নড়াইল সদর হাসপাতালে অনিয়ম, ক্ষিপ্ত এমপি মাশরাফী

2
138

স্টাফ রিপোর্টার

একদিকে তিনি বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক, অন্যদিকে নড়াইল ২ আসনের নব্য সংসদ সদস্য। তবে একথা কেহই বলতে পারবে না যে তার দ্বারা কোন একটি স্থানে তিল পরিমাণ অবহেলা হয়েছে। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির পাশাপাশি তিনি তার দ্বায়িত্ব থেকে শতভাগ নিজ এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। অন্য নেতারা অতীতে কী করেছে, কতটুকু তারা তাদের এলাকার জন্য করে থাকে সেটা এই নেতার মাথায় একদমই নেই। এইতো কিছুদিন আগে নড়াইল জেলার মানুষের জন্য ধারাবাহিকভাবে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে ছুঁটেছেন তিনি। হ্যাঁ! নড়াইল-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার কথা বলছি। জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগদানের আগে নির্বাচনী এলাকায় সফরে এসেছেন তিনি।

গত ২৪ এপ্রিল নড়াইলে এসেই সুধীজনের সাথে নড়াইলের যাবতীয় সমস্যা নিয়ে মত বিনিময় করেন এমপি মাশরাফী। ৩০ মে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন এজন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। সেদিনই অনেক সমস্যা নিয়ে কথা বলেছিলেন। সভায় সংসদ সদস্য নড়াইলকে মডেল জেলা হিসাবে গড়ে তুলতে ও সুন্দর বাসযোগ্য “ক্লিন নড়াইল গ্রিন নড়াইল” গড়তে স্থানীয় প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং তার পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন, অপরাধ করে সীমিত লোক, আর সেই অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় অনেকে, অন্যায়কে যারা প্রশ্রয় দেয় তারা হচ্ছে বড় অপরাধী। সভায় মাশরাফী সকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি জানান, সেসকল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তিনি নিজেই ফাইল তৈরি করেছেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন।

মাশরাফীর প্রথম লক্ষ্যই হচ্ছে নিজ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ এপ্রিল দুপুরে তিনি ছুটে যান নড়াইল সদর হাসপাতালে। হাসপাতাল পরিদর্শনকালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের না পেয়ে মাশরাফী প্রথমে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক ডাঃ আব্দুস শাকুর ও পরে সিনিয়র সার্জন ডাঃ আকরাম হোসেনের সাথে রোগী সেজে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। হাজিরা খাতায় সার্জারী চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ আকরাম হোসেনের ৩ দিনের অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়ে ছুটির আবেদন দেখতে চান। পরে জানতে পারেন ছুটি ছাড়াই সেই ডাক্তার ৩ দিন ধরে অনুপস্থিত আছে। মোবাইলে ডাক্তারদের মাশরাফী বলেন যে তাদের অনুপস্থিতির জন্য রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি সার্জনকে বলেন, “আপনি যে বলছেন দুইদিন আসবেন না, এখন যদি হাসপাতালে সার্জারীর প্রয়োজন হয় তাহলে সেই রোগী কী করবে?” মাশরাফী এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেব? বলেন। মানুষদের আর কত অবহেলার মধ্যে রাখবেন?”

মাশরাফীর হাসপাতালে আসার খবর পেয়ে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মশিউর রহমান বাবু হাসপাতালে ছুটে আসেন। এরপর চিকিৎসক ডাঃ আলিমুজ্জামান সেতুও চলে আসেন। এসময় চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি বিষয়ে কথা বলে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে দিয়ে হাজিরা খাতায় সেই চিকিৎসক ডাঃ আকরাম হোসেনের ৩ দিনের অনুপস্থিত করিয়ে নেন।

এর আগে পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র দু’জন নার্স দেখে তাদের ডিউটির ব্যাপারে খোঁজ নেন। জানতে পারেন হাসপাতালে ৭৩ জন নার্স থাকলেও ২-১ জন নার্স দিয়েই সকল ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে। ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক নিচে নেমে এসে নার্সিং সুপারভাইজারদের খোঁজ করেন মাশরাফি। নার্সদের কক্ষে তালা দেখতে পেয়ে টেলিফোনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। এসময় একজন সুপারভাইজারের ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং অপরজনের ফোন খোলা থাকলেও রিসিভ করেননি। রোগীদের অনুরোধে হাসপাতালের বাথরুম ও তার পরিবেশ নিজে পরিদর্শন করেন মাশরাফী। হাসপাতালের কয়েকটি বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে সঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন, ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের সাথে সভা করেন সংসদ সদস্য মাশরাফী। এসময় তার সাথে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ছাড়াও হাসপাতালের অবকাঠোমো দেখভাল করা প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীও উপস্থিত ছিলেন। এসময় হাসপাতালে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।