খোলা চিঠি লিখে জামিনে ছাড়া পেলেন জবি শিক্ষার্থী নড়াইলের সুমন

1
66

এমএসএ

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জেল থেকে খোলা চিঠি ছাড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী এহসান হাবিব সুমন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে সংঘটিত ছাত্রলীগের সংঘর্ষকে ঘিরে পরদিন পুলিশ কর্তৃক আটককৃত সন্দেহভাজন ৫ জনের মধ্যে সুজন একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইক রেখে ফেরার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি হন সুমন। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য জেল থেকে খোলা চিঠি পাঠানো ছাড়া নিরীহ সুমনের আর কিছু করার ছিলো না। কেহ যদি দুর্ভাগার আর্তচিৎকার শুনতে পারে! কোন দিক থেকে সাড়া না পেয়ে তিনি বিস্তারিত লিখতে বাধ্য হন।

সুমন লেখেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানিত প্রক্টর স্যার, মাননীয় ভিসি স্যার আমাদের অভিভাবক। আমরা তাদের সন্তান। আপনাদের এমন এক সন্তান আজ জেলে আটকা আছে যে কিনা কিছু জানতো পর্যন্ত না। আপনাদের এমন এক নিরপরাধ সন্তান জেলে আছে যে কিনা কোনোদিন রাজনীতিটাও করেনি। সংসার আর নিজের জীবনের ঘানি টানতে টানতে সময় পার করেছি। হ্যাঁ, মানছি আপনার কিছু সন্তান অপরাধ করেছে, কিন্তু তার জন্য একটা নিরপরাধ নিরীহ মানুষ ফেঁসে গেল। যার অপরাধ শুধু একটাই ক্যাম্পাসে বাইক রাখতে এসেছিল।”

চিঠিতে সুমন ১৮ তারিখ ছাত্রলীগের সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে বলেন সেদিন তিনি মিরপুরে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বি আর টি এ) কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বাইকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার আনতে। বাইকের রেজিস্ট্রেশন পেপার ও নাম্বার হাতে নিয়ে গ্লোবাল ইন্সুরেন্স থেকে বাইকের ইন্সুরেন্স করান। ১৮ তারিখে সংঘর্ষের সাথে তার কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা যে ছিলো না তার আকুতি ছিল চিঠিতে।

জেলের মধ্যে মায়ের কথা খুব মনে পড়তো সুমনের। ২০১৪ সালে বাবাকে হারিয়েছেন। মানসিক প্রতিবন্ধী বোনটির কথাও তিনি ভাবতেন। তবে ভেঙে পড়েননি সুমন। তিনি লেখেন, “অবাক হতে হতে আর কাঁদতে কাঁদতে আমি ক্লান্ত। একজন নিরপরাধ এবং নিরীহ মানুষ হয়েও আমি জেলে বসে আছি। জেলখানায় এসে মায়ের কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। প্রথম ২ দিন মা মা করে অনেক কেঁদেছি। এখন একটু শক্ত হয়েছি। আমি জানি আমার মা এখনো কাঁদছে।”

সুমনের চিঠি মুহূর্তেই সবার বিবেকের দ্বারে গিয়ে পৌছায়। জনমনে পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি এক ক্ষোভ সৃষ্টি করে তার নিরপরাধী কণ্ঠ। সুমনের “জেল থেকে বলছি” চিঠি হাতে পেয়ে নড়াইল ১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তিনি বলেন, সুমনের চিঠি “যেন কোন সিনেমার গল্প কিন্তু তার লেখার কাহিনী পুরোটাই ছিল বাস্তবিক। যখন কাহিনীটা পড়লাম তাৎক্ষণিক ভাবে আমি প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি, কাল সকালে হয় তো ছেড়ে দিবে তাকে।” এমপির সাথে সুমনের বিশ্ববিদ্যালয় জবি থেকেও আন্দোলনের এলান উঠে। দাবী- নিরপরাধ সুমনের মুক্তি চাই। সুমনের বাড়ি নড়াইল থেকেও তার মুক্তির জন্য প্রার্থনা করে নড়াইলবাসী। তার মুক্তির দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে জবি ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট।

অবশেষে রোববার (৩ মার্চ) মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এহসান হাবিব সুমন জামিনে ছাড়া পায়। কোতোয়ালি থানার ওসি মশিউর রহমান সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সুমন যদি জড়িত না থাকে তাহলে তার মামলা প্রত্যাহার করা হবে জানিয়েছেন জবি প্রক্টর অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ। সুমনের জামিনে কিছুটা স্বস্তির প্রশ্বাস ফেলেছে নড়াইলের জনতা। তবে তার মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সুমনের এলাকার সাধারণ জনগণ। উল্লেখ্য, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নওয়া গ্রামের রাবেয়া বেগমের ছেলে এহসান হাবিব সুমন। জেল থেকে মায়ের কোলে ফিরবেন তিনি।