অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াই করে হেরেছে বাংলাদেশ

0
12

স্পোর্টস ডেস্ক

রান ছিলো পাহাড় সমান। বিশ্বকাপের মত এত বড় আসরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৮২ রান চেজ করে জেতা কিছুটা হলেও দুরূহ ছিল। কিন্তু ওরা জানে না বিপক্ষে ছিলো বাংলার দামাল ছেলেরা। টাইগাররা ম্যাচটি হারলেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। একটি বারের জন্যও হাল ছেড়ে দেয়নি। গত ম্যাচেই তো ৫১ বল হাতে রেখে সহজেই ইন্ডিজের ৩২১ টপকিয়েছে। হয়তো ৩৮২ রানও অর্জনীয় হতে পারতো কারণ ক্রিকেটে হলো অনিশ্চয়তার খেলা। কার জানা ছিলো ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪ দক্ষিণ আফ্রিকা সহজেই পার করে ফেলবে? ২০১৬ সালের কথাই ধরুন। ওয়ার্নার-স্মিথের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার ৩৭১ রানের টার্গেট ভাঙতে আফ্রিকার মিলারের মত একজনের শতকই যথেষ্ট ছিল।

শুক্রবার (২০ জুন) নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ওয়ার্নারের ১৬৬ রানের ইনিংসে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৮১ রান করে অস্ট্রেলিয়া। মাশরাফীর অফ-স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্নার। ক্যাচটি ধরতে ব্যর্থ হন পয়েন্টে থাকা সাব্বির। ফলে ১০ রানে জীবন পান ওয়ার্নার। প্রথম ২০ ওভার ধরে পাঁচ বোলার ব্যবহার করেও উইকেট পড়েনি অস্ট্রেলিয়ার। ইনিংসের ২১তম ওভারে প্রথম উইকেট তুলে নেন সৌম্য সরকার। ফিঞ্চকে সাজ ঘরে ফেরান সৌম্য। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫১ বলে ৫৩ রান করেন তিনি। দলীয় ১২১ রানে ফিঞ্চ ফিরে যাবার পর উসমান খাজাকে নিয়ে বড় জুটি গড়েন ওয়ার্নার। ব্যক্তিগত ১৬৬ রানে সৌম্যর দ্বিতীয় শিকার ওয়ার্নার। ১৪৭ বলের ইনিংসে ১৪টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন ওয়ার্নার। দ্বিতীয় উইকেটে খাজার সাথে ১৪১ বলে ১৯২ রান যোগ করেন ওয়ার্নার। এরপর ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০ বলে ৩২ রান করেন ম্যাক্সওয়েল৷ সৌম্যর করা ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ম্যাক্সওয়েল রানআউট ও পঞ্চম বলে আউট হন খাজা। ১০টি চারে ৭২ বলে ৮৯ রান করে আউট হন খাজা। এটি ছিলো সৌম্যর তৃতীয় উইকেট। পরের ওভারের প্রথম বলে আবারো উইকেট পতন হয় অস্ট্রেলিয়ার। সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে ১ রানের লেগ বিফোর উইকেটে আউট করেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।

শেষে মার্কাস স্টয়িনিসের ১১ বলে অপরাজিত ১৭ ও উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারির ৮ বলে অপরাজিত ১১ রানে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৮১ রানের সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ও নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ অস্ট্রেলিয়ার। সৌম্য তার ক্যারিয়ার সেরা ৮ ওভারে ৫৮ রানে ৩উইকেট শিকার করেন। ১ উইকেট নেন মুস্তাফিজ।

৩৮৩ রানের বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে চতুর্থ ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন সৌম্য। ২টি চারে ১০ রানে আউট হন সৌম্য। ৪টি চার-এ ৪১ বলে ৪১ রান করে স্টোয়িনিসের স্লো ডেলিভারিতে আউট হন সাকিব। ফলে এবারের বিশ্বকাপে তার রান সংখ্যা গিয়ে দাড়ায় ৪২৫-এ। এতে বিশ্বকাপের এক আসরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চার শতাধিক রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। ২৫তম ওভারে স্টার্কের প্রথম ডেলিভারিতে বোল্ড হন তামিম। ৬টি চারে ৭৪ বলে ৬২ রান করেন এই ওপেনার। ২৯.২ ওভারে দলীয় ১৭৫ রানে লেগ স্পিনার জাম্পার বলে এলবিডব্লু আউট হন লিটন ২০ (১৭)। তখন জয়ের জন্য ১২৪ বলে ২০৭ রান দরকার ছিলো বাংলাদেশের।

এ অবস্থায় হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুুল্লাহ রিয়াদ। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৩৩ রান। অর্থাৎ ওভারপ্রতি প্রায় ১৫ রান করে। তারপরও শেষ চেষ্টায় ছিলেন পঞ্চম উইকেটে ৮৩ বলে ১০০ রান করা মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ।জুটিতে ১০০ রান আসার পরই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২১ ও এবারের বিশ্বকাপে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মাহমুদুল্লাহ। ৪১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেন তিনি। ৬৮ বলের জুটিতে ১০০ রান আসার পর মারমুখী হয়ে উঠেন মাহমুদুল্লাহ। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় রান তোলার গতি বাড়ান তিনি। কিন্তু ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে পুল করে ডিপ স্কয়ার লেগে কামিন্সকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মাহমুদুল্লাহ। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫০ বেেল ৬৯ রান করে অস্ট্রেলিয়ার পেসার নাথান কলটার নাইল বলে আউট হন মাহমুদুল্লাহ। পঞ্চম উইকেটে মুশফিকের সাথে ৯৭ বলে ১২৭ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ।

মাহমুদুুল্লাহকে বিদায় দেয়ার পরের ডেলিভারিতে সাত নম্বরে নামা সাব্বির রহমানকে বোল্ড করেন নাইল। মোসাদ্দেকের ইনজুরিতে এবারের আসরে প্রথম খেলতে নেমেই শুন্য হাতে ফিরলেন সাব্বির। তাই দলীয় ৩০২ রানেই পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তখন ম্যাচের ২৬ বল বাকী। রান দরকার ৮০। যা নাগালের বাইরেই ছিলো বাংলাদেশের জন্য। কারন আক্সিং রেট তখন প্রায় ২০। তবে শেষ ২৬ বলে বাংলাদেশের অর্জন ছিলো মুশফিকের সেঞ্চুরি। ৯৫ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরির স্বাদ পান মুশফিক। শেষ পর্যন্ত ৯৭ বলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি । আর ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান করে বাংলাদেশ।

স্কোর কার্ডঃ অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং ইনিংস- ওয়ার্নার ১৬৬, ফিঞ্চ ৫৩, খাজা ৮৯, ম্যাক্সওয়েল রান আউট (রুবেল) ৩২, স্টোয়িনিস ১৭*, স্মিথ ১, ক্যারি ১১*, অতিরিক্ত ১২, মোট (৫ উইকেট, ৫০ ওভার) ৩৮১; বাংলাদেশ বোলিং- মাশরাফী : ৮-০-৫৬-০, মুস্তাফিজুর : ৯-০-৬৯-১ (ও-১), সাকিব : ৬-০-৫০-০ (ও-১), রুবেল : ৯-০-৮৩-০ (ও-৩, নো-১), মিরাজ : ১০-০-৫৯-০ (ও-১),
সৌম্য : ৮-০-৫৮-৩।

বাংলাদেশ ব্যাটিং ইনিংস- তামিম ৬২, সৌম্য রান আউট (ফিঞ্চ) ১০, সাকিব ৪১, মুশফিকুর ১০২*, লিটন ২০, মাহমুদুল্লাহ ৬৯, সাব্বির ০, মিরাজ ৬, মাশরাফফী ৬, অতিরিক্ত ১৭, মোট (৮ উইকেট, ৫০ ওভার) ৩৩৩; অস্ট্রেলিয়া বোলিং- স্টার্ক : ১০-০-৫৫-২, কামিন্স : ১০-১-৬৫-০ (ও-৩), ম্যাক্সওয়েল : ৩-০-২৫-০, নাইল : ১০-০-৫৮-২ (ও-১), স্টোয়নিস : ৮-০-৫৪-২, জাম্পা : ৯-০-৬৮-১ (ও-১), ফলাফল : অস্ট্রেলিয়া ৪৮ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)।