নড়াইলের লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

2
47

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুষ্ঠু তদন্ত ও অ্যাম্বুলেন্স চালকের শাস্তির দাবি জানিয়ে এলাকাবাসি সরকারী বিভিন্ন দফতরসহ নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগের আলোকে সিভিল সার্জন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করে দিয়েছেন। তাদের সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন সিভিল সার্জনের নিকট জমা দিতে বলা হয়েছে। সাত দিন অতিবাহিত হলেও এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি।

অভিযোগে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক খাইরুল ইসলাম নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউপির সড়াতলা গ্রামের আনু মৃধার ছেলে। বিগত ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তৎকালিন নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুফতী শহিদুল ইসলামের সহযোগিতায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে চাকুরী পায় বলে জানা যায়। এর আগে সে ইসলামী প্রতিষ্ঠান আল-মারকাজুলের অ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাকুরী পাওয়ার পর থেকে খাইরুল রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে রোগী ও তার স্বজনদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আসছেন। যাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে পারেননা, তাদেরকে বলে দেন এ্যাম্বুলেন্স নষ্ট। অথচ ওই সময়ই অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে অন্য রোগীকে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেন। সে রোগী বহনের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করেন না। ভাড়ার বিপরীতে রশিদ দেয়ার নিয়ম থাকলেও সে কাউকে রশিদ দেন না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন দু’টি অ্যাম্বুলেন্সের যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ধুরন্ধর অ্যাম্বুলেন্স চালক খাইরুল নতুন অ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিন খুলে বিক্রি করে পুরাতন ইঞ্জিন নতুন অ্যাম্বুলেন্সে স্থাপন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চালক খাইরুলের রয়েছে ব্যক্তিগত দু’টি অ্যাম্বুলেন্স। সে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বিকল দেখিয়ে ওই গাড়ি দু’টিতে অতিরিক্ত ভাড়ায় রোগী পরিবহন করে থাকেন। দু’টি গাড়ির একটি দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত ইসলামি প্রতিষ্ঠান আল-মারকাজুলের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।তার বিরুদ্ধে জঙ্গী কাজে সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে। সুচতুর চালক খাইরুল সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড নিয়ে প্রায়শই হাসি-তামাশা করে থাকেন।এছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উচ্চ পর্যায়ের আ’লীগনেতা ও মন্ত্রীদের নিয়ে ঠাট্টা তামাশা,ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে নড়াইল জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোয়ামিন কুদ্দুস জিসনকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দু’জন সদস্য হলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার শেখ আবুল হাসনাত ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর মঞ্জুর রহমান। গঠিত কমিটি সাত কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে নাই বলে দরখাস্তকারীদের অভিযোগ।

এ প্রসঙ্গে নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা.আছাদুজ্জামান টনি মঙ্গলবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন,‘স্থানীয় এলাকাবাসির অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটি আরও সময়ের আবেদন করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন হস্তগত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোয়ামিন কুদ্দুস জিসন সোমবার দুপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দক্ষ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে অধিকতর তদন্তের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে।’ এ বিষয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক খাইরুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে বলেন,‘কিছু কুচক্রী মহল আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ অভিযোগ করেছেন। আদৌ আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নহে। তদন্তে তা প্রমাণিত হবে।’