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেমন নড়াইলে এসেছেন তেমন আত্মীয়তার সূত্র ধরেও তিনি নড়াইলে আগমন করেছেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রহমান এর নড়াইলে আগমন সম্পর্কে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. সুবাস চন্দ্র বোস, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের তৎকালীন ভি.পি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. ফজলুর রহমান জিন্নাহ, নড়াইল মহকুমা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ুন কবীর সহ অনেকের সাথে আলাপকালে বঙ্গবন্ধুর নড়াইলে রাজনৈতিক আগমন ও বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে স্মৃতিকথা ব্যক্ত করেছেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আনুমানিক জুলাই মাসে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে জনসভার আয়োজন করা হয়। তখন শ্রাবণ মাস ছিল। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু উক্তদিনে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই নড়াইলে তৎকালীন ডাকবাংলো বর্তমানে জেলা পরিষদের যে ডাকবাংলোটি আছে ঐখানে অবস্থান নেন। খুলনা হতে কেক আনা হয়। ডাকবাংলাতে কেক কাটা হয়।জনাব জিন্নাহ জানান বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ছাত্রনেতা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভি.পি ফজলুর রহমান জিন্নাহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দের মুখে, মাথায় হাত দিয়ে আদর করেন। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগের সংগঠনের জন্য তখন তিনি ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন। জনসভাস্থলে যখন বঙ্গবন্ধু উপস্থিত হন তখন প্রচ- আকারে বৃষ্টি হচ্ছিল। এতদসত্ত্বেও মাঠে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সম্পূর্ণ মাঠ কালো ছাতাতে ছেয়ে যায়।

যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু নড়াইল অপর এক জনসভার জন্য নড়াইলে আসেন। তৎকালীন স্থানীয় প্রশাসন নড়াইল পৌরসভায় মিটিং করতে দেয় নাই। তখন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ শাহাবাদ ইউনিয়নের নয়নপুর স্কুল মাঠে জনসভার আয়োজন করেন।

বঙ্গবন্ধুর ফুফুবাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার কামালপ্রতাপ গ্রামে। ফুফার নাম কাজী আবুল হায়াত। ফুফুর নাম শেখ হায়াতুন নেছা। বঙ্গবন্ধু ১৯৪০ সালে ফুফু বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। তিনি স্থানীয় স্কুল মাঠে সমবয়সীদের সাথে ফুটবল খেলেছেন বলে স্থানীয়ভাবে জানা যায়। নড়াইল পৌরসভার ভওয়াখালী গ্রামের গফফার মোল্যা বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুকে ১৯৫৪ সালে রূপগঞ্জ লঞ্চঘাট হতে লোকজন নিয়ে বাজারের মধ্যে হেঁটে যেতে দেখেছি। কৌতুহলী হয়ে আমি পিছন পিছন গিয়েছিলাম।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাত্তোরকালে ১৯৭৩ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার সপক্ষে জনসভা করতে এসেছিলেন। স্থান ছিল নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণ। তখন কাছে থেকে ও দূর থেকে অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। জনসভার মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর সাথে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ্যাড. খন্দকার আব্দুল হাফিজ, এ্যাড. আফসার উদ্দিন (মুক্তার), লেঃ মতিউর রহমান , এখলাছউদ্দিন আহম্মেদ এ্যাড. বজলার রহমান প্রমুখ। নড়া ইল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এাডঃ সুবাস চন্দ্র বসু বলেন ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর পা ছুয়ে সালাম করার সুযোগ পেয়েছিলাম। নড়া ইল জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি এ্যাডঃ গোলাম নবী, সাবেক সাধরন সম্পাদক এ্যাডঃ সিদ্দিক আহম্মেদ, সাবেক সাধরন সম্পাদক এ্যাডঃ সৈয়দ মোহম্মদ আলী বলেন ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নড়াইল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে যে জনসভা হয়েছিল উক্ত মঞ্চে উক্ত নেত্রীবৃন্দ উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধুকে মালা দিয়েছিলেন ।

জনাব শরীফ হুমায়ুন কবির স্মৃতিচারণকালে বলেন, জাতির জনক ৬৯ সালে গণআন্দোলনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় মুক্ত হওয়ার পর যশোর সার্কিট হাউজ মাঠে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি নড়াইল মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি। সেই সুবাদে তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে মতবিনিময় করেছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের আনুমানিক জুলাই মাসে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যে জনসভা হয়েছিল উক্ত জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ছবি বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস.এম. সুলতানকে দিয়ে অঙ্কন করে ফ্রেম দিয়ে বাঁধাই করে বঙ্গবন্ধুর হাতে মঞ্চে দিয়েছিলেন। জনাব ফজলুর রহমান জিন্নাহ স্মৃতিকথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, তৎকালীন ডাকবাংলোয় তার মাথা ভিজে গিয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু তাঁর রুমাল দিয়ে মাথা মুছে দেন ও তাঁর ব্যাবহৃত রুমালটি জনাব জিন্নাহকে উপহার দিয়েছিলেন। জনাব জিন্নাহ বলেন, ১৯৭২ সালে তৎকালীন জাসদ- এর হাতে তিনি আহত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সাথে গণভবনে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

জাতির জনক ছাত্রজীবন থেকে মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেগেছেন। বাঙ্গালীজাতরি মুক্তির জন্য জীবনের অধিকাংশ সময় তাঁকে কারাগারে আটক থাকতে হয়েছে। পরিবারকে তিনি সময় দিতে পারতেন না। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু দীর্ঘদিন কারাভোগের পর যখন মুক্ত হয়ে বাড়ীতে আসেন তখন পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে গেলে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে ( এই প্রথম বাবাকে দেখল ) শেখ কামাল তাঁর বড়বোন বর্তমান প্রধান মন্ত্রীকে বলছেন ” হাচু আপা , হাচু আপা তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি ডাকব ”। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য আপোষহীন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি চাইতেন বৈষম্যহীন অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, অসাম্প্রদায়িক মননসমৃদ্ধ আলোকিত সমাজ বিনির্মাণ।

জাতির জনকের শতবর্ষে আমাদের কামনা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনকের রেখে যাওয়া নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশ আজ বিশ্বদরবারে মাথাউচু করে দাড়িয়েছে । তাই মুজিববর্ষে আমাদের প্রার্থনা জাতির জনক সকল শহীদ , মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম ও আমাদের প্রাণপ্রীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহ যেন সুস্থ, দীর্ঘয়ায়ু এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা করেন।