নড়াইলের কালিয়ার আশ্রায়ণ প্রকল্পের ১৮পরিবার পানি বন্দি

0
16
নড়াইলের কালিয়ার আশ্রায়ণ প্রকল্পের ১৮পরিবার পানি বন্দি
নড়াইলের কালিয়ার আশ্রায়ণ প্রকল্পের ১৮পরিবার পানি বন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নড়াইলের কালিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে। অপরিকল্পিতভাবে ফসলের বিলের মধ্যে নির্মিত উপজেলার আটঘরিয়া আশ্রায়ণ প্রকল্পটি এখন বাসিন্দাদের গলার কাটায় পরিনত হয়েছে। গত প্রায় দুই মাস ধরে সেখানে পানি বন্দি হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৮টি পরিবারের প্রায় শতাধিক মানুষ। অসহায় পরিবারগুলো উপহারের ঘর পেয়েও নিরাপদে বসবাস করতে পারছেনা বলে তাদের অভিযোগ। অন্যের বাড়িতে রাত কাটানোসহ তাদের যেখানে সেখানেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের বাসিন্দারা। অপরদিকে পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো।

উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সুত্রে জানা যায়, জমি নেই ঘর নেই প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার “স্বপ্ন নীড়” হিসাবে গত অর্থ বছরে কালিয়া উপজেলার ইউনিয়ন গুলোতে সরকারি খাস জমিতে ২৫০ পরিবারে জন্য “স্বপ্ন নীড়” নির্মাণ করা হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর গুলো ছিন্নমূল উপকার ভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তারই অংশ হিসাবে নির্মাণ করা হয়েছে উপজেলার চাচুড়ি ইউনিয়নের আটঘরিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের “স্বপ্ননীড়”পেয়েছেন ওই ইউনিয়নের কালডাঙ্গা, বনগ্রাম, সরকেলডাঙ্গা, আরাজী বাসগ্রাম, আটঘরিয়া, কলিমন ও আটলিয়া গ্রামের ছিন্নমূল বাস্তুহারা ১৮টি পরিবার। স্থায়ীভাবে পাকা ঘর এবং জমি পেয়ে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু মাস না যেতেই সেই আনন্দ ম্লান হয়ে এখন তাদের গলার কাটায় পরিনত হয়েছে। নতুন ঘর ছেড়ে পুরানো সববাসের জায়গায় ফিরে যাবার উপায় না থাকায় তাদেরকে পানিবন্দি হয়েই বসবাস করতে হচ্ছে বলে প্রকল্পের বাসিন্দার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিনে আশ্রায়ণ প্রকল্পটিতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পটির চার পাশেই পানিতে সয়লাব। প্রায় ৩ ফুট পানির মধ্যে ভাসছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। পাশের একটু উচু জায়গায় চুলা তৈরী করে সেখানে পালাক্রমে রান্না চলছে, বৃষ্টি হলেই তাও বন্ধ হয়ে যায়। ঘরের ভিতরে দিনরাত পানি সেচে চলেছেন নারীরা। বাথরুমে হাটু পানি ভর্তি তাই রাতের বেলা এখানে-সেখানে প্রাকৃতিক কাজ সারেন নারীরা।

দিনের চিত্র থেকে রাতের অবস্থা আরো ভয়াবহ। বিদ্যুতের ব্যবস্থা এখনও হয়নি, তাই সন্ধ্যা হলেই সাপের ভয়ে ঘরের মধ্যে পাতা খাটের ওপর কোন রকমে রাত কাটান তারা। ছোট শিশুদের পানিতে ডুবে যাবার ভয়ে মায়েরা জেগেই রাত কাটান তারা। ইতিমধ্যে সাপের দংশনে মেহেদী (৭) নামে এক শিশু আহত ও হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তালের ডোঙায় চড়েই এদিকে ওদিকে চলাফেরা করতে হচ্ছে তাদেরকে।

আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মোস্তফা শেখ বলেন, ঘর পেয়ে খুব ভালো লাগছিলো, জীবনে এমন ঘর করতি পারবো না। কিন্তু মেঝে কোন রকমে সিমেন্ট লেপে গেছে, তা উঠে গর্ত তৈরী হচ্ছে। পিলারে খেমছি (চিমটি) দিলি গুড়ো গুড়ো হয়ে পড়ছে।

৭০ বছরের কোহিনুর বেগম বলেন, মাঠের থেকে রাইন্ধে ঘরে আইনে পানিতি দাড়ায় খাচ্ছি, বাথরুমের জ্বালা, পানি খাওয়ার জ্বালা ও ঘুমানোর জ্বালা। ৬৫ বছরের তাসলিমা বেগম বলেন, পানিতে ভাইসে রইছি আজ দুইমাস। রান্নার জায়গা নাই। কেউ তো আমাগের খোঁজও নেলো না।

আরেক বাসিন্দা আসমাউল শেখ জানান, সরকারী বাড়ি পাইয়েও আমরা অন্যের বাড়ি থাইকে বেড়াচ্ছি, তালি এই ঘর পাইয়ে আমাগের কি কাজ হলো ? পুস্প রানী বলেন, ছোট ছেলে নিয়ে থাকি একে সাপের ভয় এরপর পানিতে পড়ে যাবার ভয়। পানির মধ্যে ছেলেরে খাটে ঘুমাতে দিয়ে জেগে থাকি। আমাগের এই কষ্টডা একটু ভালো করে লেখেন।

রওশন আরা বলেন, সরকারী ঘর পেয়ে তো ভালই লাগছিলো, এখন মনে হচ্ছে পানির মধ্যে থাকবো কিভাবে এখন তো আগের জায়গায় ফিরে ও যেতে পারবো না। বাথরুমের জায়গা নেই, পরের বাগানে গেলে তারা ধমক মারে নারীরা যেখানে সেখানে বসতেও পারি না।

উপজেলার চাঁচুড়ী ইউপির চেয়ারম্যান মো.সিরাজুল ইসলাম হিরক বলেন, পানিবন্দি হওয়ায় আশ্রায়ণের বাসিন্দারা সাময়িক অসুবিধায় রয়েছেন। তাদের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে। কালিয়া উপজেলায় সদ্য যোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আগেই উচ্চ মহলকে জানানো হয়েছে। এটা বৃষ্টির পানি, পানি নামলেই আমরা রিং বাধ তৈরী করে সমস্যা সমাধান করে ফেলবো।