মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহ নির্ধারণের উপায় ও গুরুত্ব

3
1605
গঠনমূলক আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাঃ ব্যক্তিকে শিক্ষাদান করবে কে? পরিবার, না রাষ্ট্র?
গঠনমূলক আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাঃ ব্যক্তিকে শিক্ষাদান করবে কে? পরিবার, না রাষ্ট্র?

মীর আব্দুল গণি, জার্মানি প্রবাসী

মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহ নির্ধারণের উপায় (পদ্ধতি) হলো ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডল গড়ে ওঠার উপাদানসমূহকে চিহ্নিত করে তার অবস্থানগত গুরুত্ব নির্ধারণ করা। কারণ পরিমণ্ডল গড়ে ওঠার প্রতিটি উপাদানের অবস্থানগত অপরিহার্য গুরুত্ব (বৈশিষ্ট্যগত তাগিদ) রয়েছে যা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- ঐ সকল উপাদানসমূহ ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষার বিষয়রূপে গুরুত্ব বহন করে।

একটি উপমার সাহায্যে পরিমণ্ডল গড়ে ওঠার উপাদানসমূহ কেন মৌলিক শিক্ষার বিষয়রূপে গুরুত্ব বহন করে তা তুলে ধরা যায়। উপমাঃ যদি প্রশ্ন করা হয়- সেনাবাহিনীর পরিমণ্ডল গড়ে ওঠার উপাদানসমূহ কী কী? সেনাবাহিনীর পরিমণ্ডল গড়ে ওঠার উপাদানসমূহ অন্বেষণ করলে দেখা যায়- ব্যক্তি, সমরাস্ত্র ও সেনাবাহিনীর নিজস্ব নীতি। (স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগত সৃষ্ট তাগিদ, পরিমণ্ডলের ক্ষেত্র (ভূমি) ব্যক্তির বিচরণ ক্ষেত্রে আলোচ্য।)

সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী গড়ে তোলার জন্য উক্ত উপাদানসমূহের কোনো একটি পরিহার বা অবহেলা করার অবকাশ থাকে না। ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডল গড়ে ওঠার উপাদানসমূহের অপরিহার্যতা ও তার অবস্থানগত গুরুত্ব (স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগতসৃষ্ট তাগিদ) বিবেচনার নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- রাষ্ট্রের মূল উপাদান হলো ব্যক্তিসত্তা।

মূলত ব্যক্তির অস্তিত্বকে কেন্দ্র করেই রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডল গড়ে ওঠে। ব্যক্তির অস্তিত্বহীনতা মূলত সকলই শূন্য। অতএব, (১) ব্যক্তির অস্তিত্বের নিশ্চয়তা বিধান করে তেমন বিষয়সমূহের শিক্ষা অবশ্যই ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষার বিষয় বা শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে হবে।

(২) রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে যে বিষয়সমূহকে অবলম্বন করে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক স্থাপিত হয় সেই বিষয়সমূহ সম্পাদনের শিক্ষা ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষার বিষয় ও শিক্ষার উদ্দেশ্য অবশ্যই হতে হবে গুরুত্ব বহণ করে। কারণ ঐ সকল বিষয়সমূহ সম্পাদনে ব্যক্তি সক্ষম না হলে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির কাঙক্ষিত সম্পর্ক গড়ে ওঠা সম্ভব নয়।

(৩) ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠে ও পরিচালিত হয় কিছু নীতি-নিয়মকে ভিত্তি করে। ঐ সকল নীতি-নিয়ম শিক্ষা অবশ্যই মৌলিক শিক্ষার বিষয় ও শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে হবে। কারণ নীতি-নিয়মসমূহ পালনে ব্যক্তি অক্ষম হলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কাঙক্ষিত ফল প্রাপ্তি সম্ভব নয়।

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডল গড়ে উঠার উপদানসমূহের অবস্থানগত অপরিহার্যতার (রাষ্ট্রের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগত-সৃষ্টতাগিদ) গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহ নিম্নরূপে নির্ধারণ করা যায়।

যেমন- ১। ব্যক্তির অস্তিত্ব রক্ষার শিক্ষা (ব্যক্তি সত্তার অস্তিত্বের নিশ্চয়তা দান করে তেমন বিষয়সমূহের শিক্ষা।) ২। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়গত সম্পদন সক্ষমতার শিক্ষা। (স্বতন্ত্র ও সমষ্টিগত জীবনে একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহের কাঙ্ক্ষিত সম্পাদন সক্ষমতার শিক্ষা।) ৩। রাষ্ট্রের নীতিগত আচরণশীলতার শিক্ষা।

রাষ্ট্রের নীতিগত আচরণশীলতা- রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে আমরা নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে থাকি। আলোচনায় উল্লেখিত মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহের উপাদানগত বৈশিষ্ট্য ও তার গুরুত্ব পর্যালোচনা করলেই মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহ বাধ্যতা-মূলক হওয়ার কারণ সহজেই বুঝা যাবে।

মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহের গুরুত্বঃ

১। ব্যক্তির অস্তিত্ব রক্ষার শিক্ষা ব্যক্তির অস্তিত্বহীন মূলত সকলই শূন্য। ফলে ব্যক্তির বিরচণ ক্ষেত্রে অস্তিত্ব রক্ষার শিক্ষা অবশ্যই তাকে শিখতে হবে ও শিক্ষা দিতে হবে। কারণ ব্যক্তি বিচরণশীল। কর্ম বা জীবন-জীবিকার তাগিদে তাকে বিচরণশীল হতে হয়। কিন্তু সম্ভাব্য বিচরণ ক্ষেত্রে (সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে যেমন- স্থল, নৌ ও বিমান) ব্যক্তি কী প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে পারে এবং সে সকল প্রতিকূলতায় নিজেকে কী উপায়ে রক্ষা করতে হয় তার তা জানা না থাকাই স্বাভাবিক। উক্ত কারণে সম্ভাব্য বিচরণ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রতিকূলতায় ব্যক্তির অস্তিত্ব রক্ষার উপায়সূহের শিক্ষা মৌলিক শিক্ষার গুরুত্ব বহন করে। (বাড়ি কেন্দ্রিয় উপমায় যেমন- দেখা যায় সাঁতার না জানলে নদী পার হতে নৌকা বা জাহাজ ডুবলে, শহরের পথ চলার নিয়ম না জানলে তাদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন।)

২। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সর্ম্পক স্থাপনের বিষয়গত সম্পাদন সক্ষমতার শিক্ষা রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক মূলত কোনো না কোনো বিষয়গত বা সেবাজাত কর্মকে কেন্দ্র করে। ফলে স্বতন্ত্র ও সমষ্টির প্রয়োজনেই সম্পাদিত কর্মটির একটি কাঙ্ক্ষিত মান অবশ্যই থাকতে হয়। উক্ত কারণে রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তি যে যে কাজে নিয়োজিত হবে বা হওয়ার প্রত্যাশি তার সেই সকল সম্পাদিত বিষয়ের কাঙক্ষিত মান প্রাপ্তির নিশ্চয়তার তাগিদই উক্ত বিষয়সমূহ সম্পাদনের শিক্ষা মৌলিক শিক্ষার গুরুত্ব বহন করে।

৩। রাষ্ট্রের নীতিগত আচরণশীলতার শিক্ষার প্রয়োজনিয়তা রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ব্যক্তি সমষ্টির কিছু নীতিগত আচরণকে ভিত্তি করে। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় যে নীতিগত আচরণকে আমরা নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে থাকি। দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিটি ব্যক্তি নিজে যথাযথ জ্ঞাত নিশ্চিত হওয়া মোটেই সম্ভব নয় বা প্রত্যাশা করাও সঠিক নয়। উক্ত কারণেই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত আচরণশীলতা শিক্ষা দেওয়া মৌলিক শিক্ষার বিষয় রূপে গুরুত্ব বহন করে।

উপরিউক্ত আলোচনায় শিক্ষা কী, শিক্ষা বলতে কী বুঝায়, মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহ কী এবং সে সকল নির্ধারণের উপায় ও কেন বাধ্যতামূলক হতে হবে তার গুরুত্ব বিশ্লেষণমূলক ও সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে। আলোচনার এক পর্যায়ে আমরা উল্লেখ করেছি ব্যক্তির মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণশীলতাই জাতি গড়ে তোলে। এবং উল্লেখ করেছি ব্যক্তি আচরণের মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহই হলো জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু উক্ত মূল্যবোধসমূহ কী বা তার বৈশিষ্ট্য কী তা উল্লেখ করা হয়নি।

এ পর্যায়ে জাতির মেরুদণ্ড তথা ব্যক্তি আচরণের মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ-সমূহ জানার চেষ্টা করব। অবশ্য প্রশ্ন উত্থাপিত হয় ব্যক্তি আচরণের মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহ ও তার বৈশিষ্ট্য জানার উপায় কী? (চলবে…) পূর্ব লেখাঃ

শিক্ষাদানে পরিবার পরিমণ্ডলের সক্ষ’মতা যাচাইঃ রাষ্ট্রের আকা’ঙ্ক্ষা পরিবার অনুধাবনে অক্ষ’ম!