নড়াইল সদর হাসপাতালে ১২জন আউটসোর্সিং কর্মীর জায়গায় কাজ করছেন ৪৬ জন!

5
19
শিশুর মৃ'ত্যু
নড়াইল সদর হাসপাতাল

শামীমূল ইসলাম

নড়াইল সদর হাসপাতালে ১২জন আউটসোর্সিং কর্মীর জায়গায় কাজ করছেন ৪৬ জন। এ ১২জনের বেতন-ভাতা সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিলেও ৭ মাস বেতন পাচ্ছেন না। অধিকাংশ আউটসোর্সিং কর্মী এখন হাসপাতালের সামনে বিভিন্ন ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার কাজে লিপ্ত এবং অনেককে এ কাজে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, গত ১৮ডিসেম্বর নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা সদর হাসপাতালে এক ঝটিকা সফরে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মে ৮জন চিকিৎসক ও ২জন মেডিক্যাল প্যাথলজিষ্টকে, খাবারের দায়িত্বে থাকা ১জন কর্মচারিকে শোকজ এবং রোগিদের খাবার কম দেওয়ায় আউটসোর্সিং-এর ১কর্মচারিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে এমপি মাশরাফি ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল সদর হাসপাতালে আকস্মিক পরিদর্শনে হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকায় ৪ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশসহ সামগ্রিক সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিলেও অনেক নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে।

জানা গেছে, ১শ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে বর্তমানে ১জন ইলেকট্রিশিয়ান, ১জন পাম্প অপারেটর, ১জন সহকারী বাবুর্চী, ১জন মালি, ৪জন নিরাপত্তা প্রহরী, ৩জন আয়া ও ১জন পরিচ্ছন্ন কর্মী মোট ১২জন নিয়োগপ্রাপ্ত আউটসোর্সিং কর্মী রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের সুপারিশে বর্তমানে ৪৬জন কাজ করছে। ইলেকট্রিশিয়ান ও পাম্প অপারেটররা ১৭ হাজার ১৩০ টাকা, বাবুর্চী ও মালি পদে ১৬ হাজার ৪৩০ টাকা এবং বাকি পদের কর্মীরা ১৬ হাজার ১৩০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও এক একজন গড়ে ৪ হাজার টাকা বেতন পান। ১২জনের প্রাপ্ত টাকা সবার মধ্যে সমন্বয় করেন ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত রোজার ঈদের সময় বেতন-ভাতা পেয়েছেন, আর পাননি।

লোহাগড়ার উপজেলার বাড়িভাঙ্গা গ্রামের ইদ্রিস শেখের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, তিনি হাতে-পায়ের সমস্যা নিয়ে শনিবার (২২জানুয়ারী) নড়াইল সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে মেডিকেল অফিসার ডা. দীপংকর কুমারকে দেখালে তিনি এক্সরে করতে বলেন। এ সময় ওই চিকিৎসকের পাশে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, স্যার ভিক্টোরিয়া ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেন সেখান থেকে টেস্ট করান। তখন ওই রোগি ৭শ টাকা দিয়ে সেখান থেকে এক্সরে করান। কিন্তু সদর হাসপাতাল থেকে এক্সরে করলে এর অর্ধেক টাকা লাগতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসাতালের একাধিক আউটসোর্সিং কর্মী জানান, হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারির হাসপাতালের সামনে একটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে। এই কর্মচারি হাসপাতালের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় তিনি আমাদের ও এমএলএসএস কর্মচারিদেরকে প্রভাবিত করে থাকে। ফলে হাসপাতাল থেকে রোগি ভাগিয়ে তার ডায়ানোস্টিক সেন্টারে রোগির বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ রোগী না দিলে বলে থাকেন, ‘কি তোমার কোনো খোঁজ-খবর নেই কেন’ ? অনদিকে ১৫ জানুয়ারী বিকেলে আউটসোর্সিং কর্মীদের নিয়ে হাসপাতালের সামনে একটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের প্রভাবশালী মালিক কর্তৃপক্ষ এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় তাদেরকে ওই ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন রোগির পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে।

সদর হাসপাতালের আউটসোর্সিং-এর ঠিকাদার মোঃ মাহবুব রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দ না পাওয়ায় তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তবে খুব শীঘ্রই এ বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, ১২জনের জায়গায় বর্তমানে কাজ করছেন ৪৬জন। রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন বিবেচনায় দিন দিন এসব কর্মী বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন। অনেক সময় আউটসোর্সিং কর্মীরা হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের সাথে যুক্ত হবার কথা শোনা যায়। তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (চলতিদায়িত্বে) ডা. আসাদ-উজ-জামান মুন্সী বলেন,গত ১ মাস আগে আউটসোর্সিং কর্মীদের বকেয়া বেতনের জন্য স্বাস্ব্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রাইভেট ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বলেন, কিছু আউটসোর্সিং কর্মীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগের সতত্যা পাওয়া পাওয়ার গত ৪ মাস আগে ৩জনকে হাসপাতাল থেকে বের কওে দেওয়া হয়েছিল। পরে তারা ভুল স্বীকার করে পূনরায় কাজে যোগদান করেছে।

সদর হাসপাতালের সদ্য যোগদানকারী তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, হাসপাতালে যোগদান করেই আউটসোর্সিং কর্মীসহ কিছু অনিয়মের খবর কানে এসেছে। ১২জন আউটসোর্সিং কর্মীর জায়গায় কাজ করছে ৪৬জন। এটা দেশের কোথাও দেখিনি। তারপরও যদি জরুরি কাজ সম্পন্ন না হয় তাহলেতো দুঃখজনক ঘটনা। খুব শীঘ্রই হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় এসব বিষয় তুলে ধরা হবে। যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের প্রমান পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।