কেবল শিল্পী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেও বড় ছিলেন সালমান

3
13

ডেস্ক/এসএস

১৯৯৬ সালে অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক ২৩ বছর আগের ৬ই সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার। আর সেই দিনেই না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি অভিনেতা মহানায়ক সালমান শাহ। ২৩ বছর পর আবার এই দিনটি শুক্রবার হওয়ায় তাঁর ফেলে যাওয়া কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে যেন তার স্মৃতি গুলো আচড়ে পড়ছে।

১৯৭১ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটে জন্ম গ্রহণ করেন শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, যিনি হলেন সিনেমা জগতের সালমান শাহ। ১৯৯৩ সালে প্রথম তিনি সিনেমা জগতে পা রাখেন কেয়ামত থেকে কেয়ামত নামের সিনেমা দিয়ে। এরপর মাত্র ৩ বছরে ২৭ টি হিট সিনেমা উপহার দেন তার ভক্তদের। ১৯৯৬ সালের এই দিনে মাত্র ২৫ বছর বয়সে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। কোটি কোটি ভক্তদের কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। তার মৃত্যুর রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি।

মৃত্যুর ২৩ বছর হয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু আজও সালমান শাহ এর জনপ্রিয়তার ধারের কাছেও আসতে পারেনি হালের কোন নায়ক। বহুবার উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতাদের কপি করতে দেখা গেছে সালমান শাহ এর পোষাক পরিচ্ছদ ও স্টাইল। এমনকি প্রিয় নায়ক কে একথা জানতে চাইলে একটি অংশের মানুষ প্রথমেই নেন এই সালমান শাহ এরই নাম।

সালমান শাহ অভিনীত ২৭ টি জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে সত্যের মৃত্যু নেই একটি। ছটকু আহমেদ পরিচালিত এই ছবিটি ও যথারীতি ব্যাপকভাবে সফলতা পায়। সালমান শাহ এর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আজও ভুলতে পারেননি ছটকু আহমেদ। ছটকু আহমেদ বলেন, “নিজের চরিত্রের পোশাক, স্টাইলটা সে নিজে তৈরি করতে জানত। সময় নিয়ে চরিত্র বুঝত। এখনকার অভিনয়শিল্পীদের বেশির ভাগই সেটা করে না। তাঁদের শুধুই তাড়া। না বুঝেই এরা বুঝে ফেলার ভান করে, সেটার প্রভাব দেখা যায় সিনেমায়।” পরিচালক ছটকু আহমেদ আরও বলেন, “ভীষণ জনপ্রিয় ছিল সালমান। সে কারণে তার পরে যারা ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে, তারা সালমান হওয়ার জন্যই এসেছিল। কিন্তু পায়ের নিচে সামান্য মাটি পেয়ে গেলেই তারা বদলে গেছে। তাদের অনেকেই দর্শককে ফাঁকি দিয়েছে, দর্শকও তাই তাদের ফাঁকি দিচ্ছে। তবে সালমানকে ঠিকই মনে রেখেছে, রাখবে।”

জীবনের প্রথম সিনেমায় সালমানের প্রথম নায়িকা মৌসুমী এবং প্রথম পরিচালক ছিলেন সোহানুর রহমান সোহান। এত দিনে শত শত অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার পরও সালমান শাহ এর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান ভুলতে পারেননি। তিনি বলেন, “এখনকার অভিনেতাদের মধ্যে অভিনয় করার প্রবণতা আছে, সালমানের মধ্যে চরিত্রে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল। সালমানকে লোকে আজও মনে রেখেছে, সেটার মূল কারণ এটাই।”

মৌসুমীর ও প্রথম সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন সালমান শাহ। বন্ধুত্বের সম্পর্ক ও তৈরি হয়েছিলো তাদের মধ্যে। বন্ধুর স্মৃতিচারণ করে মৌসুমী বললেন, “সালমান কখনোই বড় হয়নি। তাঁর সবকিছুই ছিল আলাদা। যখন রাগ করত, ভীষণ রিঅ্যাক্ট করত। রাগ পড়ে গেলে যেন জীবনটাই দিয়ে দিতে পারত বন্ধুর জন্য। বাস্তব জীবনে সে ছিল পর্দার মতোই রোমান্টিক।”

তুমি আমার ছবির মধ্য দিয়ে বাংলা সিনেমায় সালমান ও শাবনূর জুটি বাঁধেন। এই জুটির প্রায় সব ছবিই হিট করে। এত দিন পর প্রিয় সেই বন্ধুকে স্মরণ করে শাবনূর বললেন, “কেবল শিল্পী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেও বড় ছিল সালমান। বড়দের সম্মান আর ছোটদের ভীষণ আদর করত সে। একসঙ্গে অনেক কাজ করার কারণে আমাদের বোঝাপড়াটা ছিল চমত্কার। তাঁর মতো এত ভালো বন্ধু কেউ হয় না কখনো।”

এতো অল্প সময়ে চলে যাওয়ার কথা ছিলনা তার। কিন্তু মৃত্যুর হাত থেকে তো নিস্তার নেই কোন প্রাণীর। তাই সালমান শাহ ও চলে গেল।আর রেখে গেল ভক্তদের মনে তৈরি হওয়া তার জন্য ভালোবাসা। একথা ঠিক যে সালমান শাহ আর কখনও ফিরে আসবে না। কিন্তু তার স্মৃতি লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয়ে থাকবে অম্লান।