নড়াইলের নবগঙ্গা, চিত্রা, কাজলা ও হরি নদীর ৬০ কিঃমিঃ কচুরিপানা

8
41

ডেস্ক/এএস

নড়াইলের নবগঙ্গা, চিত্রা, কাজলা ও হরি নদীর ৬০ কিঃমিটার এলাকাজুড়ে কচুরিপানায় ভরে গেছে। এসব কচুরিপানা বিভিন্ন খালেও প্রবেশ করছে। বর্তমানে এ সমস্যা অনেকটা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। গত ৬মাস ধরে কচুরিপানা একটানা আটকে থাকায় ২৫টি খেয়া ঘাটের দু’পারের হাজার হাজার মানুষ সময় মতো নদী পারাপার হতে পারছেন না। আবার পারাপরে খরচও বেড়ে গেছে। এ কচুরিপানার কারণে নড়াইলে পণ্যবাহী কোনো ট্রলার, কার্গো সময় মতো যাতায়াত করতে পারছে না। মাছ ধরতে না পারায় জেলেরাও হয়ে পড়েছে বেকার। কচুরিপানা অপসারণে জেলা প্রশাসন, নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্প্রতি উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি।

জানা যায়, এ কচুরিপানার উৎপত্তি মাগুরা-নড়াইলের নবগঙ্গা নদী থেকে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি মাগুরা শহরের ওপর নবগঙ্গা নদীতে বাঁধ দিয়ে স্লুইচগেট করা হলে নদীর স্রোতধারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বর্তমানে মাগুরার সাতদোয়া, বিনোদপুর, রাজাপুর, নহাটা, গঙ্গারামপুর, নড়াইলের মিঠাপুর ও নলদী এলাকায় জোয়ার-ভাটা না থাকায় এ অঞ্চলে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা ঠিকমতো সরতে পারে না। আবার বর্ষকালে মাগুরার নাড়িখালী, নাদপুর খাল এবং এর পার্শ্ববর্তী নড়াইলের ছাতরা, ধোপাদা ও বাড়িভাঙ্গা খালের কচুরিপানা আশ্বিন-কার্তিক মাসে খাল থেকে এ অঞ্চলের নবগঙ্গা নদীতে নেমে আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ভাটায় এসব কচুরিপানা লোনা পানিতে নামতে না পেরে নবগঙ্গা ও চিত্রার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বংশ বৃদ্ধি করছে এবং মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এর ফলে চিত্রা নদীর পেড়লি, জামরিলডাঙ্গা, খড়রিয়া, রঘুনাথপুর, সুমেরুখোলা, বাগডাঙ্গা, গোবরা, মিরাপাড়া, ভদ্রবিলা, পংকবিলা, শিখেলি, রতডাঙ্গা, ধোন্দা, পাঝারখালি, নবগঙ্গা নদীর নলদী, ভুমুরদিয়া, কলাগাছি, চালিতাতলা, চন্ডিবরপুর, সিঙ্গে, মনোখালী, গংগারামপুর, দরি-মিঠাপুর, হরি নদীর নিরালি ও কাজলা নদীর মুলিয়া খেয়া ঘাটে জরুরি প্রয়োজনে পারাপার, বিভিন্ন পেশা ও চাকরিজীবী শ্রেণি ও শিক্ষার্থীদের গন্তব্যে পৌছাতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ কচুরিপানা অপসারণের জন্য গত ২৪এপ্রিল জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা শহরের বাঁধাঘাট এলাকায় মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপির নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন, জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে এসব নদীর প্রায় ৬০ কিঃ মিটার এলাকার কচুরিপানা অপসারণ কাজের উদ্বোধন করলেও কয়েকদিন পর ঘূর্ণী ঝড় ফনির প্রভাবে তা ভেস্তে যায়।

নড়াইল শহরের ব্যবসায়ী পংকবিলা গ্রামের রানা দাস ও পার্শ্ববর্তী লস্করপুর গ্রামের গৃহকর্মী আসমিনা বেগম জানান, বাড়ি থেকে শহরে আসতে পংকবিলা ঘাটে কচুরিপানার কারনে নৌকা পারাপারে ১০মিনিটের জায়গায় প্রায় ৫০ মিনিট লেগে যায়। আবার পারাপারে ৪টাকার পরিবর্তে ১০টাকা নেয়া হচ্ছে। পংকবিলা ঘাটের ডিঙ্গি নৌকার মাঝি বিনয় বিশ্বাস জানান, কচুরিপানার কারনে কষ্ট অনেক বেশী হয় এবং পারাপারে আধাঘন্টা সময় নেয়। ফলে অধিকাংশ যত্রীরা এ পথে না এসে সুলতান এবং রাসেল সেতু দিয়ে যাতায়াত করছে। বর্তমানে এ ঘাটে ৬টি নৌকার বদলে একটি নৌকা চলছে।

রতডাঙ্গা খেয়া ঘাটের মাঝি সেলিম বিশ্বাস বলেন, কচুরিপানার কারনে কমপক্ষে ১০জন যাত্রী না হলে নৌকা ছাড়া সম্ভব হয়না। ফলে কমপক্ষে আধাঘন্টা দেরী করতে হয়। পূর্বে পারাপারে ৪টাকা নিলেও এখন বাধ্য হয়ে ১০টাকা নিচ্ছেন। সদরের আউড়িয়া ইউনিয়নের কামরুজ্জামান তুহিন বলেন,কচুরিপানার বেহাল অবস্থার কারণে পংকবিলাসহ ৪টি গ্রামের স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সময় মতো নড়াইল শহরে প্রবেশ করতে পারে না। তিনি এ কচুরিপানা অপসারণে নিজে প্রায় ২৫হাজার টাকা ব্যয় এবং বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।

সদরের ঘোলাখালী গ্রামের অনিল বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৬মাস নৌকায় মাছ ধরতে না পারার কারনে মাছ ধরতে সাহায্যকারী ৩টি ভোদরকে (স্থানীয় নাম ধাইড়ে) বসিয়ে বসিয়ে ছোট মাছ ও ব্যাঙ খাওয়াতে হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় দেড় কেজি মাছ বা সম পরিমান ব্যাঙ খাওয়ানো তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর বিষয় বলে জানান।

সদরের রতডাঙ্গা গ্রামের জেলে উজ্জল সরকার ও উত্তম সরকার (০১৭৩৫-২৫৯৯৮৯) জানান,গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ৭টি নৌকায় ১২জনের একটি দল নিয়ে মোটা দড়া-কাছি ও কলা গাছ দিয়ে কৌশলে মিঠাপুর থেকে পেড়লি পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিঃমিঃ এলাকার কচুরিপানা নদীর ভাটার সময় দক্ষিনাঞ্চল খুলনার রূপসা নদীর লোনা পানিতে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ২মে ঘূর্ণিঝড় ফনির প্রভাবে এসব কচুরিপানা জোয়ারে আবার চিত্রা-নবগঙ্গায় ফিরে আসে। তবে নতুন কওে এসব বিস্তীর্ণ এলাকার কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। দেখা যাক কি হয় !

জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা এ প্রতিনিধিকে বলেন, নড়াইল ও মাগুরা অঞ্চলের বিশাল এলাকার কচুরিপানা ভাটির টানে খুলনার লোনা পানিতে পাঠানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেও কাজ হচ্ছে না। এর সাথে কয়েকটি জেলা জড়িত। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে কথা বলেছি। এ কাজ শুধু জেলা প্রশাসনের একার নয়। এখানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।