নড়াইলের লোহাগড়ায় মধুমতীর ভা’ঙন তিন গ্রামে ৬৯ বসতভিটা বি’লীন, ঝুঁ’কিতে আরো ১৫০

202
105

নিজস্ব প্রতিবেদক

নড়াইলের লোহাগড়ায় মধুমতীর ভা’ঙনে গত দুই মাসে বি’লীন হয়েছে অন্তত ৬৯টি বসতভিটা। উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের আমডাঙ্গা, আস্তাইল ও চরআড়িয়ারা গ্রামে এ ভাঙনে ঝুঁ’কিতে রয়েছে আরো অন্তত ১৫০ পরিবার। ভা’ঙনের তীব্রতায় বি’লীন হচ্ছে ফসলি জমি, গাছপালা ও সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

স্থানীয়রা জানান, গত তিন দশকে এ তিন গ্রামের শতকরা ৯৫ ভাগ পরিবার মধুমতীর ভা’ঙনের শি’কার হয়েছে। অধিকাংশ পরিবার ভা’ঙনের কবলে পড়েছে তিন-সাতবার পর্যন্ত। ফলে অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসতি গড়েছেন। যারা অন্যত্র যেতে পারেননি, তারা বার বার এ এলাকার মধ্যেই বসতি স্থানান্তরে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু ভা’ঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তারা আরো জানান, গত দুই মাস ধরে এ এলাকায় ভা’ঙন অব্যাহত আছে, যা ভ’য়াবহ রূপ নিয়েছে গত ১৫ দিনে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আমডাঙ্গা গ্রাম নদীতে ভে’ঙে তিনটি জনপদের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে দুটির নতুন নাম হয়েছে পারআমডাঙ্গা ও আস্তাইল-আমডাঙ্গা। বর্তমানে পারআমডাঙ্গা ও আস্তাইল-আমডাঙ্গা অংশে ভা’ঙন ভয়া’বহ রূপ নিয়েছে। অন্যদিকে আস্তাইল গ্রামের অধিকাংশ পরিবার নদীভা’ঙনের শি’কার হয়ে অপর পাড়ে বসতি গড়েছেন। নতুন এ অংশের নাম হয়েছে পারআস্তাইল। সেখানেও ভা’ঙন অব্যাহত রয়েছে। একইভাবে ভা’ঙনের শি’কার চরআড়িয়ারা গ্রামের অধিকাংশ পরিবার আমডাঙ্গার ভেতরের দিকে বসতি গড়েছেন। আবার অনেকে বসবাস করছেন চরআড়িয়ারা নদীর অপর পাড়ে। এ তিন গ্রামে বর্তমানে ভা’ঙনের হু’মকিতে রয়েছে অন্তত ১৫০ পরিবারের বসতবাড়ি, আস্তাইল গুচ্ছগ্রাম এবং আস্তাইল, আস্তাইল-আমডাঙ্গা ও পারআমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

জানা গেছে, চরআড়িয়ারা ও আমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চরআড়িয়ারা মাদ্রাসা এখন পর্যন্ত তিনবার নদীভা’ঙনের শি’কার হয়েছে। এছাড়া আমডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুইবার, আস্তাইল ও আস্তাইল-আমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একবার করে নদীতে ভে’ঙেছে। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মারা’ত্মকভাবে ব্যা’হত হচ্ছে।

এদিকে গত দুই মাসে পারআমডাঙ্গার জিরু শেখ, নকির শেখ, মনিরুল শেখ, হান্নান মোল্লা, সিফায়েত মোল্লা, বজলু ফকির, হামিদুল মোল্লা, নূরো মীর, লুত্ফার মোল্লা, ইতার শেখ, তাইজুল ফকির, গাজী শেখ, আবেদ শেখ, বিল্লাল শেখ, মাহমুদুল ফকির, চুন্নু শেখ, দেলবার শেখ, দরবেশ শেখ, দিদার শেখ, উলফাৎ শেখ, ওবায়দুল মোল্লা, ইমদাদ মোল্লা, নজিবুল ফকির, জুয়েল ফকির, ছোটন মোল্লা, পিকুল ফকির, মিলন শেখ, আরিফুল শেখ, রিপন মোল্লা, মোস্তাকিন, হাকিম মোল্লা, ছোরাপ শেখ, রিপন শেখ ও দুখু মোল্লার বাড়ি নদীতে চলে গেছে।

বি’লীন হয়েছে আস্তাইল-আমডাঙ্গা গ্রামের মান্নান সরদার, লুত্ফার সরদার, দৌলত আলী, লুত্ফার আলী, ছুরোত আলী, আরবান সরদার, আকিদুল শেখ, আমির মোল্লা, টুনু শেখ, আরিফ ঠাকুর, তারিফ ঠাকুর, ছোরাপ সরদার, আকবর সরদার, জাকির সরদার, কাদের সরদার, মমিনুল মোল্লা, আমিনুর মোল্লা, হাদিয়ার মোল্লা ও কালু সরদারের বসতভিটা।

এছাড়া আস্তাইল গ্রামের আজগর ফকির, কদম ফকির, রওশাদ সরদার, রিজু সরদার, রাঙ্গু শেখ, ইমরান শেখ, উজির মিয়া, জহুর শেখ, জাহিদুর শেখ ও ফুলমিয়া শেখ এবং চরআড়িয়ারা গ্রামের বাদশা শেখ, মঞ্জু শেখ, আলোয়ার শেখ ও বাচ্চু শেখের বাড়ি গ্রা’স করেছে মধুমতী।

আস্তাইল গ্রামের ষাটোর্ধ্ব সিরাজ ফকির বলেন, মধুমতীর ভা’ঙনে সাতবার আমার বসতভিটা বি’লীন হয়েছে। এখন আমি নিঃস্ব। পারআমডাঙ্গা গ্রামের লুত্ফার মোল্লা বলেন, এর আগে পাঁচবার আমার বসতভিটা বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে অন্তত ১০ একর ফসলি জমি। এবারের বর্ষায় নদীতে গেছে আরো পাঁচ একর জমি। এখন নিঃ’স্ব হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসান শেখ ও সার্জিদ মোল্লা বলেন, ভাঙন রোধে এ অ লে গত তিন দশকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চলতি ভা’ঙনে ভা’ঙনকবলিতদের কোনো সহায়তাও করা হয়নি। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহেনওয়াজ তালুকদার বলেন, ওই এলাকায় ভা’ঙন প্রতিরোধে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে বড় প্রকল্প হাতে হবে। তবে এজন্য সময়ের প্রয়োজন।