নড়াইলের শতবর্ষী লোহাগড়া রাম নারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি এখন তাসের আড্ডাখানা!

44
122

স্টাফ রিপোর্টার

শতবর্ষী নড়াইলের লোহাগড়া রাম নারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি চলছে পকেট কমিটি দিয়ে। এছাড়া রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। সূত্রে জানা গেছে, ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ লাইব্রেরীতে প্রায় ১৫ হাজার বই রয়েছে। একটি ব্যাংকসহ ১৬টি দোকান থেকে প্রতিমাসে ভাড়া আসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় আর্থিক অনুদান আসে। সাধারণ ও আজীবন সদস্য সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। ১৭ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির দিয়ে পরিচালিত হয় লাইব্রেরিটি। কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ তিন বছর। পদাধিকার বলে এ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

অভিযোগ রয়েছে, গত ২৭ বছর ধরে সৈয়দ আকরাম আলী আখিদুল লাইব্রেরির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি তিন বছর পর কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হলে তিনি অতি গোপনে সাধারণ ও আজীবন সদস্যদের না জানিয়ে পছন্দের লোক নিয়ে ইচ্ছামত কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করেন। কার্যনির্বাহী কমিটির কেউ তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে পরবর্তী মেয়াদের কমিটি থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।

গত ৭ নভেম্বর লাইব্রেরির আজীবন সদস্য সলিমুল্লাহ পাপ্পু, মোল্যা মনিরুজ্জামান ও তাওহিদ শেখ লাইব্রেরি সভাপতি ও ইউএনও মুকুল কুমার মৈত্রের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, অধিকাংশ সাধারণ ও আজীবন সদস্যকে অবহিত না করে তড়িঘড়ি করে লাইব্রেরি তফসিল ঘোষণা করে কমিটি করা হচ্ছে।

আরো অভিযোগ রয়েছে, সম্পাদক লাইব্রেরি নামে আসা বিভিন্ন অনুদান কাওকে না জানিয়ে সংগ্রহ করেন এবং এসব অর্থ খরচের কোনো স্বচ্ছতা থাকে না। লাইব্রেরি হিসাবসহ সব কিছু সম্পাদক নিজের কাছে রাখেন। সাধারণ ও আজীবন সদস্যদের লাইব্রেরির হিসাব ও কোনো তথ্য জানানো হয় না। প্রায় দুই হাজার সদস্য থাকলেও কখনো সাধারণ সভা হয় না।

কয়েকজন আজীবন সদস্য জানান, সৈয়দ আকরাম আলী আখিদুল লাইব্রেরিকে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেন। লাইব্রেরিতে পাঠক টানার কোনো পদক্ষেপ নেই। বাইয়ের তালিকা ও ক্যাটালগ সংরক্ষণ না করায় পাঠকদের বই খুঁজতে সময় লাগে। বর্তমানে বইয়ের বদলে শুধু পত্রিকা পড়তে আসে ৩-৪ জন পাঠক। লাইব্রেরিতে চলে তাস খেলার আড্ডা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লাইব্রেরি চত্বর ময়লা-অবর্জনায় ঠাসা। চত্বরে যত্রতত্র রাখা লোহাগড়া বাজারের বিভিন্ন মালটানা গাড়ি। লাইব্রেরিতে প্রবেশ করাও দুঃ’সাধ্য। বোঝাই যায় না এটি একটি শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরি। অভিযুক্ত লাইব্রেরির সম্পাদক সৈয়দ আকরাম আলী আখিদুল অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি ১৯৯৩ সাল থেকে লাইব্রেরির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। কোনো অনিয়ম-দূর্নীতির প্রশ্নই আসেনা। প্রতিমাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ভাড়া আসে। এ খরচ যৌথ একাউন্টের মাধ্যমে তোলা এবং খরচ করা হয়। তফশিল নিয়ে আপত্তি থাকায় নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে ৩০ নভেম্বর করা হয়েছে বলে জানান। লাইব্রেরির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।