কঠোর নজরদারীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

4
10

নিউজ ডেস্ক

সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক দেশে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং বিরাজমান ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে পদ্মা সেতুতে শিশুদের মাথা লাগবে, ছেলেধরার উপদ্রব, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়া হচ্ছে, মসজিদে আগুন দেয়া হয়েছে, কাবা শরীফ ও শিব লিঙ্গ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গুজব সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করে।

এমতাবস্থায়, দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমূহ সমন্বিতভাবে এই গুজব সমূহের উৎপত্তি ও প্রচাররোধ কল্পে সার্থকভাবে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে গুজবসমূহকে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সমর্থ হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমূহ ইতিমধ্যেই গুজব উৎপত্তি ও প্রতিরোধ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সক্ষমতা অর্জন করেছে। তারা পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহে সার্বক্ষণিক মনিটরিং/নজরদারী করে গুজব রটনাকারীদেরকে সনাক্ত করার পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্যে সার্থকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা সমূহ গুজব রটনাকারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্যে নিবিড় নজরদারী চালাচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে অসামরিক প্রশাসন, পুলিশ ও র‍্যাব। এরই মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমূহ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করার কথা বলা হয়েছে। গণপিটুনি দিয়ে হত্যা এবং গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা ফৌজদারি অপরাধ বলে উল্লেখ করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। এ বিষয়ে সারা দেশের বিভিন্ন ইউনিটকে গুজব প্রতিরোধে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ ও র‍্যাব কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে সনাক্তকৃত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গুজব রটনাকারীদেরকে বিশেষ অপারেশনের মাধ্যমে গ্রেফতার করেছে। এই সনাক্তিকরণ ও গ্রেফতার প্রক্রিয়া ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র সমূহ হতে জানা গেছে।

একইভাবে যেকোনো ধরণের গুজব প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টিমের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে আনসার ও ভিডিপি। এই বাহিনীর ৬১ লাখ সদস্য জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে সক্রিয়। এ বিষয়ে বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, কুসংস্কার থাকলে গুজব ছড়ায়। পদ্মা সেতু নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার জন্য গ্রাম, ইউনিয়ন পর্যায়ে আনসার বাহিনীর লিডারদের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে বার্তা পাঠানো হয়েছে। এমনকি এই বাহিনীর সদস্যরা মাঠপর্যায়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গুজবকারীদের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য পরিমানে তথ্য সংগ্রহ করছে বলেও জানা গেছে।

এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে যাতে কেউ গুজব সৃষ্টি ও ছড়াতে না পারে সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সব স্তরের কর্মচারীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরিপত্রে অসাধু মহল কর্তৃক শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সর্বসাধারণকে গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে গুজব রটনাকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও প্রশাসন কর্তৃক জনসাধারণকে গুজব প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমূহকে তথ্য প্রদানের পাশাপাশি নিজেদেরকেও সাবধানতা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো যাচ্ছে। কেননা, আপনি যদি অসচেতনভাবেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহে গুজব সৃষ্টি ও প্রচারে অবদান রাখেন, তবুও আপনাকে গুজব রটনাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে এবং আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জালে ফেঁসে যেতে পারেন। কারণ আপনার কর্তৃক প্রচারণার কারণে কোন নিরীহ ব্যক্তির প্রাণনাশ, এমনকি সামাজিক পরিমন্ডলে অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। সাম্প্রতিক অতীতে ছেলেধরা ও পদ্মাসেতুতে কাটা মাথার প্রয়োজন শীর্ষক গুজবের ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণনাশ পর্যবেক্ষিত হয়েছে, যা সমাজের মানুষদের স্বাভাবিক চলাচলে ভীতি ও বিঘ্নের সৃষ্টি করেছে। আসুন আমরা সবাই মিলে গুজবমুক্ত ও কুসংস্কারহীন সমাজ গড়ে তুলি। সূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ।