কালিয়ায় হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ

0
18
নড়াইলে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, গ্রাম্য সালিশে সাড়ে তিন লাখ টাকায় সমঝোতা!
নড়াইলে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের কালিয়ায় ক্লিনিকের অপারেশান থিয়েটারে হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় গর্ভের সন্তানসহ শিউলী বেগম (২৫) নামে এক প্রসুতির মৃত্যুর হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলার বড়দিয়া খান রওশন আলী প্রাইভেট ক্লিনিটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এর আগে গত ৬মে দুপুরের ওই ঘটনায় নড়াইলের সিভিল সার্জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাজল মল্লিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ৯ মে সোমবার তিনি ক্লিনিকটি বন্দের নির্দেশ দিয়েছেন। হাসপাতাল সুত্রে নির্দেশের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে । সন্তানসহ প্রসুতির জীবনের মূল্য সাড়ে তিন লাখ টাকা নির্দ্ধারন করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্ঠা করা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মো. জিন্নাত আলীর স্ত্রী ও কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার পেচিডুমুরিয়া গ্রামের চৌকিদার আকবর হোসেন মোল্যার মেয়ে এক সন্তানের জননী শিউলী বেগম দ্বিতীয় সন্তানের জন্মদানের জন্য ৬মে সকালে ওই প্রাইভেট ক্লিনিকে গেলে সিজারিয়ানের মাধ্যমে গর্ভের সন্তান ভ’মিষ্ট করতে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ভর্তি করা হয়। এবং ওইদিন দুপুরে অপারেশান থিয়েটারে নেয়ার পর অবশজনিত ইনজেকশান দেয়ার পরই ওটিতে তার মৃত্যু হয়। মৃত শিউলীর নাকে অক্সিজেন ধরিয়ে কৌশলে মৃতদেহ এ্যাম্বুলেন্সে তুলে খুলানা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানের নাম করে ক্লিনিক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে স্বজনদের কাছে ধরা পড়ে যায় এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ঠিক সেই সময় ক্লিনিক মালিকের ডাকে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। আর সেই ফাঁকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় কথিত হাতুড়ে ডাক্তার।

স্বজনরা হাতুড়ে ডাক্তারের আনাড়িপনা ও দায়িত্ব হীনতার কারনে অনাগত সন্তানসহ প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ কেেরছেন। তবে দরিদ্র ইজিবাইক চালক জিন্নাত আলীর স্ত্রী শিউলীর রেখে যাওয়া ৪ বছরের মেয়ে জামিলার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মিমাংশার পথ বেছে নেন । স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে পুলিশের উপস্থিতিতে বিকাল পর্যন্ত চলা শালিশ বেঠকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় নিস্পত্তির পর রাতেই শিউলীকে তার শ্বশুর বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ক্লিনিকে তালা ঝুলিয়ে কর্মকর্তা কর্মকর্মচারিরা লাপাত্তা হয়ে যায়।

ঘটনাটি ব্যাপক জানাজানি হলে নড়াইলের সিভিল সার্জন গত শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাজল মল্লিককে প্রধান করে কালিয়া হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবাদুল গনি ও ডা. সুজয় রায়কে সদস্য করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে চার কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। গত রোববার সারাদিন তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ জিন্নাত আলী বাড়িতে গিয়ে তার জবানবন্দি গ্রহনসহ বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলেছেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. কাজল মল্লিক বলেছেন, রোববার সারাদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ বিভিন্ন আঙ্গিকে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে অনঅনুমোদিত ওই ক্লিনিকে নিয়মিত কোন ডাক্তার বা সেবিকা থাকার প্রমান মেলেনি। একটি ক্লিনিক বা হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যে সকল শর্তাবলী রয়েছে সেখানে তার কোনটিই নেই। ক্লিনিকটিতে মালিক পক্ষের কোন লোকজন না পাওয়ায় কথিত হাতুড়ে ডাক্তারের পরিচয় জানা যায়নি। সেখানে রক্ষিত ডাক্তারদের নামের বিলবোর্ডে যাদের নাম রয়েছে তারা কোন ধরনের চিকিৎসক তা জানা যায়নি।

অধিক মুনাফার লোভে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে একটি ক্লিনিক বা প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ানের মত গুরুত্বপূর্ন অপারেশান মোটেই আইন সিদ্ধ নয়। তাই স্বাস্থ্য সেবার অনুপযোগী ওই অনুমোদনহীন ক্লিনিকটিকে বন্ধের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে এবং নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। হাতুড়ে ডাক্তারের ভূলে একজন প্রসুতি ও তার গর্ভের অনাগত সন্তানের মৃত্যুতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।