নড়াইলে বেদে সম্প্রদায়কে নিয়ে দিনব্যাপী ভিন্নরকম পিঠা উৎসব

0
10
নড়াইলে বেদে সম্প্রদায়কে নিয়ে দিনব্যাপী ভিন্নরকম পিঠা উৎসব
নড়াইলে বেদে সম্প্রদায়কে নিয়ে দিনব্যাপী ভিন্নরকম পিঠা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলে বেদে সম্প্রদায়কে নিয়ে অন্যরকম পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিঠা উৎসবের পাশাপাশি দিনব্যাপী নানা আনন্দ অনুষ্ঠানে মেতে উঠে বেদে সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সববয়সী মানুষ। এই আনন্দ-উৎসবকে ঘিরে বর্ণিল হয়ে উঠে ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের প্রতিটি খুপড়ি ঘর। জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন উর্দ্ধতন কর্তকর্তাদের উপস্থিতি পিঠা উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া একদল শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা ‘‘স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে নড়াইল শহর সংলগ্ন সিমাখালী শেখ রাসেল সেতুর দক্ষিণপ্রান্তে ভাসমান বেদে পল্লীতে আয়োজন করা হয় ভিন্ন রকমের এই পিঠা উৎসব। কলা গাছ ও ফুল দিয়ে তৈরি করা হয় একটি দর্শনীয় গেট। বেদে পল্লীকে বেলুন ও ফুল দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। পিঠা উৎসবের আনন্দ যেন ঈদ আনন্দের চেয়ে কোন অংশে কমতি ছিলো না।

বেদে পল্লীতে শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয় পিঠা তৈরির ধুম। চুলায় তৈরি হয় গরম গরম ভাপা পিঠা, চিতই সহ নানা পিঠা। ভাসমান বেদে পল্লী নারী ও শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ পিঠা খাওয়ার উৎসবে মেতে উঠেন। পিঠা উৎসবে চিতই, রস চিতই, ভাপা, তালপিঠা, ভাজাপিঠা, পাটিসাপ্টা, কুলিপিঠা, দুধপিঠা, ডিমপিঠাসহ ১২ প্রকারের পিঠা তৈরি করা হয়। অতিথিসহ বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন যে যতটা পেরেছেন আয়েশ করে পিঠা খেয়েছেন। বেদে পল্লীর ১৬টি খুপড়ি ঘর যেন আনন্দ-উৎসব ঘিরে বর্ণিল হয়ে উঠে। এছাড়া নেঁচে-গেয়ে উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে বেদে পল্লীর শিশুরা।

ভাসমান বেদে পল্লীর সদস্য ফরিদা বেগম বলেন,‘ গত ৫বছরের মধ্যে এসব পিঠা খাওয়ার সুযোগ হয়নি। আজ আপনারা আমাদের ভালবেসে পিঠা খাওয়ালেন। অনেক রকমের পিঠা খেয়েছি। খুব ভাল লেগেছে। আমরা সারাজীবন আপনাদের কথা মনে রাখবো।’
বেদে পল্লীর সরদার মোঃ রোকন সরদার বলেন, ‘ আমরা গরীব দুখি মানুষ। আপনারা আমাদের পিঠা বানিয়ে খাওয়াচ্ছেন। আমরা ২/৩ বছরের মধ্যে পিঠা খাইনি। আমাদের বেদে পল্লীর সবাই পিঠা খেতে পারছি। আমরা শীতের পোষাক পেয়েছি। ডিসি স্যারের খাদ্যসামগ্রী উপহার পেয়েছি। আমরা পিঠা খেতে পেরে এবং উপহার পেয়ে খুব খুশি। আমরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বেড়াই এবং আয়-রোজগার করে সংসার চালাই। আমাদের যদি সরকার জমি ও ঘর দিতো তাহলে আমরা স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যেতাম। আমরা সবার সঙ্গে মিলে মিশে বসবাস চরতে চাই।’

ব্যতিক্রমধর্মী এতোকিছুর আয়োজনের স্বপ্নদ্রষ্টা স্বপ্নের খোজে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মির্জা গালিব সতেজ। সতেজ প্রায় দুই বছর ধরে ‘স্বপ্নের পাঠশালা’র মাধ্যমে বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সংগঠনটি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ অর্জন করেছে সংগঠনটি। বেদে সম্প্রদায়সহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আরো সৃজনশীল কাজ করে যেতে চান স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। এক প্রতিক্রিয়ায় সজেত বলেন, ‘বেদে সম্প্রদায় মুলত ভাসমান। তারা একস্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরে বেড়ায়। বেদে সম্প্রদায়ের সদস্যরা অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই তাদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে পিঠা উৎসবের আয়োজন। বেদে পল্লীর সদস্যরা মনপ্রান ভরে পিঠা খেয়েছে। তাদেরকে শীতবস্ত্র দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার সামগ্রী উপহার দিয়েছেন। আগামীতেও যাতে বেদে সম্প্রদায়ের জীবন মানোন্নয়নে কাজ করা যায় সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম বলেন, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের মতো প্রান্তিক ও অধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলে সমাজে কেউ আর পিছিয়ে থাকবে না।’

নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ পিছিয়ে পড়া নৃগোষ্ঠীর মধ্যে বেদে সম্প্রদায়কে সদাশয় সরকার অত্যান্ত আপন ভেবে তাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত কর্মকান্ডকে উৎফুল্ল করার জন্য আমাদের নির্দেশনা রয়েছে। আজকে বেদে পল্লীতে পিঠা উৎসবের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। বেদে সম্প্রদায়ের উন্নয়নে জেলা প্রশাসন সব সময় পাশে আছে। স্বপ্নের খোজে ফাউন্ডেশনের মতো জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংগঠন এভাবে যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।’

দিনব্যাপী এই পিঠা উৎসবে বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম, জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা রতন কুমার হালদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর শরফুল আলম লিটু, আউড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম পলাশ, সমাজ সেবক ফয়সাল মুস্তারী, সাংস্কৃতি কর্মী স্বপ্ন রায় সহ স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী সহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।