সাজেক বৃত্তান্ত

548
58

আশফাক আহমেদ আবির

এই ছেলেটার মত হাজারো পাহাড়ি ছেলেমেয়েদের জায়গা এটা। আমরা ওইখানে অতিথি। সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার পথে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েগুলা কত সুন্দর করে হাত নাড়িয়ে পর্যটকদের স্বাগত জানাচ্ছিল। আর আমাদের মত তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলার মুখোশ ধারি অসংখ্য নিকৃষ্ট শ্রেণীর মানুষজন পাহাড়গুলার কি অবস্থা করছে দেখেন।

selfie, কিংবা dslr ক্যামেরার চকচকে ছবিতে তো পাহাড়ের এই কষ্টতো কখনই ধরা পড়তে দেখলাম না। আমার বন্ধু বান্ধবদের তোলা ছবি, কিংবা ফেইসবুকের বেশ কিছু ট্যুর গ্রুপে ভ্রমণকারীদের ছবি দেখলে সাজেকেকে কেবলই পাহাড়ের স্বর্গভূমি মনে হবে। আসলেই তাই। অপরূপ, অভাবনীয় সুন্দর আমাদের এই পাহাড়ি অঞ্চল। আর তার চেয়ে সুন্দর এইখানে বসবাস করা মানুষগুলা।

ট্যুর গ্রুপের কথা যখন আসলই, কংলাক পাহাড়ের এই বেঞ্চে বসে দেশের নামকরা কোন এক ট্যুর গ্রুপের টি শার্ট পরা ৪-৫ জন বসে বসে কলা আর কি কি জেনো খাচ্ছিলেন। এতটুকু দ্বিধা না করেই কলার খোসা পাহাড়ের এই ময়লার স্তূপে ফেললেন একজন। পিছন থেকে আমি যেয়ে তাকে জানা জিজ্ঞেস করতেই একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। কলা খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল আপাতত। তাদের চোখের চাহনি বলছে, আশেপাশেতো এত মানুষ, কেউত কিছু বলল না, আপনার এত মাথা ব্যথা কেন? জী, আমার মাথা না শুধু, পুরা শরীরই ব্যথা আপনাদের কাণ্ডকর্ম দেখে। আমি চাইলে ওই ট্যুর গ্রুপের নামসহ ছবি তুলে পোস্ট করতে পারতাম। এতে হয়ত তারা আর কিছুদিনের জন্য লজ্জিত কিংবা রাগান্বিত হতেন। দুই একটা গ্রুপে হয়ত দুই এক দিনের জন্য উত্তপ্ত কমেন্ট বিনিময় হত। এছাড়া কিছু হত বলে আমার মনে হয় না।

পাহাড়ের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা প্রায় সব গুলা কটেজ কিংবা হোটেলের পেছনে একই দৃশ্য। দুই এক জায়গায় দেখলাম এরচেয়েও বেশি ময়লা আর প্লাস্টিকের বোতলের স্তূপ। ধরেন, আপনার ঢাকা শহর কিংবা আপনি নিজ শহরের ঝকঝকে এপার্টমেন্ট বা ভিলা বাসার সামনে এসে কেউ প্রতিদিন একটু একটু করে পায়খানা করে দিয়ে গেল। এভাবে বছরের পর বছর পার হয়ে গেল। যেহেতু আপনি সামজিক এবং অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে “পায়খানা করে যাওয়া” মানুষগুলার চেয়ে “পিছিয়ে”, তাই আপনি তাঁদের কিছু বলতে পারছেন না, উল্টো তাঁদের সেবা যত্ন করছেন, পায়খানার পর সুগন্ধিজুক্ত টয়লেট টিস্যু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করছেন। খারাপ কথা লিখতে বাধ্য হলাম এই “পায়খানা করে যাওয়া” মানুষগুলার কারণেই । আশা করি তারা খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবেন।

ছবি ও কথাঃ আশফাক আহমেদ আবির