হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি চান জবি শিক্ষার্থী সুমন

0
12

নিজস্ব প্রতিবেদক

হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে চান নড়াইলের সন্তান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী এহসান হাবিব সুমন। ঢাকায় ১৩দিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে বর্তমানে গ্রামের বাড়ি নড়াইলে অবস্থান করছেন। সুমনের বাবা প্রায় চার বছর আগে হৃদরোগে মারা যাওয়ার পর ঢাকায় টিউশনি ও কোচিং করিয়ে লেখাপড়া এবং সংসারের খরচ চালান তিনি। সুমন ছাড়াও সংসারে মা ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বোন রয়েছে। তবে এখন ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়েছে হয়রানিমূলক মামলাটি। সুমনের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগ্রামে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন জানান, মিথ্যা মামলায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে ক্যাম্পাস থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও এ মামলার আসামি হিসেবেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যদিও সংঘর্ষের দিন সুমন নিজের মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ও বিমা করতে সংশ্লিষ্ট অফিসে ছিলেন। কোচিংয়ের টাকা জমিয়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে সম্প্রতি একটি মোটরসাইকেল কিনেছেন তিনি। ওইদিন বিআরটিএ অফিসে থাকলেও তাকে আসামি করে গ্রেফতার করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় তার (সুমন) সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি পুলিশকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন সুমন। অবশেষে তার ঠিকানা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। বিনা অপরাধে আটকের ঘটনায় কারাগারে থেকে আবেগঘন একটি চিঠি লেখেন সুমন। সেই চিঠি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া একজনের মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ১৩দিন জেল খেটে গত ৩ মার্চ জামিনে মুক্তি পান সুমন।
এরপর গত বুধবার (৬ মার্চ) গ্রামের বাড়ি নড়াইলের নওয়াগ্রামে আসেন তিনি। একমাত্র ছেলেকে কাছে পেয়ে মা রাবেয়া বেগম (৪০) তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অঝরে থাকতে থাকেন। এ সময় সুমন ও তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বোন আফসানা আক্তারও (১৬) কাঁদতে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশিরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

সুমন বলেন, আমার জামিনের ব্যাপারে নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ও ডিএমপির যুগ্মকমিশনার শেখ নাজমুল আলমসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

সুমনের বন্ধু নওয়াগ্রামের মিরাজুল ইসলাম ও শাহীন মোল্যা বলেন, আমাদের একটাই দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ওই মারামারি ঘটনায় আসামির তালিকা থেকে সুমনকে বাদ দেয়া হোক। আর সুমনের মতো কেউ যেন এ ধরণের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার না হয়, সেদিকে প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

প্রতিবেশি হালিমা বেগম ও হিরু মোল্যা বলেন, সুমনের বাবার মৃত্যু পর অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে সে। তাছাড়া সংসারের খরচও তার চালাতে হয়। তার উপর যদি মিথ্যা মামলা চেপে বসে, তাহলে সে কোথায় যাবে !
সুমনের মা রাবেয়া রাবেয়া বেগম বলেন, আমার ছেলের আর যেন কোনো হয়রানি না হয়, স্বাভাবিক ভাবে যেন লেখাপড়া করতে পারে; সরকারের প্রতি সেই দাবি করছি। এছাড়া এ মামলা থেকে যেন দ্রুত রেহাই পায়।

নড়াইলের নওয়াগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল আলম বলেন, সুমন আমাদের বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে। এসএসসিতে ৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট এবং উচ্চ মাধ্যমিক এ প্লাস অর্জন করে সুমন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং নড়াইল জেলার শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সচেতন ও সহযোগিতা করতে সুমন ঢাকায় গড়ে তুলেছে ‘চিত্রা হেলফ ডেস্ক’ নামে একটি সংগঠন। যার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১১ হাজার। এখন আমাদের একটাই দাবি, এ মামলা থেকে সুমনকে অব্যাহতি দেয়া হোক।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট সুমনের ১৮তম জন্মদিনে তার বাবা আজিজুর রহমান হৃদরোগে মারা যান। তখন উচ্চ মাধ্যমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্বও তার কাঁধে এসে পড়ে। তাদের ২০ শতাংশ ফসলি জমি এবং পাঁচ শতকের ওপর বসতভিটা ছাড়া তেমন কিছু নেই।