নড়াইলে বোরো ধান কাটা নিয়ে কৃষকের চিন্তা; একদিকে শ্রমিকের সংকট, অন্যদিকে আসানি

0
17
নড়াইলে বোরো ধান কাটা নিয়ে কৃষকের চিন্তা; একদিকে শ্রমিকের সংকট, অন্যদিকে আসানি
নড়াইলে বোরো ধান কাটা নিয়ে কৃষকের চিন্তা; একদিকে শ্রমিকের সংকট, অন্যদিকে আসানি

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কাটা নিয়ে কৃষকের কপালে ভাঁজ। একদিকে শ্রমিকের সংকট অন্যদিকে ঘূর্ণীঝড় আসানির আশংকায় কৃষক শংকিত। ৪০ ভাগ কৃষক এখনও ধান কাটতে পারেননি। সকাল থেকে সন্ধ্যা একজন শ্রমিককে ৩ বেলা খাবার এবং ৮শ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে আসানির প্রভাবে নড়াইলের কোথাও কোথাও মাঝে মধ্যে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, দমকা বাতাস ও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন দেখা দিয়েছে। অনেক জমির ধান মাটির সাথে হেলে পড়েছে।

কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, নড়াইলে এ বছর ৪৯ হাজার ৯শত ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে এবং ৩ লাখ ১৮ হাজার মেঃটন ধান ও ২ লাখ ১২ হাজার ৫৩৭ হেক্টর মেঃটন চালের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসেব অনুযায়ী ১ একর জমির ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলতে ২৫ জন শ্রমিক প্রয়োজন হয়। বর্তমানে জেলায় ১ লাখ ১২ হাজার ৩৫জন বোরো চাষী রয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সরকারি ভর্তুকিকৃত ১৬টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ৭১টি রিপার মেশিন ধান কাটায় ব্যবহৃত হলেও জেলায় বোরো শ্রমিকের সংকট রয়েছে।

সদরের বাহিরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক দীপক বিশ্বাস জানান, বোরো চাষে প্রতিমন ধানে এক হাজার টাকার বেশী খরচ পড়ে। বাজারে বর্তমানে প্রতি মন ধান সাড়ে ৯শ টাকার বেশী বিক্রি হচ্ছে না। এবার কারেন্ট পোকায় অর্ধেক ধান চিটা হয়ে গেছে। বাহিরডাঙ্গা বিলের অর্ধেক ধান এখনও কাটা হয়নি। এর মধ্যে অনেক ধান কেটে বিলে রেখে দেওয়া হয়েছে। এখনও তা বাড়িতে আনা হয়নি। এর মধ্যে বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ শুরু হলো। কপালে কি আছে তা ভগবানই জানেন।

ইতনা ইউনিয়নের পাংখারচর গ্রামের কৃষক ইব্রাহীম মোল্যা ও রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রায় অর্ধেক শ্রমিকই বাইরের জেলা থেকে আনতে হয়। ১ একর জমির ধান কাটতে ৩০টি শ্রমিক প্রয়োজন। তাদের এক বেলা খাওয়া দিতে হয়। তাও এবার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

জেলার কালিয়া উপজেলার পশ্চিম খড়রিয়া গ্রামের কৃষক শফিকুর রহমান নুনা বলেন, অন্যান্যবার আমাদের এলাকায় সাতক্ষীরা ও চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে অনেক শ্রমিক আসলেও এবার তারা আসেনি। তিন বেলা খাবার এবং সকাল-সন্ধ্যা ১০ ঘন্টা ৮শ টাকা মজুরি তাদের বলা হলেও তারা আসছে না। তিনি আরও বলেন, শুধু ধান থেকে উৎপাদন খরচ ওঠে না বলে বিছালীর ভালো দাম থাকায় এটি বিক্রির প্রয়োজন পড়ে। এই বিছালী সংরক্ষণের জন্য জমির ধান কাটতে একটু দেরী হয়ে যায়। ফলে আমরা অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন,এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০ ভাগের বেশী ধান কাটা হয়েছে। প্রতি বছর সাতক্ষীরা, মাগুরা, চাপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চল থেকে শ্রমিক আসলেও ঈদের কারণে আসতে দেরী হলেও কিছু এসেছে। আসানির প্রভাবে যদি একদিন বৃষ্টি হয় তাহলে সমস্যা হবে না, যদি টানা বর্ষণ হয় তাহলে কি হবে সেটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।