নড়াইলে শ্রমিক সংকটে কৃষকদের পাশে ৩১৫জন শিক্ষার্থী, তিনদিন ধরে ধানকাটা উৎসব

0
162
নড়াইলে শ্রমিক সংকটে কৃষকদের পাশে ৩১৫জন শিক্ষার্থী, তিনদিন ধরে ধানকাটা উৎসব
নড়াইলে শ্রমিক সংকটে কৃষকদের পাশে ৩১৫জন শিক্ষার্থী, তিনদিন ধরে ধানকাটা উৎসব

শামীমূল ইসলাম

শুধু ধান কাটা নয় গত তিন দিনে ১৫ বিঘা জমির বোরো ধান কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে পৌছে দিলেন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বোরো ধানের ভরা মওসুমে অসহায় কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে এ ব্যতিক্রমী ও মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন নড়াইল সদরের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৫ মে) দুপুরে তিন দিনব্যাপী ধানকাটা উৎসব শেষ হয়েছে। শুক্রবার (১৩ মে) সকাল থেকে মাঠে নেমে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সদরের গুয়াখোলা গ্রামের প্রতাপ কুমার পাল জানান, তাদের এলাকায় বর্তমানে ধানকাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তিন বেলা খাবারসহ জনপ্রতি শ্রমিকের মূল্য গুণতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। তাও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। গুয়াখোলা স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মিলে আমার ৬০ শতক জমি ধান প্রায় ১০ মিনিটে কেটে দিয়েছেন। এই দুর্যোগের সময় তাদের পাশে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি।

অপূর্ব সরকার, হাসিদা রানী, মহাদেব সরকারসহ এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, স্কুলের ছেলে-মেয়েরা যে উদ্যোগ নিয়ে আমাদের ধান কেটে দিচ্ছে, তাতে আমরা মহাখুশি। অনেক উপকার হচ্ছে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌমিত্র গোস্বামী বলে, শ্রমিক সংকটকালে আমাদের বিদ্যালয়ের ৩১৫জন ছাত্রছাত্রী মাঠে নেমে ধান কেটে দিয়েছি। সোমা ও স্বর্ণালি বিশ্বাসসহ বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে কৃষকদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে আমরা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, বোরো ধানের ভরা মওসুমে বর্তমানে শ্রমিক সংকট চলছে। পাশাপাশি ‘অশনি’ ঝড়ের প্রভাবে গত তিন থেকে চারদিন ধরে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পানি জমে অনেক ধানক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এলাকার গরীব কৃষকের শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি, শনিবার সংরক্ষিত ছুটি ও রোববার বৌদ্ধপূর্ণিমার ছুটি মিলে তিনদিন ধানকাটা কর্মসূচী পালনের। এই তিন দিনে অন্তত ২০জন কৃষকের প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবসময় ভালো ও মানবিক কাজের সঙ্গে থাকতে চান। এই ধারাবাহিকতায় আমরা ধান কাটছি। ভবিষ্যতেও ভালো কাজ করতে চাই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, এবার ৪৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। সময় মতো বীজ, সারসহ অন্যান্য উপকরণ ঠিক মতো পাওয়ায় ধান চাষে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ধানের দাম সন্তোষজনক হওয়ায় খুশি কৃষকেরা।