নড়াইল পৌরসভার টোল প্রভাবশালী মহলের চুরি করে আদায়!

0
30
নড়াইল পৌরসভার টোল প্রভাবশালী মহলের চুরি করে আদায়
নড়াইল পৌরসভার টোল প্রভাবশালী মহলের চুরি করে আদায়

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইল পৌরসভার নামে বাসসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। মেয়রের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী মহল চুরি করে ভুয়া রশিদ ছাপিয়ে টোল আদায় করছে। উল্টো পৌরসভার কর্মচারিরা নতুন বাস টার্মিনালের সামনে বৈধ টোল আদায় করতে গেলে থানা পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে। এমনকি ৪ মাসে পৌর টোল আদায়ের সময় ৮জনকে আটক ও জরিমানা করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে নড়াইলে প্রবেশকারী পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে ২শ টাকা (নড়াইল জেলা বাস মিনিবাস পরিবহন মালিক সমিতির কল্যাণ তহবিলের নামে ১শ টাকা, জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ৫০ টাকা এবং নড়াইল পৌরসভার বাস টার্মিনালের নামে ৫০ টাকা) নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু ও নড়াইলের কালনা সেতু চালু হওয়ায় প্রতিদিন শ’শ গাড়ী নড়াইলের ওপর দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের কাছ থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন নড়াইল বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নড়াইল-ঢাকা সড়কের পাশের পৌরসভার ৪জন কর্মচারি দাড়িয়ে রয়েছে। এ সময় পৌরসভার কর্মচারি মুন্সি হাসিবুর রহমান জানান, সকালে নড়াইলে প্রবেশকারী পরিবহনগুলোকে সিগনাল দিয়ে টার্মিনালের কাউন্টারে এনে পৌর টোল আদায়ের চেষ্টা করতে গেলে সদর থানা পুলিশ বাঁধা দেয়। কিন্তু জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের টোল আদায়কারীরা একই জায়গায় দাড়িয়ে সিগনাল দিয়ে পরিবহনগুলোকে টার্মিনালে তাদের নিজস্ব কাউন্টারে নিয়ে টোল আদায় করলেও তাদের কিছু বলছে না।

এ সময় নড়াইল-ঢাকা সড়কের পাশে দাড়িয়ে থাকা জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের টাকা আদায়কারী খোকন বিশ্বাস বলেন, টার্মিনালের মধ্যে নিজস্ব কাউন্টার থেকে আমরা শুধু শ্রমিক ইউনিয়নের দুঃস্থ ও পংগু শ্রমিকদের নামে ৫০ টাকা করে তুলছি। অন্য কোনো সমিতির নামে টোল আদায় করছি না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে অভিযোগ করেছেন, এই কাউন্টার থেকেই নড়াইল পৌরসভার নামে ৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে যশোর থেকে ঢাকায় নিয়োমিত চলাচলকারী সোহাগ পরিবহনের এক সুপারভাইজার দুপুরে রূপগঞ্জ বাসষ্টান্ড মোড় থেকে নড়াইল পৌরসভা, জেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতির নামে ৩টি রশিদ দেখিয়ে বললেন, নড়াইল বাস টার্মিনালের নীচ থেকে তার কাছ থেকে ২শ টাকা টোন নেওয়া হয়েছে। এভাবেই তাদের প্রত্যেক গাড়ীকে ২শ টাকা করে দিতে হয়।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা নড়াইল প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, গত বছর ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকায় টার্মিনাল বিক্রি করলেও মেয়াদ শেষের ৪ মাস পুলিশি বাঁধায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার টোল আদায় করতে পারেনি। এ বছর ৬ জন ঠিকাদার টার্মিনালের দরপত্র ক্রয় করলেও পুলিশি ঝামেলার ভয়ে কেউ দরপত্র জমা দেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে পৌরসভার কর্মচারি ১ বৈশাখ থেকে পৌর পৌরসভার নির্ধারিত ৩০ টাকা টোল আদায় করতে গেলে থানা পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে। বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নকে সিগনাল দিয়ে টার্মিনালে নিজস্ব কাউন্টারে পরিবহনগুলো আনার সুযোগ দিলেও আমাদের দিচ্ছে না। পৌরসভার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, বিদ্যুৎ বিলের সাবসিডি, কর্মচারিদের বেতনসহ বিভিন্ন আপদকালীন ব্যয় নির্বাহ করতে টোলের অর্থ খুবই জরুরি। এভাবে বাঁধা দিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে জানাবো এবং আইনি পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজনে পৌর কর্মচারিরা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবে। পৌরসভার নামে পৌর টোল তোলা হচ্ছে এ বিষয়ে বলেন, প্রভাবশালী একটি মহল পৌরসভার নামে ভুয়া রশিদ ছাপিয়ে চুরি করে এ টোল আদায় করছে। বিষয়টি ইতপূর্বে থানা পুলিশকে জানিয়েছি। নবাগত জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি জানালে তিনি আইন-শৃংখলার মিটিং-এ তোলার কথা বলেছেন। এদিকে টোল আদায়ে বাঁধা বিষয়টি পুলিশ সুপার মহোদয়কে কয়েকবার জানালেও তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেননি।

এ বিষয়ে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোসাঃ সাদিরা খাতুন বলেন, রাস্তায় দাড়িয়ে কোনো প্রকার চাঁদা বা টোল আদায় করতে দেওয়া হবে না। টার্মিনালে গিয়ে টোল আদায় হোক তাতে কোনো সমস্যা নেই। জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে টোল আদায়কারীরা রাস্তার পাশে দাড়িয়ে টোল আদায় করলেও পুলিশ তাদের কিছু বলছে না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে কারো পক্ষ নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায় তাহলে আমাদের একটু জানাবেন। তারপরও এ ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখছি।