বেহাল নড়াইলের লোহাগড়া-লাহুড়িয়া সড়ক, বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ

62
22

বিশেষ প্রতিনিধি

স্থানে স্থানে পিচ-খোয়া উঠে গেছে। ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ। সামান্য বৃষ্টিতেই জমছে পানি। এর ওপর দিয়ে হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি। এ অবস্থা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লোহাগড়া-লাহুড়িয়া সড়কের। এ সড়কে নিত্যদিন যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লোহাগড়া থেকে লাহুড়িয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এ সড়কের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য অটোরিকশা, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ নানা ধরণের যানবাহন চলাচল করে। এটি লোহাগড়া উপজেলার উত্তর এলাকায় যাতায়াতের প্রধান সড়ক। সড়কটি দিয়ে এ এলাকার লাহুড়িয়া, শালনগর, নোয়াগ্রাম, কাশিপুর ও জয়পুর ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ নিত্যদিন উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন।

এছাড়া এই সড়কটি ব্যবহার করে লোহাগড়া ও ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার এবং মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার বাসিন্দারা অল্প সময়ে যাতায়াত করেন। লোহাগড়া উপজেলার শেষ প্রান্ত লাহুড়িয়া বাজার। এ বাজার থেকে মাগুরায় সরাসরি যাত্রীবাহি বাস চলাচল করে। লাহুড়িয়া বাজার থেকে এ সড়ক দিয়ে লোহাগড়া হয়ে ঢাকায় যাত্রীবাহি বাস চলাচল করে। লাহুড়িয়া, মাকড়াইল, বাতাসি, মন্ডলবাগ, শিয়রবর ও মানিকগঞ্জ এই এলাকার বড় বাজার। এসব বাজারে পণ্য পরিবহনে প্রতিনিয়নত মালবোঝাই ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল কওে এই সড়ক দিয়েই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই ২০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ স্থানে পিচ ও খোয়া উঠে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। দুর্ভোগের শুরু লোহাগড়া বাজারের পরেই জয়পুর থেকে। জয়পুর মোড়ে সড়কটি উভয় পাশে পিচ ও খোয়া উঠে দেবে গেছে। এরপর নারানদিয়া-কেষ্টপুরের মধ্যে বেহাল অবস্থা। লোহাগড়া বাজার থেকে চাচই কেয়ারের মোড় পর্যন্ত খুবই খারাফ। কেয়ার থেকে শিয়েরবর পর্যন্ত মোটামুটি চলাচল করা যায়। শিয়েরবর বাজার থেকে কালিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত পুরা রাস্তাই খুবই করুন অবস্থা। মাকড়াইল বাজার থেকে কালিগঞ্জ বাজার এলাকায় অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। এখানে বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদাপানিতে এ অংশ একাকার হয়ে যায়। মাকড়াইল ও তেতুলবাড়িয়া এলাকায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত।

ঝিনাইদহে চাকরি করেন লোহাগড়া সদরের আরমান ও ইসরাফিল। তারা বলেন, এ সড়ক দিয়ে ঝিনাইদহে খুব সংক্ষিপ্ত রাস্তা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। তিনি এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। সড়কটির বেহাল দশার কারণে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। মরিচপাশা গ্রামের অটোরিকশা চালক মাহাবুল মোল্লা বলেন, ছোট যানবাহন প্রায়ই উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্তঃসত্তা ও অসুস্থ মানুষের দুর্ভোগ দেখে কান্না আসে। ৩০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে দেড় ঘন্টা। কাভার্ড ভ্যান চালক জসিমউদ্দিন বলেন, গত ১০ বছর যাবৎ এ এলাকার বাজারগুলোতে পণ্য দিতে আসি। সড়কের অধিকাংশ জায়গায় ছোট-বড় গর্ত। গাড়ি চলে হেলেদুলে। খানাখন্দে চাকা পড়লে গাড়ি তোলা দুষ্কর হয়ে যায়। আবার উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। নাকাল অবস্থা। এই অবস্থায় গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, মাকড়াইল থেকে কালিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ বছরেও সংস্কার হয়নি। তাই গর্ত ক্রমন্বয়ে বড় হয়েছে। মরিচপাশা ও রঘুনাথপুর অংশে দু-এক বছর অন্তর সংস্কার হয়। তা ছয় মাসও টেকে না। অন্য অংশগুলো গত ৭-৮ বছর আগে সংস্কার হয়েছে। পরে আর সংস্কার করা হয়নি।

শালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান তসরুল ইসলাম জানান, শালনগর ইউনিয়ন অংশে তাঁর ব্যক্তিগত অর্থে বড় গর্তগুলো খোয়া দিয়ে ভরাট করেছেন। এতে ওই অংশে দুর্ভোগ কিছুটা কমেছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে বার বার উপর মহলে জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী হরশিত কুমার শাহা বলেন, ২০ কিলোমিটার সড়কের কিছু অংশে মেরামতের কাল এখনই করা হবে। বাকি অংশের কাজ করার জন্য ঢাকায় সংশ্লিষ্ঠ বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো (অর্থ বছরে বরাদ্দ চাওয়া) হয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসলে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। তবে হত দিনের মধে কাজ করা হরে সেটি বলতে পারেনি এই কর্মকর্ত।

নড়াইল জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু ছায়েদ জানান, এটি অনেক ব্যাস্ততম সড়ক। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। সড়কের কিছু কিছু স্থানে পিজ উঠে গেছে। সড়কের যে সব জায়গায় চলাচলে অসুভিদা হচ্ছে বরাদ্দ এলে সড়কটির সেই সব জায়গা মেরামত করা হবে। আশা করি বর্ষা মৌশুমের পরে কাজ শুরু করতে পারবো।

সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে ভুক্তভোগিদের ভোগান্তির অবসান ঘটাবে এমনটি প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।